ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঋণ খেলাপিদের ধরবে ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
ঋণ খেলাপিদের ধরবে ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’ প্রাক-বাজেট আলোচনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: কোনোভাবেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তে দেওয়া হবে না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হবে। আসছে বাজেটে খেলাপি ঋণ আদায়ে ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে নীতিগত বিষয়গুলোর ওপর মতবিনিময়ের জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বসেন অর্থমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

 

সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আরো বলেন, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বেসরকারিভাবে পরিচালনা করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা খেলাপি ঋণ আদায় করে যাবো। যেগুলো স্বাভাবিকভাবে আদায় করা যাবে না, সেগুলো আদায় করার জন্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ কোম্পানি কোনো শক্তি খাটিয়ে নয়, নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকেই ঋণ আদায় করবে। ঋণ খেলাপিদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

এমপিও প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, সাড়ে নয় হাজার আবেদন থেকে ‘নির্ণায়ক মান’ পূরণ করতে পেরেছে এমন দুই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাসিক বেতন দেওয়ার (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডারের-এমপিও) যোগ্য বলে বেছে নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ সময় পরে অবশেষে খুলতে যাচ্ছে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির বন্ধ দুয়ার। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে আগামী তিন অর্থবছরে ধাপে ধাপে এমপিওভুক্ত করা হবে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট থেকেই এটা চালু করা হবে।
 
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিওভূক্ত করতে পারবো না। তবে আগামী তিন বছরের মধ্যে যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এর আওতায় আসবে। কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৪০ জন শিক্ষক অথচ ৩২ জন ছাত্র। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে পারবো না। আগামী বছর থেকে এমপিওভূক্তির কাজ শুরু করতে পারবো।
 
দীর্ঘ তিনঘণ্টা আলোচনা শেষে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, আগামী বাজেট হবে সংক্ষিপ্ত, কিন্তু টাকার অংকে বড় হবে। বাজেট সবার জন্য হবে। সংক্ষিপ্ত বাজেট হলেও সবার কথা ঠাঁই পাবে বাজেটে। সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি বাজেটে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রতিটি পরিবারের যেন একজন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় সেই ব্যবস্থা করা হবে। এটা যে কোনো কাজ হতে পারে, ছোট ছোট ব্যবসাও হতে পারে। একটি পরিবারের একজনের আয়ের ব্যবস্থা হলে সামাজিক নিরাপত্তা সুরক্ষিত হবে।
 
মন্ত্রী বলেন, ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবে ঠিকই, কিন্তু সেটা স্বল্প পরিসরে। বিশ্বের কোথাও এমন কি ভারতেও এক সঙ্গে বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য আমরা ধীরে ধীরে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করবো। ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে যদি সারাদেশে ৫০ হাজার মেশিন বসানো হয়, তাহলে সেই মেশিন পরিচালনা করতে গিয়ে জনবল দরকার হবে। এভাবেই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
 
আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল বলেন,  আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’। বাজেটেও এ বিষয় গুরুত্ব পাবে। গ্রামে সব ব্যবস্থা করে দেবো। অবকাঠামো উন্নয়নের সব ছোঁয়া লাগবে গ্রামে। গ্রামে এখন ফোর-জি আছে, কিছু দিন পরে দরকার হলে ফাইভ-জি চলে যাবে। গ্রামে বিদ্যুৎ চলে গেছে, আমরা অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন করবো। বিচার পেতে গ্রামের মানুষকে ঢাকায় আসতে হবে না, সেই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
 
আমরা স্বাস্থ্য বিমা চালু করবো। আমাদের দেশে স্বাস্থ্য বিমা নাই। এক্সপোর্টকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। দেশীয় তৈরি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। আমাদের নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে। সারা বিশ্বে পোশাকের বিশাল বাজার। অথচ ১৫ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছি, এটা বাড়াতে হবে, যোগ করেন মন্ত্রী।
 
বাজেটে ট্যাক্সরেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, করের আওতা বাড়ানো হবে, কিন্তু ট্যাক্স রেট কমানো হবে। আমরা কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি। দেশে উন্নয়নমূলক নানা কাজ হচ্ছে। আমাদের রেভিনিউ চাহিদা বাড়ছে। এটা পূরণ করতে যোগ্যদের কর দিতে হবে। বর্তমান সরকার মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বাজেটের আকারও বাড়বে, তবে কতো বাড়বে এখন বলা যাবে না।
 
এসময় উপস্থিত ছিলেন- সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
এমআইএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।