ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলাবান্ধায় এখনো স্বাভাবিক হয়নি বাণিজ্যিক কার্যক্রম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৮
বাংলাবান্ধায় এখনো স্বাভাবিক হয়নি বাণিজ্যিক কার্যক্রম

পঞ্চগড়: বাংলাদেশের একমাত্র চর্তুদেশীয় স্থলবন্দর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা। এ বন্দরে বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটন খাতেও বিপুল রাজস্ব আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। 

ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগের এ স্থলবন্দরটি বর্তমানে সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ফলে বন্ধ রয়েছে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

তবে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা খোলা আছে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) থেকে সব রকম পণ্য আমদানি রফতানি বন্ধ রয়েছে।

১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর নেপালের সঙ্গে এ বন্দর দিয়ে প্রথম বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু হয়। এর পর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় ভারতের সঙ্গে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ভূটানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।  

পরবর্তীতে লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার, বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেড এবং আমদানি রফতানিকারকদের দ্বন্দ্বের কারণে গত বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) থেকে সব রকম পণ্য আমদানি রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে।  

এর আগে এ বন্দর দিয়ে সরকার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করলেও এখন বন্ধের কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সংকট নিরসনে গত বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসনের আহ্বানে জরুরি বৈঠক হলেও চালু হয়নি বন্দরের কার্যক্রম।

জানা যায়, গত সোমবার (১৪ মে) ‘এটিআই লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে আমদানিকৃত পণ্য উঠানামার জন্য লেবার হ্যান্ডেলিংয়ের ইজারা দেওয়া হয়। এরপর থেকে লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এটিআই, বন্দর পরিচালনা কোম্পানি বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেড এবং আমদানি রফতানিকারকদের সঙ্গে বন্দরের কুলি শ্রমিকদের পণ্য উঠানামার দর নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

সর্বশেষ একাধিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এর কাছে বকেয়া পোর্ট চার্জসহ রাজস্ব আদায় এবং কুলি শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা আদায় নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং ভুটান থেকে আমদানি করা পাথর বোঝাই ১০৩টি ট্রাক বন্দরের সরকারি চার্জ (ট্যারিফ) পরিশোধ না করে গেট ভেঙে পণ্য খালাস করায় গত বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বন্দর কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য আমদানি রফতানি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে।  

জানা যায়, ভুটানের চালকদের কার পাশ আটকিয়ে রাখার কারণে সেখানকার চালকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং বন্দর সংরক্ষিত এলাকায় তারা উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পরবর্তী এই কার পাশের জন্য চালকরা বন্দর কর্তৃপক্ষদের হুমকি ও হামলার চেষ্টা চালায়। পরে ভুটানের ট্রাক চালকরা জানতে পারে কার পাশ সিঅ্যান্ডএফদের কাছে রয়েছে। পরে সিঅ্যান্ডএফদের সহযোগিতায় বন্দরের মূল ফটক ভেঙে তারা গাড়ি নিয়ে বন্দর এরিয়া থেকে বের হয়ে যায়।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ গোলাম আজম। জেলা প্রশাসক মোহম্মদ জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমদানি রফতানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা উপস্থিত না থাকায় বন্দরটি চালুর সিদ্ধান্ত ছাড়াই রাতে বৈঠকটি মূলতবি করা হয়। পরে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।  

আমদানিকারকরা বাংলানিউজকে জানান, কয়েক মাস ধরে আমদানি রফতানি কার্যক্রম বার বার ব্যাহত হচ্ছে। ইজারাদার প্রতিষ্ঠান এবং কুলি শ্রমিকদের দ্বন্দ্বের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মূলত সিঅ্যান্ডএফদের একাংশ বন্দরটি অচল করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।  

বন্দরের সৃষ্ট সমস্যার বিষয়ে স্থলবন্দরের উপ-কমিশনার হাফিজুল ইসলাম বাংলানিউজেকে জানান, সমস্যা নিরসনে আমদানিকারকদের নিয়ে গত বুধবার (২৯ আগস্ট) আলোচনা সভা করা হয়েছিল। আশা করেছিলাম সমস্যা নিরসনে সবাই এগিয়ে আসবে কিন্তু তা হয়নি।

আমদানি রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবলা বাংলানিউজকে জানান, এটিআই লিমিটেড লেবার হ্যান্ডেলিং চুক্তি মোতাবেক কাজ করছে। সরকারি নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্টের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হলে কুলি ও সিঅ্যান্ডএফের একাংশ এই পরিবশেটিকে নষ্ট করার জন্য নানান ষড়যন্ত্র শুরু করে। বন্দরে সৃষ্টি হয় ত্রীমুখি দ্বন্দ্ব। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের আহ্বানে একাধিকবার বৈঠক করে কুলি শ্রমিকের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এর পর কয়েকজন এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ এর কাছে বন্দরের বকেয়া পাওনা থাকায় গত বৃহস্পতিবার নতুন আমদানি করা গাড়িগুলো থেকে নগদ টাকায় পণ্য খালাসের কথা বললে সিঅ্যান্ডএফ ও এজেন্টরা গাড়িগুলো খালাস না করে কার পাশ আটকিয়ে রেখে বন্দরের বকেয়া বিল পরিশোধ না করে মূল ফটক ভাঙাসহ নানা ষড়যন্ত্র করে।  

বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের সহকারী ম্যানেজার কাজী আল তারিফ বাংলানিউজকে জানান, বন্দরের সমস্যা সৃষ্টি করেছে সিঅ্যান্ডএফরা। বন্দরের আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ, বন্দর কেপিআই এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, বন্দরের গেট ভাঙচুর, অফিস ভাঙচুর, বন্দরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সংকট সমাধানে বৃহস্পতিবার বিকেলে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ, এটিআই লিমিটেড উপস্থিত থাকলেও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও শ্রমিকরা কেউ উপস্থিত ছিলেন না।  

তিনি আরো জানান, আগে লেবার হ্যান্ডেলিং ইজারা না থাকায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বন্দরে হামলা, অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে সব পক্ষকে নিয়ে নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বন্দরটি দ্রুত সচল করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।