ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

অস্তিত্ব সংকটে সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীরা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৯
অস্তিত্ব সংকটে সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীরা পশুর চামড়া (ফাইল ফটো)

সিলেট: পুঁজি হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীরা। সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই এখন দেউলিয়া। কেউবা ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন বিদেশে। জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেকেই আবার যোগ দিয়েছেন অন্যান্য পেশায়।

এরপরও টিকে থাকা অনেক ব্যবসায়ী এবার পর্যাপ্ত টাকা না পেয়ে ঢাকা থেকে ফিরেছেন হতাশ হয়ে। তাই পুঁজি সংকটে চামড়া কিনতে আগ্রহী নয় অনেকে।

হতাশার কথা ব্যক্ত করে সিলেট শাহজালাল বহুমুখী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ শামিম আহমদ বলেন, এবার একটি চামড়াও কিনবো না, তাই লক্ষ্যমাত্রাও নেই!

তিনি বলেন, ঢাকায় আড়ত থেকে ৩২ লাখের স্থলে মাত্র ৩ লাখ টাকা পেয়েছি। একইভাবে কেবল সিলেটে নয়, সারাদেশের ব্যবসায়ীদের ২/৩ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। শুধু সিলেটের ব্যবসায়ীদের আড়তে পাওনা রয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, চামড়ার দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতি পিস গরুর চামড়া ৪৫ টাকা ও খাসি-ছাগলের চামড়া ১০ টাকা ফুট নির্ধারণ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ফলে গরুর চামড়া ২৫/৩০ টাকা এবং ছাগল-খাসির চামড়া ৫/৭ টাকা ফুট কিনতে হবে। প্রথম এ দামে চামড়া বিক্রি করে কারও রিকশা ভাড়াও হবে না। আর চামড়ার ফুট কিনে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার পর আড়তে দিতে হবে।

অথচ প্রতি বছর চামড়া সংগ্রহ করে পাঠালেও ঢাকায় টাকা আটকে রয়েছে সমিতির ৬০ সদস্যের। তাদের অধীনে থাকা অন্তত; আড়াই থেকে তিনশ‘ ব্যবসায়ী টাকা পাওনা রয়েছেন বলেন জানান সমিতির দায়িত্বশীলরা।

শেখ শামীম আহমদ আরও বলেন, ২ বছর আগেও কওমি ও এতিমখানা মাদ্রাসা চামড়া সংগ্রহ করে সমিতির সদস্যদের কাছে বিক্রি করে ১২/১৩ লাখ টাকা ফাণ্ড করতো। কিন্তু চামড়া ব্যবসায় ধস নামায় মাদ্রাসাগুলোও চামড়া বিক্রি করে সর্বোচ্চ ২/৩ লাখ টাকা পায়।
 
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা বছরের পর বছর ঢাকার একাধিক আড়তে আটকে আছে। ২০১৫ সাল থেকে ঢাকার ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের টাকা নিয়মিতভাবে পরিশোধ করছে না। গত বছর লবণের দাম বেশি হওয়াতে চামড়া ব্যবসায় লোকসান গুণতে হয়েছে। তবে এবার লবণের দাম ৭০ কোজির বস্তা ৮শ টাকা হলেও চামড়া কিনতে পর্যাপ্ত টাকা পাননি সিলেটের ব্যবসায়ীরা। ফলে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করে এখন তারা দেউলিয়া হয়ে গেছেন।

চামড়া সমিতি সূত্র জানায়, সিলেটে মাঝারি চামড়া ৮ থেকে ১০ বছর আগে দাম ছিল ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। গত ২ বছর থেকে এ মাঝারি চামড়ার বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫-৮শ’ টাকা। তবে এবার মাঝারি সাইজের গরুর চামড়া ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকার বেশি দামে কেনা সম্ভব নয়। আর বিক্রেতারাও এতো সস্তায় চামড়া বিক্রির চেয়ে ফেলে দেবে!

সিলেটে প্রায় সহস্রাধিক চামড়া ব্যবসায়ী ছিলেন। বর্তমানে সমিতিতে যুক্ত আছেন ৬০ জন এবং এ ৬০ জনের অধীনে খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছেন ২ থেকে আড়াইশ’। প্রায় ৭ শতাধিক ব্যবসায়ী নিজেদের এ ব্যবসা থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।
 
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সিলেট অফিস সূত্র জানায়, সিলেট জেলায় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৩৫টি গবাদি পশু কোরবানি হবে। জেলায় ১০ হাজার ৮৪৩টি খামারে ৮৭ হাজার ১৯০টি গবাদিপশু রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৯
এনইউ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad