ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর হাজারের অধিক পরিচালকদের নামে ২ শতাংশ শেয়ার নেই বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে গত ২২ নভেম্বর কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(এসইসি)।
এসইসি পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের বিষয়ে এ প্রজ্ঞাপন জারি করলেও তাতে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। পরবর্তীতে এসইসি এবং ডিএসই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যেক্তা পরিচালকদের হাতে থাকা শেয়ারের পরিমাণ জানতে চেয়ে চিঠি পাঠায় কোম্পানিগুলোতে । এক্ষেত্রে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সোমবার বেঁধে দেওয়া সময়ের শেষ দিনে ১৯২টি কোম্পানি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কোম্পানি পরিচালকদের নামে যে পরিমাণ শেয়ার থাকার কথা তা তাদের কাছে নেই।
যেসব কোম্পানি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে শাইন পুকুর সিরামিক লিমিটেড অন্যতম। ২০০৮ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশ রয়েছে স্পন্সর/ডিরেক্টরদের হাতে, ২.৬ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আর বাকি ৪৭.৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে পরিচালকদের হাতে।
কোম্পানির ৭ জন পরিচালকের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড। এ কোম্পানির এককভাবে ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। যা ডিএসইর ওয়েব সাইডে প্রকাশ করা হয়েছে। আর বাকি ছয় পরিচালকের মধ্যে রয়েছে, এ এস এফ রহমান, পুঁজিবাজারের আলোচিত ব্যক্তি সালমান এফ রহমান, নাজমুল হাসান, কে চৌধুরী, আহম্মেদ শাহরিয়ার রহমান এবং আহম্মেদ রহমান। তাদের একজনেরও কোনও শেয়ার নেই। প্রত্যেকে শেয়ার শূণ্য থাকা সত্ত্বেও কোম্পানির পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন।
১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মার অন্যতম উদ্যোক্ত পরিচালক সালমান এফ রহমান। তিনি কোম্পানির মাত্র দশমিক ৯৬ শতাংশ শেয়ার নিয়ে স্পন্সর/ডিরেক্টরের আসনে বসে আছেন।
এছাড়া কোম্পানির মোট ৭ জন পরিচালকের মধ্যে ৪ জনের হাতে রয়েছে এক শতাংশের কম শেয়ার। আর ১ শতাংশের বেশি শেয়ার নিয়ে পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র একজন পরিচালক। কোম্পানিটির হাতে সম্মিলিতভাবে মোট শেয়ার রয়েছে ১১.৫৯ শতাংশ।
তথ্যানুযায়ী, বেক্সিমকো লিমিটেডের ৬ জন পরিচালকের মধ্যে ১ শতাংশ কম শেয়ার নিয়ে পরিচালকের আসনে আছে ২ জন, ২ শতাংশের কম শেয়ার নিয়ে ২ জন পরিচালক কোম্পানি চালাচ্ছেন।
সামিট পাওয়ার লিমিটেডের ১২ জন পরিচালকের মধ্যে ৫ জন পরিচালকের ১ শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে।
আনোয়ার ইয়ার্ডের মোট পরিচালকের একজনের দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
বে-লিজিং কোম্পানির ২২ জন পরিচালকের মোট শেয়ার রয়েছে ৩৯ লাখ ১৪ হাজার ৪৭৩টি। এর মধ্যে ১১ জন পরিচালকের এক শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে।
অ্যারামিট সিমেন্টের ১২ জন পরিচালকের মধ্যে ৮ জন পরিচালকের ১ শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে।
ফাইন ফুডস কোম্পানি লিমিটেডের ৩ জন পরিচালকেরে ০.০০১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
উত্তরা ব্যাংকের মোট পরিচালকের সংখ্যা ১৪ জন। এর মধ্যে ১২ জন পরিচালকের এক শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে।
ফু-ওয়াং ফুডস কোম্পানির পরিচালকদের মধ্যে ৭ জনের ১ শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে। আর শুধু একজনের ১৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
উদ্যেক্তাদের শেয়ারের তথ্য সম্পর্কে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, উদ্যেক্তাদের যেকোন মূল্যে শেয়ার ক্রয়ে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে তাদের বাজারে ফিরিয়ে আনা হবে।
ইতিপূর্বে যেসব কোম্পানি রাইট, বোনাস, আরপিও, ডাইরেক্ট লিস্টিং, প্রিফারেন্স শেয়ারের মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করেছে তাদেরও শেয়ার কেনার অনুরোধ জানান তিনি।
তখন পুঁজিবাজারে আলোচনায় আসে উদ্যেক্তাদের শেয়ার ক্রয়ের বিষয়। এসইসির নির্দেশনার পরও কোম্পানির উদ্যেক্তা পরিচালকরা সক্রিয় না হওয়ায় পরবর্তীতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের শেয়ার ধারণের তথ্য জানাতে চিঠি ইস্যু করে এসইসি এবং ডিএসই।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১১