ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘মূল্য’ পেতে সুরমা পার হয়ে সবজি নিয়ে শহরে আসছেন কৃষক

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
‘মূল্য’ পেতে সুরমা পার হয়ে সবজি নিয়ে শহরে আসছেন কৃষক

সিলেট: সকালের শুভ্রতাকে বিদায় জানিয়ে উদিত লাল সূর্য। ঘাসের পাতায় শিশির বিন্দুতে আলোর ঝিলিকে ফুটে ওঠে সাত রং। তবে সেদিকে ফিরে দেখার ফুরসত নেই কৃষকের। হিমেল হাওয়ার পরশ অনুভব করারও নেই সময়। লক্ষ্য কেবল একটাই, ক্ষেতের সবজি নিয়ে পৌঁছাতে হবে হাটে।

প্রকৃতিতে ভর শীত। এই শীতেও কৃষকের সময় কাটে সবজি ক্ষেতে।

সেখান থেকে কাঁধে বহন করে নদী পার হয়ে সবজি নিয়ে আসেন শহরের বাজারে। যে কারণে কৃষকের শ্রম-ঘামে ফলানো সবজিতে এখন ভরপুর সিলেটের বাজার।

কেবল শহরের বাজারই নয়, গ্রামে-গঞ্জে সবখানেই এখন শীতের তরতাজা সবজির দেখা মিলছে বাজারে। এসব সবজি দামেও অনেক সস্তা।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে সবজি নিয়ে সুরমা নদী পার হয়ে শহরে আসতে দেখা যায় কৃষকদের। কৃষকের পরম যত্মে ফলানো আলু, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ধনিয়া পাতা, লাল শাক, পুঁই শাক, লাই শাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, বরবটি, শসা, শালগম, ডাটা শাকসহ হরেক শাকসবজিতে ভরপুর এখন সিলেটের বাজার।

সিলেটের বিশ্বনাথের কামালবাজার এলাকার কবির আহমদ প্রায় দেড় যুগ পর দুবাই থেকে ফিরেছেন। সেখানে যা আয় করতেন, তাতে নিজেই চলতে পারতেন না। দেশে ফিরে বেকারত্ব লাঘবে সবজি চাষ শুরু করেন। চাষের সবজি বহন করে নিজেই বাজারে এনে বিক্রি করেন। এখন নিজেও ভালো আছেন, সংসারও সুন্দর চলছে।

তিনি বলেন, বিদেশে গিয়ে পরের কাজ করতে হয়। আর দেশে চাষাবাদ করতেও আমরা লোকলাজে থাকি। এমনটি না করে নিজেই কৃষিক্ষেতে সময় দিলে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। এবার প্রায় তিন একর জায়গায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে শীতকালীন সবজির চাষ করেন তিনি।

সাত সকালে সবজি নিয়ে সুরমা নদী পার হয়ে শহরে আসছেন কৃষকসিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের নিজ ঘিলাছড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আছির আলী বলেন, আমার একমাত্র পেশা সবজি চাষ। বাগানের আউশ লাউ, বেগুন, টমেটো, সিম বিক্রি করে প্রতিদিন অন্তত ৩/৪ হাজার টাকা আয় করেন। চাষাবাদ করেই এক ছেলেকে বিদেশেও পাঠিয়েছেন।

তিনি বলেন, কোনো কৃষক নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে ২০-৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে পতিত জমিতে খণ্ডকালীন সবজি চাষাবাদ করলে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। অন্তত জমি বিক্রি করে ৩/৪ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

সরেজমিন দেখা গেছে, সকালে সিলেটের সুরমা নদী পার হয়ে সবজি নিয়ে শহরে আসছেন কৃষকরা। তাদের অনেকে জানান, এসব সবজি ট্রেড সেন্টার, বন্দর, রিকাবিবাজার, তালতলাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করবেন। শহরে সবজি নিয়ে আসার কারণে দামও ভালো পাচ্ছেন।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নগরের বাজারগুলোতে নতুন আলু প্রতিকেজি বাজারভেদে ২২-৩০ টাকা, টমেটো প্রতিকেজি ৩০-৪০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩০ টাকা, ফুলকপি প্রতিপিস ৪০ টাকা, ধনিয়া পাতা কেজি ৪০ টাকা, লাল শাক ৩ টাকা আঁটি, পুঁই শাক কেজি ২০ টাকা, লাই শাক আঁটি ১০ টাকা, শসা ৪০ টাকা কেজি, বেগুন ৪০ টাকা কেজি, শালগম ২০ টাকা কেজি, লাউ জোড়া ৩০-৪০ টাকা, লেবু প্রতি হালি ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অনেক দোকানদার জানান, শীতকালীন সবজিতে এখন বাজার সয়লাব। তাই ক্রমান্বয়ে সব সবজির দাম কমছে। সামনের দিনে আরো কমবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
এনইউ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।