ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বছরের প্রথম দিনেও চলছে জুটমিলের শ্রমিকদের অনশন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২০
বছরের প্রথম দিনেও চলছে জুটমিলের শ্রমিকদের অনশন চলছে জুটমিলের শ্রমিকদের অনশন। ছবি: বাংলানিউজ

নরসিংদী: নতুন বছরের প্রথম প্রহরে হাসি আনন্দে মাতোয়ারা সবাই। নতুন স্বপ্ন আর নতুন ভাবনায় উচ্ছ্বসিত মানুষ। কিন্তু হাসি নেই নরসিংদী ইউএমসি জুটমিলের শ্রমিকদের। বুকভরা কষ্ট, চাপা কান্না, আর্তনাদ, হতাশা আর হাহাকার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অনাহারে দিনানিপাত করছেন পাটকল শ্রমিকরা।

কিন্তু তাদের খোঁজ রাখার সময় নেই যেন কারো। শ্রমিকদের কান্না আর বাঁচার আকুতি মিল গেটে এলাকার বাতাস যেন ক্রমেই ভারি হয়ে উঠছে।

দু-মুঠো অন্ন যোগাড় করতে কাজে যোগ দিতে চায় শ্রমিকরা। তবে, দাবি একটাই, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, বকেয়া মজুরি দেওয়াসহ ১১ দফা বাস্তবায়ন করা হোক। চলছে জুটমিলের শ্রমিকদের অনশন।  ছবি: বাংলানিউজবাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন শ্রমিকরা। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসে শ্রমিক নেতারা ১৪ ডিসেম্বর স্থগিত করে পাটকল শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়।

দাবি পূরণে শ্রমিকরা গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় পুনরায় তারা আন্দোলনে নামে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাতভর অনশন স্থলে অবস্থান করেন শ্রমিকরা। অনশনে অংশ নিয়ে দু’দিনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনজন শ্রমিক।

টানা চারদিনের মতো আন্দোলন চললেও মেলেনি কোনো আশ্বাস। তাই হতাশ এখানকার শ্রমিকরা।

শ্রমিক সুরুজ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এই মিলে কাজ করে খাই। আজ কতদিন হলো না খেয়ে, অনাহারে অনশনে আছি। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। কলেজে ভর্তি করিয়েছি। টাকার জন্য পরীক্ষা দেওয়াতে পারি নাই। এর চেয়ে কষ্ট, আর কী হতে পারে? দয়া করে, এই দেশের সরকারকে একটু বলেন, আমাদের দিকে তাকাতে। খুশির দিন আর আমাদের মধ্যে নাই। ঘরে চাল নেই। সন্তানদের শীতের কাপড় নেই। পরনের জুতা নাই।

অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে সুরুজ মিয়া আরও বলেন, সন্তানরা আমাকে বলে, দেখ বাবা, আমার সঙ্গের বন্ধুরা কত আনন্দ উল্লাস করে। তুমি আমাদের কাপড়ই দিতে পারো না। আমারে কিছু দাও। কিন্তু কোন উত্তর দিতে পারি না। দয়া করে এই খবরটা প্রধানমন্ত্রীকে জানান। তিনি যেন আমাদের প্রতি সুদৃষ্টি দেয়- বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার চোখের জল আর আর্তনাদের কথাশুনে আমরন অনশন মঞ্চের সবাই কেঁদে ফেলেন।

অপর শ্রমিক নাসির বাংলানিউজকে বলেন, মেয়েটা স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। পকেটে টাকা নাই। তাই মেয়ের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না।

এসময় সিবিএ, নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের নেতাদেরসহ মিলের শত শত শ্রমিক অংশ নেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমৃত্যু ঘরে ফিরবেন না বলেও ঘোষণা দেন শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।