ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলাদেশে ৫ অর্থনৈতিক অঞ্চল করবে সংযুক্ত আরব আমিরাত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
বাংলাদেশে ৫ অর্থনৈতিক অঞ্চল করবে সংযুক্ত আরব আমিরাত বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান।

ঢাকা: বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য কয়েকটি প্রকল্পসহ ৫টি মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা। দেশটির বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের অবকাঠামোখাতের উন্নয়নে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে। ইউএইভিত্তিক বিনিয়োগকারীরা ইকোনমিক ফোরামে ২৫টি বিনিয়োগ প্রকল্প তুলে ধরেন।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুবাইয়ের কনরাড হোটেলে বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরমের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দেশটির বিনিয়োগকারীরা।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের (বিএইচটিপিএ) কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ২০ সদস্যের সরকারি প্রতিনিধিরা।

প্রায় ২৫টি নতুন বিনিয়োগ প্রকল্প বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামে সামনে উপস্থাপন করা হয়। যেখানে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সফররত বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তাদের প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন দিরহাম) বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে (এফডিআই) তরান্বিত করতে বাংলাদেশ একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ২৮টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে। ফলে গত বছরে বিনিয়োগের পরিমাণ ৬৬ শতাংশ বেড়ে তিন দশমিক ৬১ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

সালমান ফজলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আগ্রহ দেখে আমি অত্যন্ত খুশি। আমরা সব সময় চীন, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগ দেখে আসছি। এখন আমরা বিশ্বাস করি গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়, অপারেশনস এবং উচ্চতর রিটার্নের সুবিধা নেওয়া উচিত। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জিসিসিভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রধান উৎস হতে পারে। দেশের ভবিষ্যত অর্থনীতি গঠনে সহায়তা করতে এ বিনিয়োগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

তিনি বলেন, আগামী বছরগুলোতে আমরা ইউএই’র বিশাল কর্পোরেট কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য কাজ করবো। যেন এই খাত থেকে বিনিয়োগের সুযোগ বের করা যায় এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানো যায়।

দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মাদ ইমরান বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানী, বন্দর ও অবকাঠামোখাতে আমিরাতের ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার ফলে এই বছর দু’দেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করবে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩দিনের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সময় মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

এই স্মারক অনুযায়ী দেশটির বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে একটি বন্দর, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, এলএনজি টার্মিনাল, পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়বে।

তিনি বলেন, এই বিনিয়োগ দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তা আরও গভীর হবে।

গতবছর বাংলাদেশের অর্থনীতি ৭ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা আশা করছি, এবার নাগাদ তা ৮ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাবে। এটা বাংলাদেশকে পৃথিবীতে দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির দেশে পরিণত করবে। এটা থেকে দেশটিও লাভবান হবে। এটা খুবই উৎসাহজনক যে দু’দেশের সম্পর্ক একদম সঠিক দিকে পরিচালিত হচ্ছে। যেখানে দেশই একে অপরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।

এশিয়ান ইনফ্রাক্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) মতে, ২০২১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে বার্ষিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।

এআইআইবি তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে অবকাঠামোগত কাজে বিনিয়োগ দিগুণেরও বেশি হয়ে ৩১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে হয়েছে। যা ২০১৮ সালে আরও বেড়ে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম ৩০তম দেশে পরিণত হলে শুধু অবকাঠামো খাতে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ, সড়ক ও পানি সরবরাহে বাংলাদেশকে ২০২০ সাল নাগাদ প্রায় ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে।

সম্মেলনে ৩০০ জনেরও বেশি সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়িক নেতারা ও উদ্যোক্তারা অংশ নেন। উপসাগরীয় অঞ্চলে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকারের তিনটি বিনিয়োগ প্রচার সংস্থা বিডা, বেজা ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়।

সম্মেলনটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরাম যা সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী বাংলাদেশি পেশাজীবী ও উদ্যোক্তাদের একটি বেসরকারি উদ্যোগ।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
জিসিজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।