ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক পশু নিয়ে বিজ্ঞানীদের পরামর্শ

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৯
স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক পশু নিয়ে বিজ্ঞানীদের পরামর্শ

ময়মনসিংহ: আর মাত্র দুই দিন বাদেই ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত পবিত্র ঈদুল আজহা। ইতোমধ্যেই ময়মনসিংহ নগরীর ছোট-বড় হাটগুলোতে বেচাবিক্রি জমে উঠেছে। তবে শনিবার (১০ আগস্ট) ও রোববার (১১ আগস্ট) মূলত পশু বেচাকেনা তুঙ্গে থাকবে বলেই মনে করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এবারো ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেশি প্রজাতির গরু।

নানা সচেতনতার পরও অতি স্বাস্থ্যবান বা মোটাতাজা গরু রয়েছে হাটে হাটে। তবে গরু কেনার আগে স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ, ইনজেকশন বা বিভিন্ন হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে মোটাতাজা করা গরু না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন পশু বিজ্ঞানীরা।

একই সঙ্গে তাঁরা সুস্থ গরু চেনার পথও বাতলে দিয়েছেন।

শুক্রবার (০৯ আগস্ট) রাতে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) তিন পশু বিজ্ঞানী বলেন, কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা গরু মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে করে মরণব্যাধি ক্যান্সারের পাশাপাশি কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ক্ষতিকারক ওষুধে মোটাতাজা গরুর শরীরে চাপ দিলে দেবে যাবে এমনটি জানিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: মনিরুজ্জামান বলেন, রোদের মধ্যে দাঁড়ালে এ জাতীয় গরু হাঁপাতে থাকে এবং মুখে ফেনাও থাকে। এ জাতীয় গরু কোরবানির পশু হিসেবে বিক্রি না হলে, পরবর্তীতে কয়েক দিন মধ্যেই মারা যায়।

তিনি বলেন, এ ধরনের গরু সহজেই ক্লান্ত হয়ে যায়। একটি গরুর স্মার্টনেস দেখেই বোঝা যাবে গরুটি সুস্থ। সুস্থ সবল গরুর চোখে-মুখে কোনো ময়লা থাকবে না। নাকের কাছাকাছি মাজলে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে থাকবে। কোনো অবস্থাতেই মাথা নিচু থাকবে না ও ঝিমাবে না। সুস্থ গরু নাড়াচাড়া করবে এবং ইশারা করলে তাকাবে। গায়ের লোম উসকো-ফুসকো থাকবে না।

মোটাতাজাহীন সুস্থ গরুর পশম চকচকে থাকবে বলে জানান একই বিভাগের অধ্যাপক ড.রকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ গরু স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নেবে এবং ছাড়বে। আর ওষুধে মোটাতাজা গরু হচ্ছে অলস প্রকৃতির। একবার শুয়ে থাকলে আর উঠতে চাইবে না। এ গরুর শরীরের কোনো কোনো অংশ অস্বাভাবিক মোটা হবে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হলে বুঝতে হবে গরুটি অসুস্থ।

অনেকেই কোরবানির সময়ই প্রথম গরু কাছ থেকে দেখেন বিধায় সহজেই মোটাতাজা গরু সনাক্ত করা তাদের জন্য কঠিন বলেও মনে করেন ড.রকিবুল। তিনি বলেন, এজন্য প্রথম থেকেই যখন একটি গরু লালন-পালন শুরু হয় তখন থেকেই এ বিষয়ে নিরবিচ্ছিন্ন মনিটরিং প্রয়োজন।

কৃত্রিমভাবে মোটা করা গরু গরম সহ্য করতে পারে না এবং চাপ নিতে পারে না বলে একটি লক্ষণের কথা বলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: রুহুল আমিন। তিনি বলেন, একটি সুস্থ গরু দ্রুত খাবার খায় এবং জাবর কাটে। চামড়া থাকে উজ্জ্বল, দেহ মসৃণ ও সুন্দর দেখায়।

অস্বাভাবিক উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর শরীরে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওই স্থানে মাংস দেবে যায়। কিন্তু কোনো রকম ওষুধ ছাড়াই কেবলমাত্র প্রাকৃতিক উপায়ে মোটা করা পশুর গায়ে চাপ দিলে মাংস খুব বেশি দেবে যায় না। আবার দেবে গেলেও সঙ্গে সঙ্গেই আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

এ পশু বিজ্ঞানীরা বলেন, মোটাতাজা করা গরুর মাংস মানবদেহের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক। এ মাংস রান্নার পরও মানুষ খেলে লিভার, কিডনি ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরুষের পুরুষত্ব নষ্টের পাশাপাশি নারীদের গর্ভধারণের ক্ষমতাও নষ্ট হতে পারে।

বাংলাদেশ সময় ০৮১৪ ঘন্টা, আগস্ট ১০, ২০১৯
এমএএএম/এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।