ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাতিল নোট ধ্বংসে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
বাতিল নোট ধ্বংসে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি কুচি কুচি করা টাকা

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ছাড়া সারাদেশের অফিসগুলোর মাধ্যমে সংগ্রহ করা বাতিল ও অপ্রচলনযোগ্য নোট পরিবেশবান্ধব উপায়ে ধ্বংস করার কথা থাকলেও বগুড়া পৌরসভা তা করেনি। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ক্যাসিনোতে অভিযান ও যুবলীগ নেতার বাসা থেকে নগদ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় বিষয়টি নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খাউড়া বিলের পাড়ে বস্তা বস্তা ছেঁড়া টাকা দেখে ভিড় করেন উৎসুক জনতা। খবর পেয়ে স্থানীয় থানা পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনবস্তা ছেঁড়া টাকা আলামত হিসেবে জব্দ করে।

পরে বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া অফিসের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, এসব বাতিল নোট পৌরসভার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে।

চলতি বছরের ৩০ মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, এখন থেকে সারাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সংগ্রহ করা বাতিল নোট সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ধ্বংস করা হবে। আগে বাংলাদেশ ব্যাংক পুড়িয়ে ধ্বংস করতো।

বিশ্বের অন্যদেশের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকও পরিচ্ছন্ন নোট প্রচলন নীতি অনুসরণ করায় আগের তুলনায় বেশি পরিমাণে ছেঁড়া-ফাটা, ময়লা ও পুরাতন নোট বাজার থেকে তুলে নেয়।  নোট ধ্বংসের পরিমাণও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ায় অপ্রচলনযোগ্য ও বাতিল নোট চুল্লিতে পুড়িয়ে ধ্বংসকরণ কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে কমিয়ে পরিবেশবান্ধব উন্নতমানের শ্রেডিং মেশিনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরায় পরিণত করে আবর্জনা হিসেবে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন এসব নোট নিজস্ব ডাস্টবিন ও ডাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে ধ্বংস করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সংগ্রহ করা বাতিল নোট স্থানীয় পৌরসভার মাধ্যমে ধ্বংস করার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিস। তবে নোট ধ্বংস করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে প্রক্রিয়া রয়েছে তা অনুসরণ করা হয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বাতিল নোট ধ্বংস করার জন্য একটি ডাস্টবিন স্থাপন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসের যুগ্ম পরিচালক মো. শাজাহান চলতি বছরের ২০ আগস্ট বগুড়া পৌরসভার মেয়রকে চিঠি দিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে খুলনা সিটি করপোরেশন যেভাবে বাতিল নোট ধ্বংস করে তা উল্লেখ করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই প্রক্রিয়ায় না গিয়ে বগুড়া পৌরসভা ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিস থেকে তিনটি ট্রাকে ২৪০ বস্তা বাতিল নোট এনে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খাট্টাপাড়া ইউনিয়নের চান্দাই গ্রামের খাউড়া বিলের পাড়ে ফেলে দেওয়া হয়।

এদিকে কিছুদিন ধরে রাজধানী ঢাকায় কয়েকজন যুবলীগ নেতা, বিভিন্ন ক্লাব, বারে বেশ কয়েকটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও স্বর্ণ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী।

অভিযানে কোটি কোটি নগদ টাকা উদ্ধার ও বগুড়ায় খালের পাড়ে বস্তা বস্তা ছেঁড়া টাকা পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা ধারণা করেন এসব টাকা ক্যাসিনো মালিকরা কেটে বস্তা ভরে ফেলে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হুলস্থুল পরিস্থিতি।

পরে বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া অফিসের মহাব্যবস্থাপক জগন্নাথ চন্দ্র ঘোষ বলেন, এই টাকা আমরা সংগ্রহ করে বগুড়া পৌরসভার মাধ্যমে ধ্বংস করেছি। তারা নোটগুলো ব্যাংক থেকে নিয়ে সেখানে ফেলে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, নোটগুলো এভাবে ফেলার কথা নয়। আমরা বগুড়া পৌরসভার মেয়রকে চিঠি দিয়েছিলাম। বাতিল নোট ধ্বংস করার জন্য একটি ডাস্টবিন স্থাপন করতে।

বগুড়া পৌরসভার পরিদর্শক মামুনুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিস আগস্ট মাসের ২২ তারিখে একটি চিঠি দিয়ে বাতিল নোট অপসারণের বিষয়টি জানায়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া ও খুলনা অফিসের বাতিল নোটগুলো বর্জ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এসব নোট ডাস্টবিনের মাধ্যমে অপসারণের অনুরোধও করা হয় চিঠিতে। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার নোটগুলো নিয়ে বিলের পাড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

ডাস্টবিনের মাধ্যমে বাতিল নোট ধ্বংস করার নিয়ম থাকার পরও এভাবে প্রকাশ্যে বিলের পাড়ে ফেলে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বগুড়া পৌরসভার সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে ডাস্টবিনের মাধ্যমে নোট ধ্বংস করতে। চুক্তির বাইরে তারা এভাবে কেন বিলের পাড়ে ফেলে দিয়েছে আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

দেশের মুদ্রা বিনিময় কার্যক্রম সচল রাখার উদ্দেশ্যে নোট ছাপানো, প্রচলন ও বিতরণ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি অপ্রচলনযোগ্য এবং বাতিল নোট ধ্বংস করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকনোটগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে পুরনো হয়ে ছিঁড়ে ও ফেটে যায়। এতোদিন ছেঁড়া-ফাটা নোট পুড়িয়ে ধ্বংস করা হলেও এখন থেকে সিটি করপোরেশনের উন্নত মেশিনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষূদ্র টুকরা আবর্জনায় পরিণত করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯
এসই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।