ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

স্থিতিশীল বাজারদর, ক্রেতা বুঝে দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৮
স্থিতিশীল বাজারদর, ক্রেতা বুঝে দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা রাজধানীর কাঁচাবাজার | ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: চলতি মাসের শুরু থেকে স্থিতিশীল থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তবে গত সপ্তাহ থেকে পণ্যের দাম ৫/১০ টাকা হারে ওঠানামা শুরু হয়। এ সপ্তাহে ব্যবসায়ীরা কিছুটা কৌশলী হয়ে ক্রেতা বুঝে বাড়তি দাম হাঁকার চেষ্টা করছেন। যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি সেসব পণ্যেই বাড়তি দাম রাখতে চাইছেন তারা।

শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বউবাজার এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

শীতকালীন সবজিতে ভরপুর এখন রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো।

শীতের সবজির কল্যাণে বাজারে সবজির দাম কমে স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। এদিকে দেশে বড় বড় উৎসবগুলো (ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয়) না থাকলে মাছ-মাংসের বাজারে বাড়তি দামের ঝড় থাকে না। তাছাড়া সঠিক সময়ে ইলিশ ধরার কারণে বাজারেও ইলিশের ঘাটতি নেই। তাই দামও রয়েছে সহনীয় বা ক্রেতাদের নাগালে। এসব মিলিয়ে বাজার স্থিতিশীল থাকলেও অতিরিক্ত দামের পাঁয়তারা থেকে ব্যবসায়ীদের ভিন্ন ভিন্ন ক্রেতার কাছে ভিন্ন ভিন্ন দাম চাইতে দেখা গেছে।

বাজারে প্রতিকেজি টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৬০ টাকা। ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে শসা ও কাঁচা মরিচ। এছাড়া প্রতিকেজি গাজর ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০, মূলা ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, কাকরোল ৩৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রাজধানীতে মাছের বাজার | ছবি: জি এম মুজিবুরবাজারে প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি ২০ থেকে ৩০ টাকায়, লাউ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় এবং জালি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি আঁটি কলমি শাক, লাল শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, লাউ শাক ২০ থেকে ২৫ টাকায়, পালং শাক,  পুঁই শাক ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।  

মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকার কাঁচাবাজারে শিমুল নামে এক সরকারি কর্মকর্তা এসেছিলেন সাপ্তাহিক বাজার করতে। দরদামের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম গত সপ্তাহ থেকে প্রায় ১০ টাকা বেশি। ওদের জিজ্ঞাসা করলে বলে, পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে। কেন বাড়াইছে তা তারা জানে না। আমার মনে হয়, চালান কম দেখিয়ে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। ব্যবসায়ীদের আফসোস করে বলতে শুনেছি যে, নির্বাচন এসেছে হয়তো দাম বাড়বে। কিন্তু বাড়েনি। এ কারণে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর চেষ্টায় আছে। আর এক্ষেত্রে তো কোনো মনিটরিং নেই বা দাম বেশি রাখলে তো ক্রেতাদের করারও কিছু থাকে না। তাই এ কাজ ওরা সহজেই করতে পারে।

বাজারদর সম্পর্কে জানতে চাইলে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় বাজার করতে আসা ফয়সাল বাংলানিউজকে বলেন, দাম একই আছে। গত সপ্তাহে যে দামে নিয়েছি এ সপ্তাহে দামাদামি করে আরও দু-তিন টাকা কমে পেয়েছি সবজি। তবে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর চেষ্টায় আছে বলে মনে হলো। কারণ, আমাকে যে দাম বলছে আমার পাশেই দাঁড়ানো আরেকজকে ৫ টাকা বাড়িয়ে বলছে। এটা দাম বাড়ার একটা লক্ষণ।  

এদিকে দাম বেড়েছে পুরনো চালের। বিরি-২৮ নতুন চাল আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম ৬ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে পুরনো চাউলে। এছাড়া অন্যান্য চাল, ডাল ও তেলের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে।  

প্রতি কেজি সিরাজ মিনিকেট ও মিনিকেট চাল ৫৭ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। স্বর্ণ চাল ৩৮, মোটা চাল ৩৫, সাকি-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৫০ টাকায় আর ৪০ থেকে ৪৮ টাকা আমিন-২৮। প্রতিকেজি মসুর ডাল (দেশি) ১০০ টাকায়, মসুর ডাল মোটা ৭০ টাকায়, মুগ ডাল ১২০ টাকায়, ভোজ্যতেল প্রতি লিটার খোলা ৯০ টাকায় ও  বোতলজাত ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  
চারের আড়ৎ | ছবি: জি এম মুজিবুরএ বিষয়ে আগারগাঁও এলাকায় শ্যাম রবিন নামের এক চাল ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, আসলে দাম বাড়াটা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছে। কোনকিছুর চাহিদা বাজারে বাড়লেই আমরা নিজেরাই সর্বনিম্ন এক-দুই দিনের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দেই। পাইকারি ব্যবসায়ীরাও একই কাজ করে। ২৮ জাতের পুরান চাল ভাতে বাড়ে বেশি বলে ক্রেতারা বেশ নেয়। তাই আমরাও দাম বাড়ায় রাখি। পাইকারি ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়ায় রাখে। এছাড়া আর কোনো কারণ নাই।  

আবার দাম কমেছে বাজারে আসা মৌসুমের নতুন আলু। কেজি প্রতি ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা গত সপ্তাহে ৬০, এর আগের সপ্তাহে ৮০ থেকে ৯০ এবং শুরুতে ১২০ টাকা কেজিতে পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। তাছাড়া  প্রতিকেজি আদা ১৪০ টাকায়, রসুন ভারতীয় প্রতিকেজি ৫০ টাকায় ও দেশি রসুন ৮০ টাকা, পেঁয়াজ (দেশি) ৪০ টাকা, ভারতীয় ৩০ টাকা এবং পুরানো  আলু ৩০ টাকা কেজি দরে পাওয়া।

মাছের বাজারে ক্রেতা বুঝে দাম হাকানোর প্রবণতা বরাবরই বেশি। তবে মূল দাম দীর্ঘ এক মাস যাবত স্থিতিশীল আছে এবং সহনীয় পর্যায়ে আছে। এর প্রধান কারণ ইলিশ বলে মনে করেন মাছ ব্যবসায়ীরা। বউবাজার এলাকার মাছ ব্যবসায়ী ইমন বলেন, ইলিশের চালান বেশি তাই দাম কম। আর এই একটা মাছের প্রভাবে অন্যান্য মাছের দাম কম আছে। নাইলে এখনকার চেয়ে দাম আরও ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি থাকতো।

বাজারে প্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জোড়া ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের হালি ১০০০ থেকে ১১৫০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিজোড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে মাছের আকারভেদে প্রতি কেজি টেংরা মাছ ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, শিং ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, পাঙ্গাস ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কৈ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, কাচকি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মলা ২৭০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, নলা ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, রুই ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।  

তবে মাংসের বাজারে নেই অতিরিক্ত দাম রাখার চেষ্টা। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়, গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়, খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৮
এমএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।