ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

গোল্লায় গেছে ডিম!

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৯
গোল্লায় গেছে ডিম! ভালো নেই ছোট ফার্ম ব্যবসায়ীরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: দেশের মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেশ ‍উপরেরই দিকেই আছে ডিমের নাম। খাদ্যমানে পুষ্টিকর হলেও গোলগাল আকৃতির কারণে অনেকেই বলে থাকেন, ‘পরীক্ষায় ডিম পেয়েছি’ বা ‘ডিম পেয়ে গোল্লায় গেছে’। তবে, সময়ের ফেরে সেই বক্তব্য অনেকটাই বদলে গেছে। তাদের মতে, এখন ডিমেরই গোল্লায় যাওয়ার দিন। এর আকাশচুম্বী দামের কারণেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। 

চলতি বছরের জুলাই মাসে বাজারে প্রতি হালি মুরগির ডিম সর্বোচ্চ ৪৪ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এখন পাইকারি বাজারে ডিমের হালি ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা ও পাড়া-মহল্লার দোকানে তা ৪০ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ডিমের আড়ত ও মিরপুর এলাকার পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানগুলো ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

কারওয়ান বাজারের আড়তদারদের মতে, ডিমের দাম নির্ধারণ করেন ফার্মের মালিকরা। তাদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। এছাড়া গরমের সময় মুরগি ডিম তুলনামূলক কম দেওয়া ও বছরের এ সময়ে ফার্মের পুরনো মুরগি বিক্রি করে নতুন আনার কারণে ডিমের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।  

তবে ছোট ফার্মের মালিক ও পাইকারদের মতে, বড় ফার্মের মালিকদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটই দাম বাড়ানোর জন্য দায়ী।  

মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকার মুদি দোকানদার ইসমাইল বাংলানিউজকে বলেন, মুরগির ডিম আমরা ৪০ থেকে ৪২ টাকা হালি বিক্রি করি। কখনো পাইকারি ৩৬ টাকায় পাই, আবার কখনো ৩৮ টাকায় কিনতে হয়। আর, সেগুলো পাইকারি বাজার থেকে আমার দোকানে আনতেও যথেষ্ট খরচ হয়। দিনশেষে লাভ হয় খুবই সীমিত।  

তিনি বলেন, ক্রেতারা মুরগির ডিম কিনতে চাচ্ছেন না শুধু বেশি দামের কারণে। আবার, হাঁসের ডিম সবাই খেতে চান না। গত সপ্তাহে, এমনকি এ সপ্তাহের শুরুতেও ৪৪ টাকা হালি মুরগির ডিম বিক্রি করেছি।

জানা যায়, নিঃস্ব হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন অনেক ছোট ফার্ম-ব্যবসায়ী। এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।  

ফার্ম থেকে সরাসরি ডিম কিনতে পারেন না পাইকাররা।  ছবি: বাংলানিউজ

এদেরই একজন গাজীপুরের পুবাইল গ্রামের জমির মুন্সি। দুঃখের সঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাস করে দেখি অনার্স-মাস্টার্স পাস করা চাকরিপ্রার্থীর অভাব নেই। তাদের ভিড়ে আমরা চাকরি পেলেও তা কেরানী পদে। তাই, পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা শুরু করি। বাড়িতে ফার্ম করে শুরুতে মুরগি ও ডিম বিক্রি করে ভালোই লাভ হচ্ছিল। তবে, গত তিন থেকে চার বছর আর লাভের মুখ দেখা হয়নি। মুরগির খাবারের দাম এত বাড়লো যে, ডিম কমপক্ষে দুই থেকে চার টাকা লসে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছিলাম।  

তিনি বলেন, দুই বছর আগে একবার দেউলিয়া হলেও ব্যাংকের লোন নিয়ে আবার পোল্ট্রি ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু, এবার কমপক্ষে পাঁচ টাকা লসে ডিম বিক্রি করতে হলো। ব্যবসা একেবারে নিলামে তুলে লোন পরিশোধ করলাম। আপাতত ঢাকায় মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে উপার্জন করছি। এ ছাড়া পরিবার নিয়ে বাঁচার উপায় নেই। ডিমের ব্যবসায় একমাত্র টিকে আছে বড় ফার্মের মালিকরা। সারাদেশে আমাদের মতো ছোট ফার্মের মালিকরা একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেছে।  

বড় ফার্মের মালিকদের ব্যবসা কীভাবে টিকে আছে, এ প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ডিমের আড়তদার বাবু বাংলানিউজকে বলেন, বড় ফার্মের ব্যাবসায়ীরা একটা সিন্ডিকেট তৈরি করেছে দীর্ঘদিন ধরে। তারা কম দামে ডিম বাজারে ছেড়েছে। এতে তাদের লস হয় না, কারণ তাদের ব্যবসা বড় আকারের। কিন্তু, ছোট খামারিরা তা পারে না। এভাবে ছোট খামারিদের ব্যবসা ধ্বংস করে তারা একচেটিয়া দাম বাড়াচ্ছে। এখন বলার কেউ নাই। ছোট খামারিরাও লসে বিক্রি করতে করতে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এ সুযোগে এখন সেই সিন্ডিকেট আবার বিভিন্ন অজুহাতে ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের গোডাউনে অনেক ডিম রয়েছে, যা তারা বেশি দামে বাজারে ছাড়ছে।  

দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে কারওয়ান বাজারের আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, বছরের এ সময়ে পুরনো মুরগি বিক্রি করে করে দেওয়া হয়। এ কারণে এখন বাজারে মুরগির চালান বেশি, আর দাম কম। নতুন মুরগি থেকে কিছুদিন পর ডিম পাওয়া শুরু হবে। তাছাড়া, এ গরমে মুরগির রোগ বাড়ে, দীর্ঘদিন ধরে ডিম দিতে দিতে সে ক্ষমতাও কমে যায়। এসব কারণে ডিমের সঙ্কট সৃষ্টি হয়, আর দাম বাড়ে।

তিনি বলেন, এখন পাইকারি ডিম কেনা হচ্ছে প্রতি পিস ৯ টাকা বা হালি ৩৬ টাকায়। বিক্রি করছি ৩৮ টাকায়। ফার্ম থেকে ১০ টাকা ৪০ পয়সা দরেও ডিম কিনেছি। তাছাড়া, এখন আর ফার্ম থেকে সরাসরি ডিম কিনতে পারি না। অন্য ব্যবসায়ীরা ফার্ম থেকে ডিম নিয়ে তা সরবরাহ করে। এ জন্যেও অকারণে দাম বাড়ে। ডিম আমাদের কাছে সরাসরি আসলে প্রতি পিসের দাম এক টাকা হলেও কমতো।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৯
এমএএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।