ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

বন্যার পানিতে ডুবলেও ফলন দেবে ধান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৯
বন্যার পানিতে ডুবলেও ফলন দেবে ধান বীজ মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির বীজ সাজিয়ে রাখা হয়েছে/ছবি- জি এম মুজিবুর

ঢাকা: বন্যায় দেশের ধানের উচ্চফলনশীল অনেক এলাকা (বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ) ডুবে যাওয়ার ঘটনা প্রতি বছর ঘটে। এতে ধান নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন কৃষক। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে বন্যার পানিতে ধান ডুবে গেলেও নষ্ট না হয়ে ফলন হবে, এমন বীজ বাজারে নিয়ে এসেছে বায়ার নামের বেসরকারি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রজাতির ধান গাছের নাম হলো আমন হাইব্রিড।

শুক্রবার (২৮ জুন) রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে আয়োজিত বীজ মেলা-২০১৯ এ প্রতিষ্ঠানটির স্টলে দেখা গেছে এমন বীজ ও অ্যাকুরিয়ামে পানিতে ডুবে থাকা ধান গাছ।

প্রতিষ্ঠানটির বীজ বিভাগের প্রধান মো. আব্দুল আজিজ খান বাংলানিউজকে জানান, অ্যারাইজ এ-জেড প্রকল্পের ৭০০৬-বায়ারের আমন হাইব্রিড জাতের ধান আকস্মিক বন্যা সহনশীল হাইব্রিড ধান।

চারা লাগানোর ১৫ দিন পর আকস্মিক বন্যায় ধান ডুবে গেলে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। এর উপর দিয়ে নৌকা গেলেও কোনো সমস্যা হবে না। এই জাতের ধানের পাতাপোড়া রোগের ভয় নেই এবং প্রতি একরে প্রায় ৫৫ থেকে ৬৫ মণ ধান উৎপাদন হয়।  

সাধারণত দেখা যায় বর্ষাকালে বন্যা না হলেও বৃষ্টিতে পানির স্তর বেড়ে গিয়ে ধান ডুবে যায়। এতে কৃষক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কেননা উৎপাদন খরচটি তুলে আনতে পারেন না কৃষক। তাই এই প্রজাতির ধানকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বাজারজাত করছি, বলেন আব্দুল আজিজ খান।

এদিকে গবেষণালব্ধ উন্নতমানের অঙ্গজ বীজ নিয়ে এসেছে গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত সরকারি উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশ থেকে দিনদিন ফলের জাতগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ফলের জাতগুলো রক্ষার প্রয়োজনে গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করছি আমরা। সরকার নতুনভাবে ২০০ কোটি টাকার একটি হর্টিকালচার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যার মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে দেশি ফলসহ বিভিন্ন বিদেশি জাতের গাছ সরবরাহ করা হচ্ছে।  

এসময় তিনি অঙ্গজ বীজ উৎপাদন সম্পর্কে বলেন, গাছে কলম করা অনেক পুরনো একটি প্রযুক্তি। একে আমরা আরো আধুনিকীকরণ করেছি গবেষণার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন গাছের অঙ্গ, যেমন- ডাল ব্যবহার করে থাকি। এসব অঙ্গজ বীজগুলো গাছের সঙ্গে সার দিয়ে পলিথিনের মাধ্যমে আটকে বেঁধে দেওয়া হয়। সাধারণত দেখা যায় অনেক সময় গাছ থেকে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। তখন এভাবে অঙ্গজ বীজ ব্যবহার করলে গাছের ফলনের মাত্রা ও মান পরিবর্তন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র আম একটু দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এছাড়া বাকি সব ফলের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত ফলন আনা সম্ভব। সাধারণত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত অঙ্গজ বীজের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।  

এসময় এই উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ আরো বেশ কয়েকটি উপকারী উদ্ভিদের বর্ণনা করেন। যা দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের অনেক উদ্ভিদ আছে যেগুলোর পাতা ও ফল অনেক উপকারী, কিন্তু আমরা তা চিনি না। যেমন টক আতাফল ক্যান্সারের জন্য ব্যাপক উপকারী। আমি গত ৭ বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছি। এই টক আতাফল খেয়ে আমি উপকার পেয়েছি। নির্ধারিত সময়ে যখন আমি চিকিৎসকের কাছে যাই তখন তারাও বলেন ওষুধ দিয়েও এভাবে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না।  

কৃষিবিদ মো. আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, থানকুনি পাতা প্রজাতির একটি গাছ আছে আমাদের দেশে। নাম পয়সা পাতা গাছ। পাতাগুলো অনেকটা গোলাকৃতির। এই পাতার রস নিয়মিত খেলে লিভার সিরোসিসের মতো রোগ নিরাময় করা সম্ভব। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণিত। এছাড়া তুলসী পাতা দিয়ে আমরা শুধু ঠাণ্ডাজনিত রোগ দূর করার কথা জানি। কিন্তু বার্ধক্যজনিত যতো রোগ আছে, যেগুলোর প্রায় সবরোগের ক্ষেত্রে তুলসী পাতা একটি মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৯
এমএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।