ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ব্যাংকিং

নতুন ব্যাংকের অনুমোদন পেতে ১ হাজার কোটি টাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৯
নতুন ব্যাংকের অনুমোদন পেতে ১ হাজার কোটি টাকা এনইসি সম্মেলন কক্ষে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠান

ঢাকা: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, পুঁজিবাজার অর্থনীতির আয়না। এটাকে শক্তিশালী করতে পারলে দেশের অর্থনীতি আরো এগিয়ে যাবে। কিন্তু আমরা পুঁজিবাজারকে সেই মাত্রায় এগিয়ে নিতে পারিনি। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত খেলাপি গ্রাহকরা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি নতুন ব্যাংক অনুমোদনে এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন লাগবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) শফিকুর রহমান পাটোয়ারী প্রমুখ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক বন্ধ হলেও গ্রাহকেরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য ১ হাজার কোটি টাকা লাগবে নতুন ব্যাংক অনুমোদন নিতে। এই টাকা সরকারের কাছে থাকবে, ব্যাংক বন্ধ হলেও যেন গ্রাহকেরা ক্ষতিতে না পড়েন। সরকার মুদ্রানীতি ও ফিসক্যাল পলিসির মাধ্যমে নানান ধরনের সহায়তা পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেবে। ব্যবসায়ীরা যাতে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে আগ্রহী হয় সেই জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে। পুঁজিবাজারের সার্বিক বিষয় জানতে এবং পর্যবেক্ষণে রাখতে প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।

বিমা প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল বলেন, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সব বিষয়ে বিমা হতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে বিমার আওতা এতটা সম্প্রসারিত হয়নি। দেশের সব মানুষকে বিমার সুবিধার আওতায় আনতে সরকার কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব নাগিরিককে বিমার আওতায় আনা হবে।

মন্ত্রি আরো জানান, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পদ্মাসেতুর মতো যে সব বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে সেগুলোর বিমা করা হয় না। এগুলো আমাদের সম্পদ। কিন্তু কোনো কারণে এই সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা পুষিয়ে নেয়ার উপায় নেই। তাই এগুলো বিমার আওতায় আনতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী।  

এছাড়া কৃষকের ফসলহানি হলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নাই। তাই আগামী অর্থবছর থেকেই সীমিত আকারে শস্য বিমা চালু করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে হাওর, পাহাড় ও চর অঞ্চলের কৃষকের এই সুবিধার আওতায় আনা হবে। ভারতে এই ধরনের বিমা আছে। আর শস্য বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করে সেই দেশের সরকার। এই ধরনের ব্যবস্থা আর কোন কোন দেশে আছে তা বিশ্লেষণ করে দেশে এসব সুবিধা চালু করতে আইডিআরএর-এর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী।
 
ব্যাংকখাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংকখাত একেবারে খারাপ করছে তা নয়। দীর্ঘদিন ধরে মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ব্যাংকখাতের অবস্থা খারাপ হলে এটা থাকতো না।
 
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল বলেন, দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ করে ৯ শতাংশ সরল সুদে ১২ বছরে ঋণ পরিশোধ সুযোগ পাবেন সৎ ব্যবসায়ীরা।

মন্ত্রী উল্লেখ করেন, ব্যবসায়ী দুই ধরনের, সাধু ও অসাধু। সাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ পাবেন। কিন্তু যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে স্বেচ্ছায় খেলাপি হয়েছেন তারা এই সুযোগ পাবেন না। বরং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

এরই মধ্যে স্বেচ্ছায় খেলাপিদের বিরুদ্ধে বিশেষ অডিট শুরু হয়ে গেছে। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

নতুন ব্যাংক অনুমোদনের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে নতুন কোনো ব্যাংক অনুমোদন পেতে হলে পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ১ হাজার কোটি টাকা।

এর ব্যাখ্যায় মন্ত্রী বলেন, আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি বিমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে বলেও মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটে কারোর উপরে করের বোঝা বাড়ানো হবে না, বরং কমবে। এর পরিবর্তে করের আওতা বাড়িয়ে আরো বেশি রাজস্ব আহরণ করতে হবে। আমাদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আগামী অর্থবছরে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে। কোন কোন খাত থেকে বাড়তি কর আদায় করা যায় সেই বিষয়ে এনবিআর কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৯
এমআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।