ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

সীমান্তবর্তী হাটে কমেছে গরু আমদানি

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩২ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৮
সীমান্তবর্তী হাটে কমেছে গরু আমদানি এখনও জমে ওঠেনি দুরাকুটি পশুর হাট। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: এখনও জমে ওঠেনি ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা লালমনিরহাটের দুরাকুটি পশুর হাট। আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট বিকিকিনির আশা থাকলেও তাতে গুড়ে বালি অবস্থা হয়েছে এ হাটের ইজারাদারের।

গরু ও মহিষসহ কোরবানির বিভিন্ন পশু বেচা-কেনায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী দুরাকুটি হাটের নাম ডাক রয়েছে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বড় বড় শহরের পশু বেপারীদের কাছে। সাধারণ প্রতি বছর কোরবানির ঈদের মাস দুই আগে থেকে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার দুপুর না হতেই পশুতে ভরে উঠতো এ হাট।

দুপুরে শুরু হলেও বিকিকিনি চলতো রাত ৯টা পর্যন্ত। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বেপারীরা ট্রাকে করে সারাদেশের বাজারে নিয়ে যেতেন কোরবানির পশু। দূরের বেপারীরা কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে দুই মাস আগেই পশু কিনতে শুরু করেন। সে অনুযায়ী ভড়া হাট বসার কথা জুলাই মাসে। কিন্তু এ বছর চিত্রটা একদম ভিন্ন। হাটে দৃশ্যমান তেমন কোনো গরুই আসছে না।

দুরাকুটি হাটের ইজারাদার নুরল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ৬০ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী এ পশুর হাটটি। গত বছর এমন সময় প্রতি হাটে আটশ’ থেকে হাজারটি গরু বিক্রি হলেও এ বছর বিক্রি হচ্ছে মাত্র দুই থেকে তিনশ’টি। সীমান্তের কঠোর নজরদারির ফলে সীমান্তের বিভিন্ন হাটে এবার পশু আমদানি অনেকটা কমেছে। ফলে মুনাফা তো দূরের কথা সরকারি কোষাগারে দেয়া ইজারা মূল্যটাই আদায় করা কষ্টকর হবে।

গরু না আসার কারণ হিসেবে বেপারীরা বলছেন, এ হাট থেকে ভারতীয় সীমান্ত খুব কাছে। কাঁটাতারের বেড়াহীন এ সীমান্ত পথে খুব সহজেই গরু পাচার করে আনতেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এর বেশির ভাগ গরু বিক্রি হতো দুরাকুটি ও লালমনিরহাট শহরের নয়ারহাট, বড়বাড়ি ও হাতীবান্ধার দৈখাওয়া হাটে। ফলে দিনভর গরু-মহিষে ভরা থাকতো এসব পশুর হাট। গত দুই/তিন মাস ধরে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ায় সীমান্তে নজরদারি বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে গরু পাচারও কমে এসেছে। এ কারণে সীমান্তের এসব পশুর হাটেও নেই দৃশ্যমান আমদানি। আমদানি কমে যাওয়ায় বাইরের বেপারীদের আনাগোনাও কমে এসেছে। দুরাকুটি হাটে দেশি খামারিদের কিছু গরু উঠছে।  ছবি: বাংলানিউজসীমান্তের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদক বিরোধী অভিযানের আতঙ্কে মাদক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অবৈধভাবে গরু পাচারকারী রাখাল এবং ব্যবসায়ীরাও বাড়ি ছেড়েছেন। সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ/ছয়শ’ লোক বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। যাদের অধিকাংশ গরুর বেপারী। বর্তমানে ভারতীয় গরু খুব একটা আসছে না। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে সামান্য কিছু এলেও অবস্থা আগের মতো নেই।

সূত্রটি আরো জানায়, ঈদের বাজার ধরতে সীমান্তের ওপারে ১০/১৫ হাজার গরু-মহিষ মজুদ রেখেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। সুযোগ পেলে এসব গরু দেশের সীমানা অতিক্রম করে এসব হাট দখল না করলেও সরাসরি দেশের বড় সব কোরবানির হাটে উঠতে পারে। তখন জমে উঠবে কোরবানির হাট। তবে এমনটা হলে দেশি খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলায় তিন লাখ ৪৮ হাজার পশুর মধ্যে কোরবানি যোগ্য রয়েছে ৫৫ হাজার ১৯১টি। গত বছর জেলায় কোরবানি হয়েছে ৫৩ হাজার ৮০৯টি পশু। তাই এ জেলার পশু অন্য জেলায় বিক্রি হলেও কোনো ঘাটতি হবে না। গো-খাদ্যে কোনো ভর্তুকি না থাকায় বেশি দামে সেগুলো কিনতে হচ্ছে। ফলে খামারিরা লাভবান হতে পারছেন না।

কৃষিতে যেমন সারে সরকারি ভর্তুকি দেওয়া হয়, একই ভাবে পশু-পাখির খাদ্যেও ভর্তুকির ব্যবস্থা থাকলে খামারিরা নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), লালমনিরহাট, ১৫ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম মোর্শেদ বাংলানিউজকে জানান, সীমান্তে নজরদারির ফলে মাদক ও গরু পাচার যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনি বন্ধ হয়েছে সীমান্ত হত্যা। ভারতের অভ্যন্তরে ভারতীয়রা গরু মজুদ রাখলেও সীমান্ত অতিক্রম করার কোনো সুযোগ নেই। সীমান্তের এ নজরদারি আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে। তাতে লাভবান হবেন দেশি খামারিরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।