ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

কমেছে মুরগির দাম, অপরিবর্তিত চালসহ মুদিপণ্য 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৯ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৯
কমেছে মুরগির দাম, অপরিবর্তিত চালসহ মুদিপণ্য 

ঢাকা: রাজধানীর বাজারগুলোতে আরেক দফা কমেছে মুরগির মাংসের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে দুইদিন আগে উত্তাপ ছড়ানো বেগুনের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। 

বাজারের বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। আগের দামে বিক্রি হচ্ছে ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, মাছ, গরু ও খাসির মাংস।

অপরিবর্তিত রয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় মুদিপণ্যের দাম।

এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারসহ অলি গলির দোকানগুলোতে এখনও বিক্রি হচ্ছে মানহীন ৫২ পণ্য। এসব পণ্য দোকানের সামনে রেখে বিক্রি না করলেও দোকানের পেছনে রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু পণ্য বাজার থেকে সরালেও এখনও শেষ করতে পারেনি। গত ১২ মে নিন্মমানের এসব পণ্য বাজার থেকে জব্দ করে ধ্বংস করতে নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। রায়ের পর ১২দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

শুক্রবার (২৪ মে) রাজধানীর শ্যামবাজার, সূত্রাপুর, দয়াগঞ্জ, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজার, সেগুনবাগিচা বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে পণ্য উঠিয়ে নিয়েছে। তবে অনেক দোকানি এসব পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধের ব্যাপারে কিছুই জানেন না।

সূত্রাপর বাজারের মেসার্স বিসমিল্লাহ স্টোরের মো. রিপন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখনো এসব পণ্য বিক্রি করছি। তবে পণ্যগুলোর উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, তারা বাজার থেকে এসব পণ্য উঠিয়ে নেবে। উঠিয়ে নিলেতো আর বিক্রি করব না

বিএসটিআই সূত্রে জানা যায়, আদালতের এ আদেশের পর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নয়টি পণ্যের লাইসেন্স বাতিল এবং ২৫টি পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন স্থগিত করে বিএসটিআই। একই সঙ্গে মানহীন পণ্য বিক্রি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি এবং ওজন যন্ত্রের ভেরিফিকেশন সনদ গ্রহণ না করার অপরাধে ১১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া নতুন করে ব্যবস্থা নেওয়া পণ্যসহ ৫২টির সবগুলো শনিবারের মধ্যেই বাজার থেকে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকেই তুলে নিতে হবে। পণ্য প্রত্যাহার না করলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে সংস্থাটি।

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে। এছাড়া লেয়ার মুরগি দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। পাশাপাশি প্রতি পিস কক  বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা। দেশি মুরগির দামও ৩০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। বর্তমানে প্রতি পিস দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে।  

গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি দরে। আর আদা ও রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকা দরে।

এছাড়া দুইদিন আগে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বেগুনের দাম কমেছে। বাজার ও মানভেদে ভালোমানের প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। যা গত দুইদিন আগেও ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। সে হিসাবে প্রতিকেজি বেগুনের দাম কমেছে ২০ টাকা।

এদিকে, গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগ সবজি। এখন বেগুন বাদে সবধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। মান ও বাজার ভেদে প্রতি কেজি আলু ২০ টাকা, কচুরলতি ৪০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, বরবটি ৫০, কাঁকরোল ৫০ টাকা, ধুনদুল ৫০ টাকা, এছাড়া ঝিঙা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে, শশা ৪০ টাকা, গাঁজর ৫০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, লেবু হালি মান ভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়া আর কাঁচা মরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

এছাড়া সজনে ডাটা ৫০ টাকা কেজি, লাউ প্রতি পিস ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাল শাক, পালং শাক ১০ থেকে ২০ টাকা, পুঁইশাক ও ডাটাশাক ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি ব্যবসায়ী কামাল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে এখন সবজির দাম কম রয়েছে। সরবরাহ বাড়ায় সব সবজি এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ক্রেতাদের মনে স্বস্তি ফিরেছে। গত কয়েকদিন আগে হঠাৎ মোকামে বেগুনের আমদানি কমে যাওয়ায় বেগুনের দাম বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। এছাড়া কয়েকদিন পর নতুন সবজি বাজারে আসলে দাম আরও কমবে।

আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর-২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, লবন ৩০ থেকে ৩৫, পোলাউর চাল ৯০ থেকে ৯৫। প্রতি কেজি খোলা আটা ২৭ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। স্থিতিশীল রয়েছে ডিমের দাম। শুধু ডিম বিক্রি করেন এমন ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহের মতো ডিমের ডজন বিক্রি করছেন ৮০-৮৫ টাকায়। মুদি দোকানে ও খুচরা বিক্রেতারা প্রতি পিস ডিম বিক্রি করছেন ৭-৮ টাকায়।

ডিমের পাশাপাশি অপরিবতির্ত বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম। রুই কাতলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০, আইড় ৮০০ টাকা, মেনি মাছ  ৫০০, বেলে মাছ প্রকার ভেদে ৭০০ টাকা, বাইন মাছ ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৮০০ টাকা, পুঁটি ২৫০ টাকা, পোয়া ৬০০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, পাবদা ৬০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ টাকা, শিং ৮০০, দেশি মাগুর ৬০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ১৮০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

মাছ ব্যবসায়ী সুমন পোদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক মাস ধরেই মাছের দাম চড়া। এবার মাছের দাম সহসা কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। কারণ এবার বৃষ্টি খুব একটা হয়নি। যদি বৃষ্টি অথবা বন্যা হয় তাহলে হয়তো মাছের দাম কিছুটা কমতে পারে। আর এ মৌসুমে সবসময়ই মাছের দাম চড়া থাকে।

এদিকে, বাজারগুলোতে নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী দেশি গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫২৫ টাকা এবং বিদেশি বা বোল্ডার গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫০০ টাকা ও মহিষের মাংস কেজি প্রতি ৪৮০ টাকায় বিক্রয়ের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে খাসির মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগীর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রির জন্য এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। পহেলা রমজান থেকে ২৬ রমজান পর্যন্ত মাংসের এ দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সকালে অভিযানের ভয়ে এ দামে বিক্রি হলেও বিকেলে ২০ থেকে ৭৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মাংস ব্যবসায়ী ইয়াকুব বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে কোনো মাংসের দাম বাড়েনি। বরং কমেছে মুরগির মাংসের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। এছাড়া দেশি ও কক মুরগির দাম কমেছে। তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৯
জিসিজি/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।