ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

ধানের ব্লাস্ট রোগে পুড়ছে কৃষকের ভাগ্য

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
ধানের ব্লাস্ট রোগে পুড়ছে কৃষকের ভাগ্য ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধান। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: ৩০ শতক জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন কৃষক নজরুল ইসলাম সন্টু। সবুজ সতেজ গাছ দেখে ভাল ফলন হওয়ার আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু শীষ গজানোর পর ধীরে ধীরে চিত্রটা পাল্টে যায়। একের পর এক মরতে থাকে ধানগাছের পাতা ও শীষ। এভাবেই এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুরো ক্ষেতের ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। 

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের হাসনা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম সন্টু  বলেন, চারা রোপণ থেকে শুরু করে শীষ গজানো পর্যন্ত কোনো সমস্যা ছিল না। শীষ গজানোর পরেই রোগ ধরে।

ধীরে ধীরে পাতা ও শীষ পুড়ে যায়। ১০/১২ দিনের ব্যবধানে ক্ষেতের সব ধানই নষ্ট গেছে।

তিনি বলেন, কৃষি অফিসারদের কথামতো প্রথমদিকে বালাইনাশক প্রয়োগ করেও কোনো ফল পাইনি।  

সন্টুর মতো একই এলাকার সিরাজ, সুলতান, শিবনাথপুর গ্রামের আব্দুল হাই, পাইকোশার রশিদ, রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মগাছা গ্রামের মেছের আলী, মোস্তাক হোসেন, উল্লাপাড়া উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চক নিহাল গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও আবু জাফরসহ শত শত কৃষকেরই অবস্থা একই।  

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ধানের পাতা ও শীষ পুড়ে যাওয়া এ রোগটির নাম ব্লাস্ট রোগ। এ রোগে প্রথমে পাতা পুড়ে যেতে শুরু করে। পরে ওই পাতাটি শীষের সংস্পর্শে এলে শীষও পুড়ে যায়। গত বছর এ রোগটি সিরাজগঞ্জের সদর, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া ও কামারখন্দ উপজেলায় ব্যাপকহারে ছিল। এ বছর তেমন ব্যাপক হারে দেখা দেয়নি। তবে কৃষকদের অসচেতনতা ও সময়মতো বালাইনাশক ব্যবহার না করায় বেশ কিছু এলাকায় রোগটি এবারও দেখা দিয়েছে।  

এদিকে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সরেজমিনে সদর উপজেলার সুবর্ণগাঁতী, হাসনা, রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মগাছা ও উল্লাপাড়ার চক নিহাল এলাকায় ঘুরে কথা হয় কৃষকদের সঙ্গে।

ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধান।  ছবি: বাংলানিউজক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকেরা জানান, ইরি-বোরো মৌসুমের আবাদ বছরের সবচেয়ে বড় আবাদ। এই সময়ে চাষ করা ধানের উপরই তাদের পুরো বছর চলে যায়। প্রতি বিঘা ধান চাষে তাদের ১০/১২ হাজার টাকা খরচ হয়। সুদে টাকা ধার নিয়েও কেউ কেউ ধান চাষ করেন। কিন্তু ভয়াবহ এই ব্লাস্ট রোগের কারণে পুরো ধান পুড়ে গিয়ে খড় টিকে রয়েছে জমিতে। ফলে অনেক কৃষকই এবার সর্বশান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন।  

কৃষকেরা আরও বলেন, গত বছরও এই রোগেই তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এ বছরও একই অবস্থা। কৃষি অফিসারদের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ করেও ধান পুড়ে যাওয়া ব্লাস্ট রোগ থেকে রক্ষা হয়নি।  

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ধানের এই রোগটির নাম ব্লাস্ট রোগ। আক্রান্ত বীজ থেকেই এ রোগটি ছড়িয়ে যায়। এছাড়াও বেশি ইউরিয়া প্রয়োগের কারণেও এ রোগ হতে পারে। ব্লাস্ট রোগ প্রথমে পাতায় ধরে, তখন সেটাকে লিফ ব্লাস্ট বলা হয়। ধীরে ধীরে এটা শীষে যায়। তবে একটি গাছে এ রোগ ধরলে একটি পাতা থেকে অপর পাতায় যায়। নির্দিষ্ট সময়ে বালাইনাশক দেয়া হলে এ রোগটা ছড়ায় না। এ বছর জেলার প্রায় ৪০/৪২ হেক্টর জমির ধান ব্লাস্ট রোগে পুড়ে গেছে।  

তিনি আরও বলেন, গত বছর এই রোগটা ব্যাপকহারে ছিল। এ বছর আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি আক্রান্ত বীজ ব্যবহার না করা এবং শীষ গজানোর আগেই ওষুধ প্রয়োগের জন্য। এ কারণে এবার রোগটা অতিমাত্রায় বিস্তার লাভ করেনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।