ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

সবজির বাজারে আগুন, মাছ-মাংসের দামও চড়া

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
সবজির বাজারে আগুন, মাছ-মাংসের দামও চড়া বাজারদর। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর বাজারগুলোতে আলু ও পেঁপে ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম ৫০ টাকার বেশি রাখছেন বিক্রেতারা। আর চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস, তেল ও ডিম। ২শ’ টাকার নিচে মিলছে না কোনো ধরনের মাছ। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মুরগির দাম প্রতিকেজি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজি, মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে সব ধরনের চালসহ মুদিপণ্যের দাম।

দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় জীবনযাপনের ব্যয় মিটাতে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত আয়ের নিন্ম ও মধ্যবিত্তরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন কয়েকদিন আগে শিলাবৃষ্টির জন্য সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। তাই দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজির। আর শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে।  

ক্রেতাদের অভিযোগ আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনায় আমাদের ৭০ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হয়। সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা ভালো হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
 
শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর সুত্রাপুর, শ্যামবাজার, নয়াবাজার, দয়াগঞ্জ,  যাত্রাবাড়ী, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ বেশকয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গত এক মাস ধরে বাজারে নতুন সবজি পাওয়া গেলও চলতি সপ্তাহে এসে দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজিতে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা। বাজারে আসা নতুন সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সজনে। মানভেদে প্রতি কেজি সজনে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। এর পরে রয়েছে বরবটি। প্রতি কেজি বরবটি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। দামের দিক থেকে এর পরেই রয়েছে পটল, করলা ও উস্তা। বাজারভেদে প্রতি কেজি পটল, করলা ও উস্তা  বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। এছাড়া ঢেঁড়স, কচুর লতি, লাউ, ঝিঙ্গা, ধুন্দুল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।

সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়ার তালিকায় থাকা শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। বেগুন  ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ টাকা। শিমের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হতো ৪০ টাকা দরে।

চড়া দামের বাজারে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে আলু, পেঁপে, ফুলকপি, বাধাঁকপি, পাকা টমেটো ও গাজর। আলু আগের মতোই ১৫ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, পাকা টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর পাওয়া যাচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ টাকা, বাধাঁকপি ৩০ টাকা। প্রতি আটি লাল শাক, পালং শাক ১৫ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা। প্রতি কেজি পুঁই শাক ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে বেশ কিছুদিন স্বস্তি দেওয়া পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করেই গত সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে যায়।  বাজারভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। তবে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আগের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। বাজার ও মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কমনওয়েলথ সচিবালয়ের সাবেক প্রধান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনায় বাংলাদেশে নিম্ন ও মধ্যবর্তী ভোক্তাদের ভোগ্যপণ্য কিনতে ৭০ শতাংশ বেশি মূল্য গুণতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশন যদি সঠিকভাবে কাজ করে বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের পণ্যমূল্যের ব্যবধান কমাতে পারতো তাহলে দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্যের সংখ্যা যেহারে কমছে সেটা আরও ত্বরান্বিত হতো।

যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে আলু, পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাবে না। কারণ শীতের সবজি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এখন যে ফুলকপি, পাতাকপি পাওয়া যাচ্ছে, এর প্রতি ক্রেতাদের খুব একটা আগ্রহ নেই। বাজারে এখন নতুন করে এসেছে সাজনা, ঝিঙ্গা, পটল, ঢেঁড়স, বরবটি। নতুন আসায় এসব সবজির দাম এখন বাড়তি। তাছাড়া গত কয়েকদিনের শিলাবৃষ্টির কারণেও সবজির অনেক ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদ কমায় সরবরাহ কমেছে ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে।

গত সপ্তাহের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গরু, খাসি ও মুরগির মাংস। বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। এছাড়া লাল লেয়ার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা।  

সপ্তাহের ব্যবধানে গরু ও খাসির মাংসের দাম না বাড়লেও, এখন কোনো বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু কিছু বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫২০ টাকা কেজি। খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

সেগুনবাগিচায় মুরগি কিনতে আসা সজিব বেপারী বলেন, বাজারের ভাও বোঝা বড় কষ্টের কাজ। আজ একরকম তো কাল আরেক রকম। কোন কিছুর দাম আর কমে না। যে পণ্যের দাম একবার বাড়ে সেটা শুধু বাড়তেই থাকে। এতে করে  আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্তরা খুব অস্তিতে আছে। সব ধরনের মাছ ও সবজির দাম অনেক বেশি। এভাবে দাম বাড়লে আমাদের মতো মানুষের জীবন চালানো কষ্টকর।

তিনি বলেন, আমরা গরু, খাসির মাংস খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। সাধারণত শুক্রবারে হলে মাংস খাই। কিন্তু এখন অবস্থা যা দেখছি সামনে হয়তো মুরগির মাংস খাওয়াও ছেড়ে দিতে হবে। কারণ প্রতিদিন বাড়ছে মুরগির মাংসের দাম।

মুরগি ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই সব ধরনের মুরগির দাম বাড়ছে। জানুয়ারিতে যে ব্রয়লার মুরগি ১২৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, গত সপ্তাহে তা ১৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এখন বয়লার মুরগি ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এভাবে সব ধরনের মুরগির দাম বেড়েছে। ফার্ম থেকে মুরগির সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে।

এদিকে মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া। আগের সপ্তাহের মতো তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং চাষের ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিতল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাছের দামের বিষয়ে যাত্রাবাড়ী আড়তের ব্যবসায়ী আনিস বেপারী বাংলনিউজকে জানান, মাছের দাম অনেকটাই নির্ভর করে আড়তে সরবরাহের ওপর। মাছের উৎপাদন কম হওয়ায় কয়েক মাস ধরে তুলনামূলক মাছ কম আসছে। যে কারণে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি। এছাড়া প্রতি বছর এসময়ে মাছ সরবরাহ কম হয়। কারণ খাল বিল পুকুর সব শুকিয়ে যায়।

অপরিবর্তিত রয়েছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি নাজির ৫৮  থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।  

এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, চিনি আমদানিকৃত ৫০, ডাল ৪০ থেকে ৯০, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাউর চাল ৯০ থেকে ৯৫। তবে বেড়েছে সবধরনের ডিমের দাম। মুরগির ডিম প্রতি ডজনে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা। হাঁসের ডিম ১৫৫ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ১৭০ টাকা ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে।  

খোলা সোয়াবিন তেল ৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর ৫ লিটারের প্রতি গ্যালনে রূপচাঁদা  ৫০০ টাকা, পুষ্টি ৪৭০ টাকা, তীর ৪৯০ টাকা, ফ্রেস ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা সরিষার তেল প্রতি কেজি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।