ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ফ্ল্যাট  

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৯
মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ফ্ল্যাট   রিহ্যাব ফেয়ারে একটি স্টলের বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন ক্রেতা/ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: জমি কিনে বাড়ি বানানো ঝামেলা, যান্ত্রিক জীবনে এতো সময় কোথায়! তাই জমি নয়, ফ্ল্যাট কিনতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম খান। তার সাফ কথা, জমি কিনে বাড়ি বানানো মধ্যবিত্তের জন্য সম্ভব নয়। তাই মনের মতো জায়গায় ফ্ল্যাট পেলে সামর্থ্যের মধ্যে হলেই বুকিং দিতে চাই। 

শুধু আমিনুল নন, ফ্ল্যাট কেনার প্রতিই ঝুঁকছেন ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অধিকাংশ মানুষ। তবে মেলায় আসা লোকজন বলছেন, ফ্ল্যাটের যে দাম চাওয়া হচ্ছে, তা এখনও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে।

 

আর আবাসন কোম্পানির কর্মকর্তাদের বক্তব্য, সবকিছুর দাম বাড়ায় খরচটা বেশি। তাই ফ্ল্যাটের দামও বেশি পড়ছে। আবাসন স্টলের কর্তাব্যক্তিরা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে ফ্ল্যাটের প্ল্যানসহ, রেডি ফ্ল্যাটের তালিকা ও ফ্ল্যাটের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার কথা ক্রেতাদের জানাচ্ছেন।  

রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের শীতকালীন আবাসন মেলা চলছে এখন। বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলায় এক ছাদের নিচেই বসেছেন আবাসন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় দুই শতাধিক কোম্পানি।  

বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ঋণসুবিধাসহ নানা অফার থাকায় মেলায় মধ্যবিত্তদের ভিড়ই বেশি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টাতেও কোনো কমতি নেই কোম্পানিগুলোর।  

বেসরকারি একটি কোম্পানিতে কর্মরত এহসানুল হক তার স্ত্রী মারিয়াকে নিয়ে মেলায় এসেছেন। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের বুকিং দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু মেলায় এসে তার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। উত্তরার একটি লোকেশনে একটি কোম্পানির ১৮২৬ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম পড়ছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এখানে কোনো ফ্ল্যাটেরই দাম বর্গফুট প্রতি ৯ হাজারের নিচে নেই। যার অর্থ দাঁড়ায় ১৪০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের দাম পড়বে প্রায় দেড় কোটি টাকার মতো। সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন খরচ তো রয়েছেই। মেলা ঘুরে দেখার পর তার বক্তব্য, এতো টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা তাদের সামর্থ্যের বাইরে।  

রাজধানীর মিরপুর থেকে এসেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জাবেদ। তার কর্মস্থল বাড্ডা এলাকায় হওয়ায় বাড্ডা এলাকার ফ্ল্যাট খুঁজছিলেন। উত্তর বাড্ডার গুপিপাড়ার একটি প্রকল্পে ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী তিনি। কিন্তু ফ্ল্যাটের দাম শোনার পর আশা ছেড়ে দেন জাবেদ। তিনি বলেন, ওই প্রকল্পে ১২শ বর্গফুটের দামই চাওয়াহচ্ছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার উপরে। প্রতি বর্গফুট ৭ হাজার টাকার বেশি। এছাড়া রেজিস্ট্রেশন ফি তো আছেই।  

ফ্ল্যাটের দাম শোনার পরও আশা ছাড়েননি। ঋণের খোঁজ-খবর নিতে তিনি মেলায় একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বুথে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ঘুরে এসে তিনি জানান, যে বেতন পান, সেই অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিলে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। মাসে যা বেতন পান কিস্তিতেই তার ৯০ শতাংশ চলে যাবে। এই ঋণের বোঝা টানতে হবে ২০ বছর ধরে।  

আবাসন বুথের সংশ্লিষ্টরা জানান, মেলায় তিন রুমের ফ্ল্যাটের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। এলাকাভেদে এ ধরনের ফ্ল্যাটের দাম হাঁকা হচ্ছে ১ কোটি ২০ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত।  

রিয়েল এস্টেট কোম্পানি বিডি প্রপার্টির কর্মকর্তা নাসরিন জাহান বলেন, ৯০ লাখ থেকে শুরু করে ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট রয়েছে আমাদের।

সম্ভাব্য ক্রেতাদের দিক থেকে এবছর ভালো সাড়া মিলছে বলেও জানান তিনি। একই সুরে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের কর্মকর্তা শেখ সাব্বির বলেন, সাড়া মোটামুটি ভালো। তবে লোকজন এখনও বুকিং দিচ্ছেন না।         

মেলায় আসা অন্য সুপরিচিত আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর ফ্ল্যাটের দামও কমবেশি এমনই।  

আবাসন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানও মেলায় স্টল নিয়ে বসেছে। ফ্ল্যাট কেনার জন্য তারা সাড়ে ৮ থেকে সাড়ে ১০ শতাংশ সুদের মধ্যে ঋণ দিচ্ছেন। মেলায় সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ সুদে হোম লোন দিচ্ছে সাউথ-ইস্ট ব্যাংক।  
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) মেলা শেষ হবে বলে জানান রিহ্যাবের কর্মকর্তারা।       

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৯
টিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।