ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

অব্যবস্থাপনায় হাঁস প্রজনন খামারে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২০
অব্যবস্থাপনায় হাঁস প্রজনন খামারে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন

ফেনী: ফেনীর উপকূলীয় জনপদ সোনাগাজী। কৃষি ও পশু পালনসহ নানা দিক বিবেচনায় এ উপজেলাটি গুরুত্ববহন করে। এ সম্ভাবনার সূত্র ধরে এখানে গড়ে উঠেছে আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার।

আয়তন ও পরিধির দিক দিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খামার এটি। এখান থেকে বাচ্চা কিনে ফেনী জেলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলাসহ আশপাশের উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করছেন।

কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু তদারকি না থাকায় এটি এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু তদারকি করলে খামারটি দারিদ্র্য বিমোচনে আরও বেশি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, অপ্রতুল শেড, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে সম্ভাবনাময় খামারটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এতে ব্যাহত হচ্ছে হাঁসের বাচ্চা ও ডিম উৎপাদন।

হাঁস প্রজনন খামার।  ছবি: বাংলানিউজসোনাগাজীর আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের ব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. জাহিদ বিন রশিদ আল নাহিয়ান বাংলানিউজকে জানান, সোনাগাজী বাজারের পশ্চিম পাশে ১১ একর ভূমির ওপর ২০০০ সালে হাঁস প্রজনন খামার প্রকল্প শুরু হয়। হাঁস পালনের জন্য নির্মাণ করা হয় ৯টি শেড, একটি দোতলা অফিস ভবন, একটি হ্যাচারি, একটি গোডাউন, একটি অফিসার্স কোয়ার্টার ও একটি ডরমেটরি। তবে ১৯৬৭ সালে এ স্থানটি মেষ পালন খামার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ অঞ্চলে মেষের উপযোগিতা না থাকায় কালক্রমে তা বন্ধ হয়ে যায়।

খামারটিতে একজন খামার ব্যবস্থাপক পদ থাকলেও তা দীর্ঘদিন শূন্য। ওই পদে হাঁস, মুরগি উন্নয়ন কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে আছেন। একজন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা কাম ক্যাশিয়ার পদ থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ প্রেষণে নরসিংদীতে কর্মরত আছেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও পরিচর্যা কর্মীর পদ অনেক দিন ধরে খালি এবং চারজন ডাক অ্যাটেনডেন্টের মধ্যে দু’জন কর্মরত আছেন। বর্তমানে একজন পোল্ট্রি টেকনিশিয়ান ও একজন ইলেকট্রিশিয়ান আছেন। জনবল সংকটে খামারে ডিম স্থানান্তর, সংরক্ষণ, বাচ্চা পরিচর্যা, সরবরাহসহ আনুষাঙ্গিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

খামারটির পোল্ট্রি টেকনিশিয়ান শফিকুর রহমান জানান, খামারে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বছরে সোয়া দুই লাখ হলেও এবার উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার। তেমনই হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ হলেও, অর্জন হয়েছে ১ লাখ ৯৩।

হাঁস প্রজনন খামার।  ছবি: বাংলানিউজএ খামারে একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চার বিক্রি হয় ২০ টাকায়। একই হাঁসের বাচ্চা বাজারে বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকায়। খামারে উৎপাদিত হাঁস অন্য হাঁসের তুলনায় আলাদা। দৈহিক গঠন অন্য হাঁসের চেয়ে বেশ বড় হয়। বছরের ১০ মাস ডিম দেয়। ইতালি থেকে আনা ভিক্টোরিয়া ইনকিউবিটরের মাধ্যমে এখানে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়। খামারে উৎপাদিত হাঁসের জাতের মধ্যে রয়েছে চায়না পিকিং, বেইজিং, খাকি ক্যাম্বল, ভারতীয় রানার, জিংডিং ও দেশি কালো হাঁস।

সোনাগাজীর আমিরাবাদ এলাকার খামারি ফরিদ হোসেন জানান, হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করে এক-দুই মাস লালন-পালন করে প্রতি জোড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি করি। তাতে তার ভালো লাভ হয়।

কবির আহম্মদ নামের চর মসলিসপুরের আরেক খামারি বলেন, আগের মতো চাহিদার আলোকে বাচ্চা এবং ডিম পান না খামারিরা। খামারটির উন্নয়ন হলে প্রান্তিক খামামিরা উপকৃত হবেন।

জাহিদ বিন রশিদ আল নাহিয়ান বলেন, দীর্ঘদিন থেকে জনবল সংকটে খামারের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জনবল নিয়োগ দেওয়া না হলে খামারের উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে।

সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, চাহিদার তুলনায় এখানে উৎপাদনে অনেক গ্যাপ রয়েছে। এটা দূর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। এটা আধুনিকায়ন, জনবল সৃষ্টি, সরবরাহ বাড়ানোসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে ইতোমধ্যে কথা চলছে।

ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারে যারা কাজ করছেন, তারা ভালো কাজ করছেন। হাঁসের প্রজননও হচ্ছে। এখানে যদি আমরা লোকবল বাড়াতে পারি, তাহলে আরও বেশি উৎপাদন সম্ভব। বিষয়টি আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানাবো।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২০
এসএইচডি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।