ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পদ্মা সেতু নির্মাণে আগ্রহী মালয়েশীয় কোম্পানি

রানা রায়হান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১১
পদ্মা সেতু নির্মাণে আগ্রহী মালয়েশীয় কোম্পানি

ঢাকা: বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। মালয়েশিয়ার বিশেষ দূত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।



কুয়ালালামপুরে মঙ্গলবার ওই প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রকাশ না করে মালয়েশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থার কাছে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত দাতুক সেরি এস সামি ভেল্লু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে তিনি ওই কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা সেরেছেন।

বার্তা সংস্থাটির খবরে সামি ভেল্লুর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়াকে বৃহৎ এ প্রকল্পটির প্রস্তাব দেন। ’ প্রকল্পটির পেছনে ১৫ হাজার কোটি টাকা (৬ বিলিয়ন মালয়েশীয় রিংগিত) ব্যয় হবে বলে উল্লেখ করা।

সামি ভেল্লু বলেন, ‘আমরা এ মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকারের কনসালট্যান্টদের তৈরি পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করছি। ’

গত সপ্তাহে সামি ভেল্লু ঢাকার সফর করেন। সফরে তিনি পদ্মা সেতুর নকশা পরিবর্তনের জন্য একটি জরিপের ব্যাপারে কথা বলেন। এতে সেতুর নির্মাণ ব্যয় কমবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্মতি দেন।

সামি ভেল্লু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, ‘পদ্মা সেতুর নকশা পর্যালোচনা করতে হবে। আমরা সেতুটির নকশা পুনরায় তৈরি করার জন্য একজন কনসালট্যান্ট নিয়োগের প্রস্তাব করছি। ’ সংবাদ সংস্থাটিকে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর বিনিয়োগের টাকা তোলা হবে টোল আদায় করে।

দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ রক্ষার জন্য পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটিকে শেখ হাসিনার সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এটি নিশ্চিত করতে চায় শেখ হাসিনার সরকার।

বিশেষজ্ঞদের অনুমান, পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে তা দেশের জিডিপি দুই শতাংশ বাড়বে।

এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করে দেয় বিশ্বব্যাংক। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনে বিশ্বব্যাংক।

৬ দশমিক ১৫ দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণ কাজে শেষ হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় ১৯ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে। এতে এসব জেলার সঙ্গে ঢাকার প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। এছাড়া সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।

এদিকে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করার পর সরকারের দৃষ্টি এখন দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতেও পড়েছে। জানা গেছে, উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড়াই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে সেতু বিভাগ। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে দাতাদের অংশগ্রহণ চায় না সরকার। বরং ডিজাইন বিল্ট পদ্ধতিতে এই সেতু নির্মাণ করা হবে। যেখানে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সেতুতে নিজেই অর্থায়ন করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে টোলের টাকায় নির্মাণ খরচ তুলে আনবে।

জানা গেছে, সরকারের এই মনোভাবের কথা জানতে পেরে বিশ্বের নামি-দামি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতামূলকভাবে এ সেতু নির্মাণের ডিজাইন ও দর প্রস্তাবে আগ্রহ দেখিয়েছে।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ গত রোববার দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর দরপত্র আহবানের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে একটি প্রস্তাব পাঠিয়। এই কমিটি অনুমোদন দিলেই দ্রুততম সময়ে দরপত্র আহবান করা হবে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কাজ ২০১৩ সালের মধ্যে শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

উন্নয়ন সহযোগীরা অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে অহেতুক দেরি করে, ফলে সরকারের উন্নয়ন কাজ ব্যহত হয়। এ কারণে বিকল্প উত্স থেকে পদ্মা সেতুর অর্থায়নের ওপর একাধিক মন্ত্রী জোর দেন। বিষয়টি সরকারের ভাবনায় আছে বলে গত রোববার সাংবাদিকদের জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত। যদিও বিকল্প অর্থের উত্স কী তা জানাননি তিনি। এর আগে যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনও বিকল্প উত্স হতে অর্থায়নের ওপর গুরুত্ব দেন।

জানা গেছে, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের মধ্যেই এ সেতুর দরপত্র চূড়ান্ত হবে। কাজ শুরু হবে ২০১৩ সালের প্রথম দিকেই । ডিজাইন বিওটি পদ্ধতিতে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্প হবে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই এখানে ভূমি উন্নয়ন থেকে শুরু করে সেতু নির্মাণের সবকিছু করবে। নকশা অনুযায়ী সেতু নির্মিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষন করবে সরকার।

দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারকে কোনো টাকা দিতে হবে না। দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করতে দরদাতাই অর্থের সংস্থান করবে। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে কোন চাপ পড়বে না। এক্ষেত্রে সফট লোন বা অপেক্ষাকৃত সহজ শর্তে অর্থসংস্থান করা হবে। এমন শর্ত রেখে ডিজাইন বিল্ট পদ্ধতি আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণ করা যায়। নির্মাণ কাজ শেষে সেতুর ওপর চলাচলকারী যানবাহন থেকে আদায়কৃত টোল দ্বারা দীর্ঘমেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করা হবে।

উল্লেখ্য, পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর, চুয়াডাঙা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুড়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোরের সঙ্গে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের দূরত্ব কমে যাবে। বাস্তবায়নাধীন মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের পদ্মা সেতু দিয়ে তাদের চলাচল করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে এবং এ এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণ বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।