ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

ব্রোকলির বাণিজ্যিক চাষে লাভবান বরিশালের কৃষকরা

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০
ব্রোকলির বাণিজ্যিক চাষে লাভবান বরিশালের কৃষকরা ব্রোকলি।

বরিশাল: ব্রোকলি চাষে আগ্রহ বাড়ছে বরিশালের কৃষকদের মধ্যে। এরইমধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন কৃষক গত বছরে শখের বশে ব্রোকলিচাষ করেছিলেন। পরে তারা চলতি বছরে বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলিচাষ শুরু করেছেন।

আর বাণিজ্যিকভাবে চাষে ব্যাপক সফলতা পাওয়া আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ব্রোকলিচাষ ও উৎপাদন এ অঞ্চলে কয়েকগুণ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

বরিশালের সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের বামনাকাঠি গ্রামে বেশ কয়েকজন কৃষক চলতি মৌসুমে ব্রোকলি ও ক্যাপসিকামসহ বিদেশি কিছু ফসলের আবাদ করেছেন।

এর মধ্যে ব্রোকলির উৎপাদনটা বেশ ভালো হওয়ায় স্থানীয় ক্রেতাদের মধ্যে বেশ সাড়াও পড়েছে।

নগরের সিঅ্যান্ডবি এক নম্বর পুল এলাকার শেখ মুনজে এলাহী দুলাল বলেন, গত বছর ছাত্রমৈত্রীর সাবেক নেতা খালিদ খানের কাছ থেকে জানতে পারি ব্রোকলি সম্পর্কে। তিনি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নে ব্রোকলিচাষ করছেন। তার অনুপ্রেরণায় বরিশাল নগর ঘেঁষা জাগুয়া ইউনিয়নের বামনাকাঠি গ্রামে নিজ জমির একাংশে গত বছর শখের বশে ১২০ পিস ব্রোকলি বপন করেন। ব্রোকলির ক্ষেতে কাজ করছেন একজন চাষি।  ছবি: বাংলানিউজযেখানে উৎপাদন কল্পনাতীত হওয়ায় এবার নিজের জমির পাশাপাশি পাশের বর্গা জমি নেন। পরে তিনি ১২শ পিস ব্রোকলির বপন করেন। আর বাজারে এর চাহিদা থাকায় এরইমধ্যে আর্থিকভাবে ব্রোকলিচাষ করে লাভবানও হয়েছেন বলেও জানান শেখ মুনজে এলাহী দুলাল।

ইচ্ছে রয়েছে আগামীতে পাঁচ হাজার ব্রোকলির বীজ বপনের জানিয়ে দুলাল আরও বলেন, ব্রোকলি দেখতে ফুলকপির মতো, তবে রঙটা পুরোই আলাদা। ব্রোকলির রঙ সবুজ হওয়ায় এর নাম স্থানীয়ভাবে অনেকেই ‘সবুজ ফুলকপি’ হিসেবেও ডেকে থাকেন। স্বল্প বিনিয়োগে অধিক লাভ করা যায় এই চাষে।  

তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী ব্রোকলির বীজ জাপান থেকে বাংলাদেশে আনা হয়। এক হাজার বীজের একটি প্যাকেট ১২শ টাকা। বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এই বীজ বপন করতে হয়। আর বীজ বপন করার ২০ দিন পরে যে চারাগাছ হয়। সেটি অন্য স্থানে নিয়ে রোপণ করা হয়।  পরে গাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রোকলি উৎপাদন শুরু হয়।  

একটি গাছ থেকে তিনবার ব্রোকলি উৎপাদন করাতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে আকার-আকৃতি অনুযায়ী পিস প্রতি ব্রোকলি ৬০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি করা হয়েছে।  ব্রোকলি। গোটা হিসাবে তার এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো, যেখানে অল্পদিনের মধ্যেই ২৫ হাজার টাকার বেশি ব্রোকলি বিক্রি করেছি। ক্ষেতে এখনো ব্রোকলির গাছ রয়েছে এবং উৎপাদন হচ্ছে তাতে লাভের ব্যবধানটা অনেক বড় হবে।

বাজারে ব্রোকলির চাহিদা বেড়েছে জানিয়ে স্থানীয় চাষি মনির খলিফা বলেন, চিকিৎসকরা বন্ধের দিন সকালে গাড়ি নিয়ে ক্ষেতে আসেন। পরে ক্ষেত থেকে এ সবজি সংগ্রহ করে নিয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, ব্রোকলি একটি লাভজনক ফসল। যা দুলাল ভাইয়ের ক্ষেত দেখে বুঝতে পেরেছেন স্থানীয় অনেক চাষি। তাই ব্রোকলি চাষের আগ্রহ দেখাচ্ছেন তারা।

মনির বলেন, এই সবজির সবকিছুই খাওয়া যায়। পাতা পর্যন্ত রান্না করে কিংবা ভর্তা করেও খাওয়া যায়। স্থানীয়রা বিভিন্ন মাছ দিয়ে ব্রোকলি রান্না করে খেয়ে থাকেন।

এদিকে পতিত জমিতে লাগিয়ে পরিচর্যা করে ব্রোকলি উৎপাদন করতে এরইমধ্যে সক্ষম হয়েছেন বরিশাল নগরের চাষি লিটু সরদার।

বিদেশের মাটিতে যেসব ফসল উৎপাদন হচ্ছে তা দেশের মাটিতেও উৎপাদন সম্ভব বলেও যোগ করেন চাষি লিটু।

আর নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মেট্রোপলিটনের কৃষি কর্মকর্তা মোসা. ফাহিমা হক।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হরিদাস শিকারী বলেন, ব্রোকলি-ক্যাপসিকাম এই অঞ্চলের মানুষের কাছে কিছুটা অপরিচিত সবজি। তবে কৃষকদের জন্য এগুলো বেশ লাভজনক।  

ফলন এবং চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য কৃষকরা ব্রোকলি চাষে উৎসাহিত হবেন। ফলে আগামীতে ব্রোকলির চাষ আরও বাড়বে বলেও আশাবাদী তিনি। ব্রোকলির ক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজস্বাস্থ্য গবেষকরা জানান, ব্রোকলিকে শক্তিশালী ক্যানসারবিরোধী খাদ্য। এতে থাকে খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।  ব্রোকলিতে থাকা গ্লুকোরাফানিন ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের টিস্যু মেরামত করে এবং ত্বক উন্নত করে। ব্রোকলিতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড, লিউটেনের সঙ্গে ক্যারটিনয়েড, বিটা-ক্যারোটিন এবং জিক্সানথিন-সব শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা অনেক রোগ প্রতিরোধ করে। ব্রোকলি চিনির প্রভার রোধ করে এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে আনে। পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ ব্রোকলি সুস্থ স্নায়ুতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ক্যালসিয়ামের আধিক্য থাকায় হাড়ের জন্য এটি বেশ উপকারী।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।