ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

মহিষের মাংস আমদানি বাড়ছে, হুমকিতে খামারি-কৃষক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৯
মহিষের মাংস আমদানি বাড়ছে, হুমকিতে খামারি-কৃষক মহিষ, বাংলানিউজ ফাইল ফটো

ঢাকা: চীন, ভারত, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে মহিষের হিমায়িত মাংস এবং যকৃৎ ও ফুসফুসের আমদানি বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ কেজি মহিষের মাংস প্রবেশ করছে। যেগুলোর নির্ভেজাল নিশ্চিতে কোনো ধরনের উন্নত পরীক্ষাও করা হচ্ছে না। আবার গরুর মাংস হিসেবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে এসব। ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি ভোক্তারাও প্রতারিত হচ্ছেন। একইসঙ্গে দেশের পশুসম্পদ খাত বিশেষ করে খামারিদের উদ্বেগ বাড়ছে। এমনকি হুমকিতে কৃষকও।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিলে হিমায়িত মহিষের মাংস ও ওফালস (যকৃৎ, ফুসফুসসহ অন্যান্য) আমদানি হয়েছে তিন লাখ ৩৬ হাজার কেজি। মে মাসে ছিল তিন লাখ ৭৪ হাজার কেজি, জুনে ছয় লাখ তিন হাজার কেজি, জুলাইয়ে পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার কেজি ও আগস্টে তিন লাখ ৯১ হাজার কেজি।

আর গত পাঁচ মাসেই মহিষের মাংস আমদানি হয়েছে প্রায় ২২ লাখ ৫২ হাজার কেজি। এসব মাংসের প্রধান উত্স ভারত। মাংসগুলো ডাম্পিং দামে দেশে প্রবেশ করছে। এছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসব গরুর মাংস হিসেবে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান বাংলানিউজকে বলেন, পশু পালনের সঙ্গে দেশের দুই কোটির বেশি পরিবার সরাসরি যুক্ত রয়েছে। এছাড়া পরোক্ষভাবে রয়েছে আরও কোটিখানেক পরিবার। মাংস আমদানি নির্ভর হলে তরুণরা বেকার হয়ে পড়বেন। পাশাপাশি দুগ্ধ শিল্পও আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে। দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় পড়তে বাধ্য হবে।

তিনি বলেন, গবাদি পশুর অন্যতম খাদ্য খড়। কৃষক ধানের দাম না পেলে খড় বিক্রি করেও পুষিয়ে নিতে পারে। কিন্তু যদি মাংস বিদেশ থেকে আসে তাহলে খামার বন্ধ হয়ে যাবে। তখন কৃষক খড়ও বিক্রি করতে পারবে না। সুতরাং এদিক থেকেও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে যারা এই মাংস আনেন, তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আনেন। এ ধরনের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। তারা আবার মিথ্যা কথা বলে গরুর মাংস বলে বিক্রি করছেন। এসব যাতে বন্ধ হয়, এ জন্য আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাহিদার চেয়ে বেশি গরু উত্পাদন হচ্ছে দেশে। বিদেশ থেকে মাংস আনা হলে গ্রামের সাধারণ কৃষকসহ প্রান্তিক খামারিরা তাদের উত্পাদিত গরুর উপযুক্ত দাম থেকে বঞ্চিত হবেন। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ধস নামার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর হবে। এছাড়া দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিখাত চামড়া শিল্পে কাঁচামালের সংকটও দেখা দেবে।

পাশাপাশি সংকটে পড়বে দেশের দুগ্ধ উত্পাদন শিল্পও। চামড়াসহ এ খাতে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ৭০ লাখ তরুণ। তারা এখন যেভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগে পাচ্ছেন, তাও বাধাগ্রস্ত হবে।

এ বিষয়ে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মহাব্যবস্থাপক ও প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. শরীফ আহমেদ চৌধুরী  বাংলানিউজকে বলেন, দেশে মাংস আমদানি করা হলে কর্মহীন হবেন খামারিরা। এছাড়া হিমায়িত মাংস আমদানিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশে উন্নত মানের পরীক্ষাগার নেই। ফলে ভোক্তারা বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। আবার আমদানির কারণে খামার বন্ধ হলে জৈব সারের সংকট দেখা দেবে। মাংসের চাহিদার শতভাগ পূরণ করছি দেশীয় উত্পাদনের মাধ্যমে। আমদানি বন্ধ করতে না পারলে দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ ক্ষতির শিকার হবেন। তাই এখনই শিল্প রক্ষায় মাংস আমদানি বন্ধ করতে হবে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের মাংস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে, আমদানির এসব মাংস ফ্রিজিং বা হিমায়িত করা। পরে এই মাংস কসাইরা বরফ কাটিয়ে বাজারে বিক্রি উপযোগী করেন। আর এসব মাংসের বেশিরভাগই যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন খাবার হোটেলে। এরপর হোটেলগুলোতে আবার ফ্রিজিং করা হচ্ছে। দুইবার ফিজিংয়ের কারণে এ মাংস সম্পূর্ণ অনিরাপদ হয়ে উঠছে। এছাড়া আমদানি করা মাংস পরীক্ষা করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থাও বাংলাদেশে নেই। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। পাশাপাশি প্রতারণার সম্মুখীনও হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

এ প্রসঙ্গে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসী উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কোনো প্রকার হিমায়িত মাংস কিংবা প্রক্রিয়াজাত মাংস আমদানির অনুমোদন না দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি। এছাড়া আমাদের দেশে আমদানি করা মাংসে রোগব্যাধি আছে কি-না, সেগুলো পরীক্ষা করার মতো তেমন যন্ত্র বা পরীক্ষাগার নেই। তাই আমদানি বন্ধ করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৯
এমআইএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।