ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

ভৌগোলিক নির্দেশক সনদ পাচ্ছে চাঁপাইয়ের ‘খিরসাপাত’

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৯
ভৌগোলিক নির্দেশক সনদ পাচ্ছে চাঁপাইয়ের ‘খিরসাপাত’ খিরসাপাত জাতের আম

ঢাকা: বাংলার জামদানি ও সুস্বাধু ইলিশের পর ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত জাতের আম।

ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাতের অনুকূলে নিবন্ধন সনদ প্রদান করতে যাচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর। ‍

দুই বছরে আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং সেখানকার আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র খিরসাপাত আমের জন্য যৌথভাবে জিআই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল।

এরপর অধিদফতর গেজেট প্রকাশ করে। তবে অন্য কোনো দেশ বা স্থান থেকে কেউ ভৌগোলিক পণ্যের জন্য আপত্তি তোলেনি খিরসাপাত আমের জন্য।

পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদফতর জানায়, আবেদনের পর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আইনানুগ কার্যক্রম শেষে জিআই সনদ দেওয়া করা হয়। ভৌগোলিক নিবন্ধন সম্পন্নের ফলে বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও গুণগত মানসম্পন্ন এই আম বাজারজাতকরণের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে বাণিজ্যিকসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাবে। ফলে দেশ-বিদেশের ক্রেতারা এখন সহজেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই আম শনাক্ত করতে পারবেন।

রোববার (২৭ জানুয়ারি) শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে খিরসাপাত আমের জিআই নিবন্ধন সনদ দেওয়া হবে বলে জানান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদফতরের রেজিস্ট্রার মো. সানোয়ার হোসেন।

এ সময় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূন এবং প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, অধিদফতরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন।

জিআই নিবন্ধন পেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিতি ও স্বীকৃতি লাভ করবে খিরসাপাত।  

সানোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমগুলো প্রসিদ্ধ। কিন্তু কোনো ব্র্যান্ডিং ছিল না। আমরা ফজলী আম চিনি কিন্তু খিরসাপাত চিনি না। ফলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অন্য জেলার আম নিয়ে এসে খিরসাপাত বলে অধিক মূল্যে বাজারে চালিয়ে দেয়। এতে ক্রেতা ভালো আম পায় না, মূল্যও বেশি দিতে হয়। আর আম চাষিরাও বেশি মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।

তিনি বলেন, জিআই হলো ‘ন্যাচারাল কোয়ালিটি পণ্য’। জিআই সনদ পেলে বাজারজাতের সময় আমের গায়ে ট্যাগ লাগানো থাকবে। ক্রেতারাও আমটি চিনতে পারবে। এতে অন্য আম আর বাজারে চালিয়ে দিতে পারবে না। চাষিরাও মূল্য পাবেন, আমের রাজ্যে কর্মসংস্থান বাড়বে। এভাবে খিরসাপাত আমের একটি ব্র্যান্ডিং হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে দেশের আমের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ হবে।

তৃতীয় পণ্য হিসেবে খিরসাপাত জিআই সনদ পেতে যাচ্ছে বলে জানান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদফতরের রেজিস্ট্রার।

মাঝারি আকারের খিরসাপাত আম অনেকটা ডিম্বাকৃতির। পাকা আমের রং সামান্য হলদে এবং শাস হুলদাভাব হয়ে থাকে। আশবিহীন এই আম আকর্ষণীয় গন্ধ ও রসে ভরা। আমের মৌসুমেই বাজারে এই জাতের পাকা ফল পাওয়া যায়।

তবে বাজারে এই জাতের আম হিমসাগর নামেও পরিচিত। এ বিষয়ে অধিদফতরের রেজিস্ট্রার বলেন, দুই আমের মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। হিমসাগর আমটি পাকলেও একটু কালচে ভাব থাকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জিআই সনদ পাওয়ার মধ্য দিয়ে ব্র্যান্ডিং হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি সম্পদে পরিণত হবে। পরবর্তীতে এই পরিচিতি দিয়ে মেধাসত্ত্ব পাওয়া যাবে। এতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে লাভবান হবে খিরসাপাত আম।

বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও রাজশাহী, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর ও কিছু পরিমাণে দিনাজপুরে খিরসাপাত আমের চাষ হয়। কেবল চাঁপাইনবাবগঞ্জেই ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে প্রতিবছর ৩৫ হাজার মেট্রিক টন খিরসাপাত উৎপদন হয় বলে জানান শফিকুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৯
এমআইএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।