ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

পদ্মার চরাঞ্চলে ফসল ফলানোয় ব্যস্ত কৃষক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
পদ্মার চরাঞ্চলে ফসল ফলানোয় ব্যস্ত কৃষক চরাঞ্চলে ধানের বীজতলা। ছবি: বাংলানিউজ

মাদারীপুর: পদ্মা নদী বেষ্টিত প্রাচীন জনপদ মাদারীপুর জেলার শিবচরের চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী ও মাদবরেরচর ইউনিয়ন। বর্ষা মৌসুমে পুরো চরাঞ্চল পানিতে ডুবে থাকে। পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা হয় ওই জনপদের মানুষ। শুকনো মৌসুমে সেই চরাঞ্চলের বুকে নামে সবুজের সমারোহ। বর্ষা মৌসুমের রুদ্ররূপ ভুলে যায় চরের বাসিন্দারা। ব্যস্ত হয়ে পড়ে চরের বুকে ফসল ফলানোয়। 

বর্তমানে মাঠে মাঠে নানা ধরনের শীতকালীন ফসলের চাষ হচ্ছে। ক্ষেতে সার দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, পানি দেওয়া, ফসলের যত্ন নেওয়াসহ নানা কাজে ব্যস্ত এখন চরের কৃষকেরা।

 

সরেজমিনে পদ্মার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।

চরে বসবাসরতদের কাছ থেকে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম এলেই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয় পুরো চর এলাকা। পদ্মা নদীর ভাঙনও বেড়ে যায় তখন। গত বর্র্ষায় পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকটি গ্রাম। বর্ষায় ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয় চরের মানুষদের। বর্ষা শেষে চরের জমিতে শুরু হয় চাষাবাদ। বিশেষ করে শীতকালীন ফসল ফলানো নিয়েই ব্যস্ততায় সময় কাটে এই এলাকার মানুষের। বর্ষায় পলি পড়ায় ফসল বেশ ভালো হয় এখানে।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো জমিতে সরিষার আবাদ, কোথাও মশুরি, কলাই, ধনিয়া, মুগ, কালোজিরা, রসুন, খিরা, লালশাক, পেঁয়াজের চাষ করা হচ্ছে। এছাড়ও নদীর পাড় ঘেঁষা জমিতে করা হচ্ছে বোরো ধানের চাষ। তৈরি করা হয়েছে ধানের বীজতলা।
ক্ষেত থেকে কলাই শাক তুলছেন এক নারী-পুরুষ।  ছবি: বাংলানিউজস্থানীয় কৃষক আব্দুস শুক্কুর মিয়া বলেন, চরের অনেক জমিতেই এখন খেসারি, কলাই, মাসকলাই চাষ করা হয়েছে। কলাই শাক প্রতিদিন তুলে বাজারে বিক্রি করা হয়। পদ্মার কাঁঠালবাড়ী ঘাটে শীতকালীন সময়ে কলাই শাক ভালো বিক্রি হয়। প্রতি কেজি শাক ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। এ কারণে চরের অনেক পরিবারই কলাই চাষ করে। প্রতিদিন সকালে ক্ষেত থেকে শাক তুলে ঘাট এলাকায় গিয়ে বিক্রি করে এই চরাঞ্চলের অনেকেই।

তিনি আরও বলেন, ‘বর্ষার সময় বন্যার পানিতে এখানকার বেশির ভাগ জায়গাই তলিয়ে যায়। ফলে জমিতে পলিমাটি পড়ে প্রতি বছরই। এ কারণে ফসল ভালো হয়। পরিচর্যা করলে নানা ধরনের ফসল ফলানো সম্ভব। তাছাড়া চরের বেশির ভাগ মানুষই কৃষিকাজ করে থাকে। বেশির ভাগ বাড়িতেই ঘরোয়াভাবে লাউ, মুলা, মিষ্টি কুমড়া, পালংশাক, শিম চাষ করে থাকে।

স্থানীয় যুবক পারভেজ বলেন, ‘চরে শীতকালেই বেশি ব্যস্ত থাকে কৃষক। বেশির ভাগ মানুষের কাজই থাকে ফসলের মাঠে। এ মৌসুম থেকে শুরু হয় চাষবাদ। বর্ষা পর্যন্ত চলে। এখানকার জমিতে এখন চাষ করা হচ্ছে ধনিয়া, রসুন, পেঁয়াজ, কালোজিরাসহ বিভিন্ন ফসল। আগামী চার/পাঁচ মাসের মধ্যে এসব ফসল উঠানোর পর চাষ করা হবে পাট ও ইরি ধান। নদীর পাড়ের জমিতে এখন রোপণ করা হচ্ছে বোরো ধান। শীতের এই সময়টায় ছোট থেকে বড় সবাই ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করে থাকে।

শিবচর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার এই চরাঞ্চলে নানা জাতের ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রায় দেড়শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়ে থাকে। শীতকালীন ফসলের জন্য সরকারিভাবে বীজ দেওয়া হয় কৃষকদের। চরের মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় নানা জাতের ফসল ও শাক-সবজি চাষের মাধ্যমে।
মশুরের ক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজকাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের পদ্মার চর এলাকার কাশেম বেপারীরকান্দি গ্রামের সোবাহান মাতুব্বর নামে এক কৃষক কাজ করছিলেন নিজ ক্ষেতে।  

তিনি জানান, এ বছর ২ বিঘা জমিতে ধনিয়ার চাষ করেছেন তিনি। কেবল পাতা গজাচ্ছে ক্ষেতে। আগামী চার মাসের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হবে। ধনিয়া ঘরে তুলতে চার মাসে দুই বিঘা জমিতে তার খরচ হবে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। ফলন ভালো ও বাজারে দাম ভালো হলে বেশ লাভ হবে বলে আশাবাদী তিনি।

তিনি আরও জানান, ধনিয়ার পরে একই জমিতে পাটের চাষ করবেন। এছাড়া ইরি ধানের চাষও করবেন তিনি। আর নদীপাড়ের জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন।

বর্ষা এলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চরের মানুষ। নদী ভাঙনের শিকার হয় শত শত ঘরবাড়ি। স্রোতের চাপেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য ঘরবাড়ি। শুকনো মৌসুমে বর্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ফসল ফলানোর ব্যস্ততায় থাকে এই এলাকার মানুষ। বিশেষ করে মাছ ধরা, পশু পালন ও কৃষিকাজের উপরই নির্ভর এই চরাঞ্চলের বেশির ভাগ পরিবার। তার মধ্যে জীবিকা অর্জনের জন্য প্রধান হলো কৃষিকাজ। শুকনো মৌসুমে তাই ভালো ফসল ফলানোর সুযোগ নষ্ট করতে চান না চরের মানুষেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।