ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

চাল রপ্তানি হলেও দাম বৃদ্ধি নিয়ে সন্দিহান ব্যবসায়ীরা

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৯
চাল রপ্তানি হলেও দাম বৃদ্ধি নিয়ে সন্দিহান ব্যবসায়ীরা চালের দাম খুব বেশি বাড়বে না। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: দেশীয় বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি ও চাল ব্যবসায়ী-কৃষকদের জন্য ন্যায্যমূল্য নির্ধারণে বিদেশে চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সন্দিহান ব্যবসায়ীরা। কেজি প্রতি সর্বোচ্চ এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে বলে বিশ্বাস তাদের।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, বাম্পার ফলনে এবার দেশে ধান উৎপাদনের পরিমাণ ৩ কোটি ৬২ লাখ টনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বোরো উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ টন।

এদিকে, দেশে চালের চাহিদা রয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ টন। বাড়তি ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন চালের মধ্যে মিল মালিকদের কাছে একটি বড় অংশ মজুদ থাকে। এছাড়া, খাদ্য মন্ত্রণালয় কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করবে ১ লাখ ৫০ হাজার টন ও চাল সংগ্রহ করবে ১০ লাখ ৫০ হাজার টন। ফলে, অভ্যন্তরীণ বাজারে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে ধান। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকেরা।
 
সম্প্রতি বিভিন্ন পর্যায়ের চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলানিউজ। মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল রপ্তানি করলে কেজি প্রতি দাম ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ দুই টাকা বাড়তে পারে, যা এতদিনের লোকসান পুষিয়ে নিতে মোটেও যথেষ্ট নয়। প্রায় এক বছর ধরে চলা মন্দা চালের বাজার এত সহজে চাঙ্গা হবে না বলেও অভিমত তাদের। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এবছর।  ছবি: ডি এইচ বাদল
বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সরকার যেহেতু চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নিশ্চই ভালো কিছু চিন্তা করেই নিয়েছে। তারা চায়, চালের দাম বাড়ুক। আমরাও আশা করছি, বাড়বে। তবে, যতটুকু দাম বাড়বে, তা দিয়ে আমাদের এতদিনের ক্ষতি পোষাবে না।
 
সঠিক তথ্যের অভাব ও সরকারের কৌশলগত কিছু ভুলে চালের বাজার মন্দা বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। আমাদের চাহিদা কত, আছে কত, কী পরিমাণ চাল উৎপাদন হতে পারে, এসব তথ্য আগে ঠিকভাবে সংগ্রহ করা উচিৎ ছিল। ভুলের কথাটা এজন্য বলছি যে, আমাদের এমন বাম্পার ফলন হয়েছে, তারপরও ভারত থেকে চাল আমদানি করা হয়েছে। তাহলে কী হলো? অতিরিক্ত মজুদ হয়ে দাম কমে গেলো। মার খেলো দেশি কৃষকেরা, আমরা। আরও আগে থেকে এ বিষয়গুলো খেয়াল করলে আমাদের এত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো না। তবুও সরকার যেহেতু চায়, রপ্তানি করে হলেও দাম বৃদ্ধি করতে, আমরা সেটিকে সাধুবাদ জানাই। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এবছর।  ছবি: ডি এইচ বাদল
 চাল রপ্তানি করলেও তার ইতিবাচক প্রভাব চাল ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা খুব একটা পাবেন না বলে মনে করেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান। আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির এ কর্ণধার বাংলানিউজকে বলেন, যারা চালের ব্যবসা করি, মনে করেন আমরা ‘মার্ডার’ হয়ে গেছি। বলতে গেলে, কোনো পুঁজি নেই আমাদের। এখন যদি সরকার বাইরে চাল রপ্তানি করে, তাতে ভালোই হবে। তবে, দাম খুব বেশি বাড়বে না। কৃষকদের জান একটু বাঁচবে আর কি! এবারের বাজেটের পর আলু, পেঁয়াজ সবকিছুর দামই বেড়েছে। বাড়েনি শুধু চালের দাম। চাল রপ্তানি করলে ধরনভেদে কেজি প্রতি হয়তো সর্বোচ্চ দুই টাকা দাম বাড়বে। এটাই সর্বোচ্চ।  

এদিকে, চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সংশয়ে আছেন ক্রেতারাও, বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা। কারওয়ান বাজারে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, এক বা দুই বছর আগেও চালের যে দাম ছিল, তার থেকে এতদিন কমই ছিল। আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষেরা এ নিয়ে স্বস্তিতেই আছি। সামনেই কোরবানির ঈদ। এসময় যদি চালের দাম বাড়ে, তাহলে খুব সমস্যায় পড়তে হবে।
 
বৃহস্পতিবারের (১৮ জুলাই) বাজার দর অনুযায়ী প্রতি কেজি গুড়ি চাল ২৮ টাকা, স্বর্ণছিড়া চাল ৩০ থেকে ৩২ টাকা, আটাশ চাল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা, মিনিকেট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, মিনিকেটের আরেকটি ধরন ৪০ থেকে ৪২ টাকা, নাজিরশের ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৯
এসএইচএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।