ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজারে বৈশাখী হাওয়ায় বেড়েছে ইলিশ-মাংসের দাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৯
বাজারে বৈশাখী হাওয়ায় বেড়েছে ইলিশ-মাংসের দাম ইলিশ মাছ-মাংস

ঢাকা: রাজধানীর বাজারগুলোতে লেগেছে বৈশাখী হাওয়া। ১৫ দিন পরই বাঙালির প্রিয় উৎসব পহেলা বৈশাখ। আর বৈশাখকে কেন্দ্র করে বেড়েছে ইলিশ ও মাংসের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ইলিশের দাম ৫০০ টাকা আর গরু ও খাসির মাংসের দাম  ৩০ টাকা বেড়েছে। দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে বেড়েছে সব ধরনের মুরগির দাম। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে সব ধরনের চালসহ মুদি পণ্যের দাম।

এদিকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া সবজির দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে যে সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সে সবজি এ সপ্তাহে এসে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়।

সে হিসেবে প্রতি কেজি সবজির দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারগুলোতে ইলিশ ও মাংসের চাহিদা বেড়েছে। তবে সরবরাহ বাড়েনি, ফলে দাম বেড়েছে। আর সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর নয়াবাজার, সূত্রাপুর, ধূপখোলামাঠ, দয়াগঞ্জ, শ্যামবাজার, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায় যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫২০ টাকায়। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৮৮০ টাকায় যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। সে হিসেবে গরু ও খাসির মাংসের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। আর ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। সে হিসাবে ব্রয়লার মুরগির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা।

ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে লেয়ার ও কক মুরগির। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২১০ থেকে ২২০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। কক মুরগির দাম অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে কেজি ৩০০ টাকায় পৌঁছে গেছে। এখন বাজারভেদে কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। এক সপ্তাহে কক মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, বৈশাখকে কেন্দ্র করে মানুষ মাছ-মাংস আগে কিনে সংরক্ষণ শুরু করে দিয়েছে। তাই হঠাৎ চাহিদা বেড়ে গেছে।  কিন্তু সরবরাহ বাড়েনি। এখন দেশি গরু ছাড়া অন্য কোনো গরু পাওয়া যায় না। ইলিশ ধরা নিষেধ থাকায় সরবরাহ কম। আবার যা পাওয়া যায় সাইজে ছোট আবার দামও বেশি।

মুরগি ব্যবসায়ী রাজন মোল্লা বলেন, প্রতি বছরই এসময় মুরগির দাম বাড়ে। তবে এবার অন্যবারের তুলনায় দাম অনেক বেশি বেড়েছে। বাজারে চাহিদার তুলনায় মুরগি সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। আমাদের ধারণা, শবে বরাতের পর মুরগির দাম কিছুটা কমতে পারে।

মুরগির দামের পাশাপাশি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ইলিশের দাম। গত সপ্তাহে ৭০০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি ইলিশ ১২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এক কেজি ওজনের এক হালি ইলিশ ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা, ৮০০ গ্রামের প্রতি হালি ইলিশ ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি হালি ইলিশ ২৫০০ থেকে ৩০০০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গত সপ্তাহের মতো সব থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া মাছ, দাম ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, টেংরা কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, চিতল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে দুই সপ্তাহ ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া সবজির দাম একটু কমেছে। তবে নতুন আসা সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া বরবটির দাম কমে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পটলের দাম কমে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হওয়া করলার দাম কমে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরবটি, পটলের মতো স্বস্তি মিলছে না ঢেঁড়স, কচুর লতি, লাউ, করলা, ফুলকপি, শিম, ধুন্দলের দামেও। ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি। শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস, ধুন্দল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে।

গত দুই সপ্তাহের মতো তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে, পাকা টমেটো, শশা ও গাজর। পেঁপে আগের মতোই ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, পাকা টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, গাজর পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় রয়েছে দেশি পেঁয়াজ। বাজারভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আগের মতোই ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

নয়াবাজারে আসা অমিত দাস বাংলানিউজকে বলেন, বৈশাখ না আসতেই বাজারগুলোতে বৈশাখী হাওয়া লেগেছে। আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য মাংস খাওয়া এখন হারাম হয়ে গেছে।  এখন সপ্তাহে একদিন ব্রয়লার মুরগি খাবো তারও উপায় নেই। প্রতি সপ্তাহেই দেখছি ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ছে। আর ইলিশ তো ধরাছোঁয়ার বাইরে। সবজি বলতে এখন আমাদের কাছে পেঁপে ও আলু।

অপরিবর্তিত রয়েছে চাল ও অন্যান্য মুদি পণ্যের দাম। বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাক, মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, চিনি আমদানিকৃত ৫০, ডাল ৪০ থেকে ৯০, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাও’র চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা।

বেড়েছে সব ধরনের ডিমের দাম। মুরগির ডিম প্রতি ডজনে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা। হাঁসের ডিম ১৫৫ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ১৭০ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া খোলা সোয়াবিন তেল ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  আর ৫ লিটারের প্রতি গ্যালনে রূপচাঁদা  ৫০০ টাকা, পুষ্টি ৪৭০ টাকা, তীর ৪৯০ টাকা, ফ্রেস ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা সরিষার তেল প্রতি কেজি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৯ 
জিসিজি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।