ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

নতুন ব্যাংকের আবেদন বাছাই হচ্ছে, অনুমোদন পাবে ৫টি

সাইদ আরমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১১
নতুন ব্যাংকের আবেদন বাছাই হচ্ছে, অনুমোদন পাবে ৫টি

ঢাকা: বেসরকারি খাতে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে আবেদন যাচাই-বাছাই শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া চ‍ূড়ান্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।



এছাড়া কোন ব্যাংকের বিনিয়োগকারী (স্পন্সর) কারা সে তথ্য চেয়েও সরকার চিঠি দিয়েছে। আর আবেদনকারীরা এরইমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদবির শুরু করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রমতে, সরকার ৫টি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে চায়।

গত ৩০ নভেম্বর নতুন ব্যাংকের জন্য আবেদন গ্রহণের সময় শেষ হয়। মোট ৩৭টি আবেদন জমা পড়ে।

জানা গেছে, আবেদনগুলো প্রাথমিক যাচাই-বাছাই হচ্ছে। আর এরইমধ্যে কারিগরি এবং আর্থিক কমিটি গঠন করতে সংশ্লিষ্ট শাখার ডেপুটি গভর্নরকে বলা হয়েছে। চার সদস্যের এই কমিটিতে থাকবেন মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, জমা পড়া আবেদন থেকে শেষ পর্যন্ত যে পাঁচটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হতে পারে, তারা সবাই সরকারদলীয় রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ী। অর্থাৎ রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে সরকার নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে।

অবশ্য নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হবে রাজনৈতিক কারণে তা আগেই স্পষ্ট করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘নতুন ব্যাংক দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক। ’

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, অনুমোদন দেওয়া হবে এমন তালিকায় আছে সাংসদ ফজলে নূর তাপসের প্রস্তাবিত ‘মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড’। যদিও প্রস্তাবিত এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয়েছে হুমায়ুন কবিরকে। আর ফজলে নূর তাপস পরিচালক হিসেবে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা ও সরকারি হিসাব সংক্রন্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাংসদ ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ‘দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড’। অনুমোদন পেতে পারে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর ‘সেলফ এমপ্লয়মেন্ট ব্যাংক লিমিটেড’। শাহিন মাহবুবা চৌধুরীকে এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।  

এছাড়া সম্ভাব্য অনুমোদনের তালিকায় আছে সরকার দলীয় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব আহমদের ‘কটক বাংলা ব্যাংক লিমিটেড’ এবং কর্মসংস্থান ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম মনিরুজ্জামান খন্দকারের ‘মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড’।

তবে এর বাইরে যারা আবেদন করেছেন, তারাও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির করছেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাংসদ ও সাবেক সচিব খন্দকার আসাদুজ্জামান পিপলস ব্যাংকের জন্য আবেদন করে এখন তদবির করছেন। আওয়ামী লীগের সাংসদ ও দলীয় কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লবি করছেন তার প্রস্তাবিত মেঘনা ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে। আর মির্জা আজম এমপি ‘দ্য পিপলস ব্যাংক’ এর জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করছেন।    

এদিকে প্রাপ্ত আবেদনগুলোর প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং নীতি এবং প্রবিধি বিভাগ। এরপর কারিগরি কমিটি করা হবে মূল্যায়ন করতে। কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন শেষে সেগুলো যাবে আর্থিক কমিটিতে। সেখান থেকে যোগ্যতা অনুসারে সবগুলোকে রেখে একটি তালিকা করে তা পাঠানো হবে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটিতে। সেই কমিটি তা বিশ্লেষণ করে বোর্ডে উপস্থাপন করবে। সূত্র জানায়, উচ্চ পর্যায়ের ওই কমিটিই সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছার বাস্তবায়ন করবে। তারা সরকারের পছন্দসই তালিকা করে তা বোর্ডে উপস্থাপন করবে। বোর্ড চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। তবে সরকারের ইচ্ছার বাইরে বোর্ড সিদ্ধান্ত দেবে না বলেই সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।  

এর আগে, ২৭ সেপ্টেম্বর নতুন ব্যাংক করতে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন আহ্বান করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিজ্ঞপ্তিতে অফেরতযোগ্য ১০ লাখ ফিসহ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়েছিলো।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা নতুন ব্যাংকের অনুমোদনের বিষয়ে জোর আপত্তি তোলে। বাংলাদেশ ব্যাংক এর বিপক্ষে মত দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।