ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

অনিয়মে জরিমানা করায় ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তা লাঞ্ছিত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১১ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৯
অনিয়মে জরিমানা করায় ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তা লাঞ্ছিত

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার শহরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের নিয়মিত অভিযানের সময় জরিমানা আদায় করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন অধিদফতরের জেলা সহকারী পরিচালক আল-আমিন।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুর ২টার দিকে শহরের এম সাইফুর রহমান রোড এলাকার বিলাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আল-আমিন ঈদকে সামনে রেখে ভেজাল পণ্য, পণ্যের দাম ও মান যাচাই করতে অভিযানে বের হন।

এতে তিনি খাদ্য তৈরির কারখানা পরিচ্ছন্ন না থাকায় রাজমহলকে ৩০ হাজার টাকা ও ৭০০ টাকার দেশি প্যান্ট ২ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রির দায়ে সেন্ট্রাল রোড এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন।  

একপর্যায়ে তিনি এমিবিআলটিমেট শপে পণ্যের অতিরিক্ত দাম রাখা, বিদেশি পণ্যের নামে ভেজাল পণ্য বিক্রির দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এসময় সেখানে মৌলভীবাজার বিজনেস ফোরামের নেতাদের উপস্থিতিতে আশপাশের ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

পরে সেখান থেকে বের হয়ে পাশের সুপার শপ ‘বিলাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে’ অভিযান পরিচালনা করে একই কারণে প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি। এসময় ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক সোহাদ আহমদ জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে ভোক্তার সহকারী পরিচালক আল-আমিনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান তিনি। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তার ওপর হামলা চালান। ব্যবসায়ীরা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে পাশের একটি দোকানে নিয়ে জিম্মি করে রাখেন।

পরে বিলাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ আশপাশের দোকানের মালিক-কর্মচারিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাকে ঘিরে ধরে। তৈরি করে ভীতিকর পরিস্থিতি। পরে মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুরিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে আনেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের জেলা সহকারী পরিচালকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে একটি দোকানে নিয়ে জিম্মি করে রাখে ব্যবসায়ীরা
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আল-আমিন বাংলানিউজকে বলেন, ওই প্রতিষ্ঠান পণ্যের মূল দামের ওপর টেম্পারিং করে অতিরিক্ত দাম রাখছে। বিদেশি পণ্যের নামে ভেজাল পণ্য দিয়ে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে এমন প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু তিনি জরিমানা দিতে না করে আমার ওপর কর্মচারী লেলিয়ে দেন।

অভিযোগের ব্যাপারে বিলাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক সুমন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, সারাবছর ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা ঘরে বসে থাকেন। আর রমজান ও ঈদে যখন আমাদের ব্যবসা জমে ওঠে তখন তারা এসে অভিযানের নামে হয়রানি করেন। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা তার প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

এদিকে সেসময় ব্যবসায়ীদের সংগঠন মৌলভীবাজার বিজনেস ফোরামের নেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরিতে ইন্ধন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে বিজনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাহাদাত হোসেন তা অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে আসছিলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক। বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এসময় আমরা তাকে নিরাপদে সরিয়ে নেই। কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।

মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি জুয়েলারি দোকানে জিম্মি অবস্থা থেকে ভোক্তা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আল-আমিনকে উদ্ধার করি। এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।