ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

সাভারেও বদলায়নি ট্যানারির পরিবেশ, ব্যবসায় নেমেছে ধস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
সাভারেও বদলায়নি ট্যানারির পরিবেশ, ব্যবসায় নেমেছে ধস চামড়ার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খোলা স্থানে। ছবি: জিএম মুজিবুর

সাভার থেকে ফিরে: আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব চামড়াশিল্প নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিশিল্প সরিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয়। তবে স্থান পরিবর্তনে অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও বদলায়নি পরিবেশ। এখনও গড়ে ওঠেনি পরিবেশবান্ধব আধুনিক চামড়াশিল্প নগরী। ফলে পরিবেশগত কারণে কমেছে বিদেশি ক্রেতা, রপ্তানি কমে ব্যবসায় নেমেছে ধস।

বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সাভারের হেমায়েতপুরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) শিল্পনগরীর ট্যানারি মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রায় ২০০ একর জায়গাজুড়ে সাভারের ট্যানারিশিল্প নির্মাণ করা হয়েছে।

১৫৫ জন শিল্পমালিককে প্লট বরাদ্ধ দেওয়া হলেও, কয়েকটি ছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও পুরোপুরি অবকাঠামোই নির্মাণ করতে পারেনি।  

ট্যানারি মালিকরা বাংলানিউজকে জানান, পুঁজির অভাবে তারা ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামোর কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি।

চামড়া কাটার পর ট্যানারির কঠিন বর্জ্য ফেলার জন্য ডাম্পিং ইয়ার্ড তৈরির কাজ এখনো শুরুই হয়নি। ফলে চামড়ার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খোলা স্থানে কিংবা পুকুরে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সেন্ট্রাল অ্যাফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান-সিইটিপি) নিয়েও রয়েছে ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ।

ট্যানারি মালিকরা আরও জানান, ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ৩৮ ইঞ্চি ড্রায়ার পাইপ দেওয়ার কথা থাকলেও, দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৮ ইঞ্চির পাইপ। যার ফলে পানি ওভারফ্লো হয়ে পরিবেশ দূষিত হয়। ডেনেজ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে বলেও জানান ট্যানারি মালিকরা। তবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) থেকে বলা হচ্ছে, ইতোমধ্যে সিইটিপি’র ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।  

সিইটিপি প্রসঙ্গে সামির লেদার এক্সপোর্টের মালিক নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এই সিইটিপি দিয়ে কতটুকু বর্জ্য শোধন হয় জানি না। তবে এটা শুধুমাত্র আই ওয়াস করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সেটা বলতে পারি। আমি ভারতের ট্যানারিতে দেখেছি বর্জ্য শোধনের পর একবারে পরিষ্কার পানি বের হয় ড্রেন দিয়ে। এখান থেকে তেমন পরিষ্কার পানি বের হতে দেখা যায় না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাস্তাঘাট আগের থেকে ভালো হয়েছে, বিদ্যুৎ নিয়েও কোনো অভিযোগ নেই আমাদের। তবে মূল সমস্যা হচ্ছে পরিবেশের, যেদিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। পরিবেশের কারণেই আমাদের বিদেশি ক্রেতা কমে যাচ্ছে।

চামড়া রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশি চামড়ার সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল চীন। তবে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সমস্যা হওয়ায় চীন আগের তুলনায় চামড়া আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া চামড়ার আন্তর্জাতিক ক্রেতাজোট লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) ছাড়পত্র না থাকায় চামড়া ইউরোপের মার্কেটে রপ্তানি করতে পারে না বাংলাদেশ।

সাভারে ট্যানারিশিল্প।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া রপ্তানি থেকে আসে ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানি আয় ১০৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে কমে আসে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই পর্যন্ত ৮৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার আয় হয় চামড়া রপ্তানি থেকে। এ সময়ে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি মো. শাহিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে সিইটিপি নির্মাণের কাজ চলছে। এখনও সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজম্যান্টের কাজ সম্পন্ন হয়নি। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করা হচ্ছে, দুইটি ডাম্পিং জোন তৈরির কাজ মাস দু’য়েকের মধ্যে শুরু করা হবে। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট এখন আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এটার জন্যেই আমরা পরিবেশগত ছাড়পত্র পাচ্ছিনা। ফলে আমরা ঠিকমত ব্যবসাও করতে পারছি না। পরিবেশগত ছাড়পত্র পেলে আমাদের চামড়া রপ্তানি বাড়বে। ব্যবসাও ভালো হবে।

সাভার বিসিক শিল্প নগরীর সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ডিরেক্টর জিতেন্দ্র নাথ পাল বাংলানিউজকে বলেন, লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সার্টিফায়েড হতে গেলে ১৩৬২ নম্বরের মান যাচাই প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এর মধ্যে বিসিকের হাতে রয়েছে মাত্র ২০০ নম্বর। সিইটিপি’তে ১০০ নম্বর ও ডাম্পিং ইয়ার্ডে ১০০ নম্বর। বাকি ১১৬৫ নম্বর ট্যানারি মালিকদের অর্জন করতে হবে। যার মধ্যে কারখানার পরিবেশ, কর্মীদের ঝুঁকি ও নিরাপত্তা, চিকিৎসাসহ অনেকগুলো বিষয় রয়েছে।  

‘এগুলো পূরণ করতে পারলেই আমরা সার্টিফিকেট পাব। তাহলেই আমরা ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করতে পারবো। ইতোমধ্যে তিনটি ইমার্জেন্সি ডাম্পিং জোনের কাজ শুরু হয়েছে। ’

সংশ্লিষ্টরা বাংলানিউজকে বলেন, চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাইকে একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপের পরিবর্তে সম্মিলিতভাবে ট্যানারির পরিবেশের উন্নয়ন ঘটিয়ে এলডব্লিউজি-এর সার্টিফায়েড হতে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি চামড়াশিল্পকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের চামড়া ইউরোপের বাজারে রপ্তানির দুয়ার উন্মোচন হবে ও বর্তমান চামড়াশিল্পের সংকট কেটে যাবে।  

বাংলাদেশের সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৯
আরকেআর/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।