রাজশাহী: রাজশাহীতে চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে ৫০ মেগাওয়াট রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের (ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র) নির্মাণকাজ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০১১ সালের মার্চ থেকে কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসতে পারবে।
নর্দান পাওয়ার সলিউশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎকন্দ্রটি নির্মাণ করবে। প্ল্যান্টটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। মহানগরীর কাটাখালীতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পূর্ব নির্ধারিত স্থানেই এটি নির্মিত হবে।
নর্দান পাওয়ারের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মানিকুজ্জামান খান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার কাজ শেষ হয়েছে। কাজের গতি স্বাভাবিক থাকলে ২০১১ সালের মার্চ থেকে এখানে পুরোদমে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। ’
বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ কেন্দ্রে ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘নির্মাণকাজ শেষ হলে এ প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যোগ হবে। ’
রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার মতায় আসার পর অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা দেখে রাজশাহীর কাটাখালিতে ৫০ মেগাওয়াটের রেন্টাল প্ল্যান্ট ও ৫০ মেগাওয়াটের পিকিং প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয়।
পিকিং প্ল্যান্ট প্রকল্পটি এখনো মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ পায়নি। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা থাকার পরেও প্রকল্পটি সুপারিশ না পাওয়ায় স্থানীয় পিডিবির কর্মকর্তারা হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রাজশাহী নগরীর বিদ্যুৎচাহিদা মেটাতে পিকিং প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়।
আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজশাহী অঞ্চলে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র না থাকায় বহু বছর ধরে এই অঞ্চলের কয়েকটি জেলার মানুষকে বিদ্যুতের জন্য জাতীয় গ্রিডের ওপরই নির্ভরশীল। গত সংসদ নির্বাচনের আগে মহাজোট সরকার রাজশাহী অঞ্চলে একাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়।
চলতি বছরের শুরুতে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আবারো ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে রাজশাহীবাসী। শেষ পর্যন্ত দেশে নির্মাণাধীন আরো ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে রাজশাহী বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বাছাই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে এর নির্মাণ ব্যয় বহন করা হবে। মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে এর কাজ শুরুর কথা রয়েছে।
উত্তরাঞ্চল বিউবোর প্রধান প্রকৌশলী লতিফুর রহমান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় দৈনিক প্রায় ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে কোনো উৎপাদন কেন্দ্র না থাকায় বিদ্যুতের পুরোটাই আনতে হয় জাতীয় গ্রিড লাইন থেকে। তবে জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় কয়েক বছর ধরে রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলিতে দিন-রাত সমানতালে লোডশেডিং করা হয়। আবার কৃষিকাজে সেচযন্ত্র চালাতে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত বিদ্যুতের। ফলে শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে সেচযন্ত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়।
এই সমস্যা থেকে উত্তরণে শেষ পর্যন্ত রাজশাহীতে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দাবিটি সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই আমলাতান্ত্রিক জটিলাতার অজুহাত দেখিয়ে রাজশাহীর সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছিল। কিন্তু রাজশাহীকে উন্নয়ন বঞ্চিত করে, দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই রাজশাহীবাসীর প্রাণের দাবি এবং এর গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। ’
মেয়র লিটন আরও বলেন, ‘প্ল্যান্টের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে, জাতীয় গ্রিড লাইনের ওপর চাপ অনেক কমবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের বিদ্যুতের ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১০