ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

রোজগার বন্ধ হকারদের, কেউ নিচ্ছে না খোঁজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২০
রোজগার বন্ধ হকারদের, কেউ নিচ্ছে না খোঁজ ক্রেতার জন্য অপেক্ষা হকারে। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের শ্রমজীবী মানুষ। তাদের মধ্যে অন্যতম হকার শ্রেণি। কারণ করোনার প্রভাবে রাজধানীর সব কিছু বন্ধ থাকায় রাস্তায় মানুষ নেই, খুলতে দেওয়া হচ্ছে না ফুটপাতের দোকানগুলো। এতে করে তাদের রোজগার একেবারেই বন্ধ। সরকারি-বেসকারি কোনো সহায়তাও তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। ফলে পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দুর্বিষহ সময় কাটাতে হচ্ছে তাদের।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে ব্যবসা করে জীবন নির্বাহ করা হকারের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

হকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীতে দুই লক্ষাধিক হকার আছেন।

আর তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে প্রায় পাঁচ লাখ পরিবার সরাসরি জড়িত।

এরইমধ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা সবইকিছুই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কিছু হকার গ্রামে ফিরে গেলেও অনেকে ঢাকাতেই রয়ে গেছেন। তবে শহরে বা গ্রামে যেখানেই থাকুক না কেন তাদের একটাই দুশ্চিন্তা, কাজ না থাকলে খাবেন কী, সংসার চলবে কীভাবে?

রাজধানীর পল্টনে ফুটপাতে পুরাতন বইয়ের ব্যবসা করেন আব্দুর রহিম। পুরান ঢাকার নিমতলীর সাতমসজিদ এলাকায় অসুস্থ মা, তিন মেয়ে ও স্ত্রীসহ তিনি ৭ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে আমাদের অবস্থা ভালো না। সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। আগে থেকেই ফুটপাত বন্ধ এবং উচ্ছেদ আতঙ্কে ছিলাম, এখন ব্যবসা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। পেটতো আর লকডাউন মানে না। প্রতিমাসে আমার সবমিলে প্রায় ১৫ হাজার টাকা সংসার খরচ হয়। এভাবে কতদিন চালাতে পারবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

বাইতুল মোকাররম মসজিদ সংলগ্ন ব্রিজের কাছে ফুটপাতে বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস  সামগ্রীর ব্যবসা করেন মিজান রহমান। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। ফুটপাতে দোকানদারী করে সংসার চালাই। আমরা দিন আনি, দিন খাই। দোকান বন্ধ থাকায় দিন দিন অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমরা কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছি না। ধার কর্জ করে চলছি। ঋণের জালে জড়াচ্ছি।

গুলিস্তানের রাজধানী রেস্তোরাঁর সামনে ফুটপাতে লেডিস স্যান্ডেল বিক্রি করেন জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে হকারদের। আমরা সরকারি-বেসরকারি, ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা মেয়র কারও পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা এখনো পাইনি।

বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল হকারদের বর্তমান সঙ্কটের বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা শহরে দুই লক্ষাধিক হকার রয়েছে। রাস্তায় বসলে তাদের সংসার চলে। রাস্তা বন্ধ মানে তাদের রোজগারও বন্ধা। করোনা ভাইরাসের মহাদুর্যোগে হকাররা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র ইতোমধ্যে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন সেক্টরের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং দাতাগোষ্ঠীর কাছে বলতে চাই, হকারদের পাশে দাঁড়ান, তাদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করুন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২০
আরকেআর/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।