ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

অসহায়ত্বের শেষ নেই নারী চা শ্রমিকদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৮ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
অসহায়ত্বের শেষ নেই নারী চা শ্রমিকদের

মৌলভীবাজার: ‘২৩ বছর ধরে চা বাগানে পাতা তোলার কাজ করছি। এরমধ্যে একে একে ৫ সন্তানের জন্ম দিয়েছি। গর্ভকালীন সময়ে কোনো ছুটি ছিল না। ছিলনা প্রসবের পরবর্তীতে সন্তানের পাশে থাকা। কিছুদিন ছুটি পেয়েছিলাম সন্তান প্রসবের জন্য। নাড়িছেড়া রক্ত শুকানোর আগেই পাহাড়-টিলায় পাতি (চা পাতা) ছেড়ার কাজে নামতে হয়েছিল। এখন আমার মেয়েও একই কাজ করে। একই দুর্দশায় ভুগছে মেয়েটিও।’

এভাবেই কষ্টের কথাগুলো বাংলানিউজকে বলছিলেন গীতা মুণ্ডা নামে এক নারী চা শ্রমিক।

জানা যায়, মৌলভীবাজারের ৯৩টি চা বাগানের নারী শ্রমিকেরা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে না গিয়ে ঝুঁকি কাজ করছে।

কখনো বাগান কর্তৃপক্ষের চাপে আর কখনো মজুরির আশায় তারা দিনের আট ঘণ্টা পরিশ্রম করছেন। এরফলে গর্ভকালীন সময়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানা আট ঘণ্টা দাঁড়িয়ে পরিশ্রম করায় মা ও গর্ভের সন্তান উভয়ের ক্ষতি হচ্ছে।

নারীরা সাধারণত চা বাগানে পাতা সংগ্রহ, নার্সারিতে গাছের কলম তৈরি এবং চারা সংগ্রহ ইত্যাদি কাজ করেন। বলা চলে চা শিল্পের বড় কাজটাই তারা করেন। দেশের প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী প্রসূতি কল্যাণের অংশ হিসেবে একজন নারী শ্রমিককে প্রসবের আগের আট সপ্তাহ ও প্রসব পরবর্তী আট সপ্তাহ ছুটি দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, কর্তৃপক্ষকে গর্ভকালীন সময়ে অবগত করলে গর্ভকালীন সর্বসাকুল্যে ছয় সপ্তাহের ছুটি দিয়ে থাকে। তাও সবেতন ছুটি নয়। বেতনের আশায় একজন নারী শ্রমিককে গর্ভবতী হলে তাকে প্রসব পূর্ব সে অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে বাগানে কাজ করতে হয়।  
শ্রীমঙ্গল উপজেলার জেরিন চা বাগানের শ্রমিক রূপা নুনিয়া বাংলানিউজকে বলেন, গর্ভবতী অবস্থায় চা বাগানে কাজ করতে গিয়ে নারীদের গর্ভপাত হয়। কারণ আমাদের অনেকের গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান প্রসবের আগ পর্যন্ত ছুটি দেই না। মাত্র ছয় সপ্তাহের ছুটি কোনো সবেতন ছুটি না। এরপরও কাজে না গেলে না খেয়ে মরতে হবে আমাদের।

গবেষণামূলক সংস্থা সিআইপিআরবির এক জরিপ বলছে, চা শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ নারী প্রাথমিকভাবে জরায়ুমুখে ক্যান্সারে আক্রান্ত। দেশে মোট চা বাগান ১৬৪টি, এতে প্রায় ৯ লাখ জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী শ্রমিক। অর্ধেক নারী শ্রমিকের ১৫ শতাংশের শরীরে বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি ক্যান্সার।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের গাইনিকোলজিস্ট ডা. ফারজানা হক পর্ণা বাংলানিউজকে জানান, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে চা শ্রমিকদের মধ্যে স্বাস্থ্যগত সচেতনতা নেই। যে কারণে তাদের শরীরে অনেক রোগ বাসা বাধে। মরণব্যাধি জরায়ুমুখে ক্যান্সার তার মধ্যে অন্যতম। মাতৃত্বকালীন পরিচর্যার অভাব, মাসিককালীন অসচেতনতা ও সঙ্গমকালীন অজ্ঞতার কারণ। এছাড়া আরও অনেক গাইনিকোলজিকাল রোগে নারীরা আক্রান্ত।  

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নারী চা শ্রমিকদের মতামত নিয়ে বাগান মালিকদের অনুরোধ করেছি নারীদের গর্ভকালীন সবেতন ছুটি ও নূন্যতম ছয় মাস ছুটি দিতে। এছাড়া নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু মালিকপক্ষ তাতে উদাসীন।

বাংলাদেশের চা-সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান জিএম শিবলী বাংলানিউজকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সব বাগানেরই সবেতন ছুটি হওয়ার কথা তারপরও কেউ কেউ দিচ্ছেন না হয়তো। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে তা সমাধান হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।