ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রভাব ফেলবে না বিএবি’র ফান্ড

নজরুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১১
পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রভাব ফেলবে না বিএবি’র ফান্ড

ঢাকা: পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এক হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকেই এ ফান্ড পুঁজিবাজারে আসতে শুরু করবে।



কিন্তু এই মন্দা পরিস্থিতিতে এ ফান্ড বাজার স্থিতিশাল রাখতে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে না বলে অভিমত দিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, ‘সামান্য এই অর্থ দিয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা আনা খুব কষ্টকর। ’

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থের তহবিল দরকার। এ সামান্য অর্থের ফান্ড দিয়ে আসলে বাজারে স্থিতিশীলতা আনা কষ্টকর। তাছাড়া বাজার স্থিতিশীলতার জন্য যেসব ফান্ড গঠন করা হয় তা বাস্তবায়নে বেশি সময়ক্ষেপণ হয়। যার ফলে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলেন। যার দরুন বাজারে অস্থিতিশীলতা কাটে না। ’

এদিকে এসএমএসএফ তহবিল প্রসঙ্গে এসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজী হন নি।

তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু জানাতে পারবো না।

ডিএসইর প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভি বলেন, ‘পুঁজিাবাজারের স্থিতিশীলতায় এ ফান্ডটি যদি দ্রুত বাজারে আসে, তবে তার প্রভাব পড়বে। সঙ্কট কাটিয়ে এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরয়ে আনা জরুরি। ’

আরএন ট্রেডিং সিকিউরিটিজ হাউজের অথরাইজড মাসুদ রানা বলেন, ‘ফান্ড গঠন করলেই হবে না। এর বাস্তবায়ন করতে হবে। বাস্তবায়ন না হলে বাজার স্থিতিশীলতায় এ ফান্ড কোনো কাজে আসবে না। ’

এআরসি ব্রোকারেজ হাউজের বিও অ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ  করছি। তবে নতুন ফান্ড নিয়ে সংশয়ে আছি। কারণ এর আগেও বাংলাদেশ ফান্ড গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু বাজার স্থিতিশীলতায় তা কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।   তাই নতুন এ ফান্ড নিয়ে আমি বেশি আশাবাদী না। ’

গত কয়েকদিনে চার দফা বৈঠক করে পুঁজি বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের সংগঠন বিএবি।

রোববার রাজধানীর গুলশানের জব্বার টাওয়ারে বিএবি’র কার্যালয়ে সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদারের সভাপতিত্বে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের এক বৈঠকে এক হাজার কোটি টাকার এসএমএসএফ তহবিল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।

বৈঠকে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ মতে বিনিয়োগ বাড়ানো শুরু করেছে। ব্যাংকগুলো যদি তার আয়ের ১০ শতাংশ শেয়ারবাজারে নিয়ে যায় তাহলে আরো ৪০ থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা পুঁজি বাজারে যাবে। বাজার স্থিতিশীল করতে এত টাকা লাগবে না। তবে আমরা একবারে যাবো না। ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করা হবে। ’

এর আগে গত এপ্রিলে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেমেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড (বাংলাদেশ ফান্ড) গঠন করা হয়।

উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আইসিবি ছাড়াও এ ফান্ডের অন্য সাত প্রতিষ্ঠান হলো- রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক- সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক, জীবন বীমা করপোরেশন, সাধারণ বীমা করপোরেশন এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)।

গত ১১ অক্টোবর থেকে এ ফান্ডের ইউনিট বিক্রি শুরু হয়।

১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের এ ইউনিটের মার্কেট লট ১০০টিতে।

সাড়ে তিন হাজার টাকা ফান্ড সংগ্রহের লক্ষে উদ্বোধনী দিন এ ফান্ডের ৪০ কোটি টাকার ইউনিট বিক্রি হয়।

পাঁচ হাজার কোটি টাকা এ ফান্ডের উদ্যোক্তারা ইতিমধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকা বাজারে বিনিয়োগ করেছে বলে জানায় আইসিবি।

তবে বাজারে এ ফান্ডের ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় নি। তাই বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের সংগঠন বিএবি এর নতুন এ ফান্ডটি পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতায় কতোটা ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

অব্যাহত ব্যাপক দরপতনের মুখে গত মাসজুড়ে ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা আমরণ অনশনসহ নানা ধরণের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এর পরিপ্রক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি, ডিএসই, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর নানা ধরণের তৎপরতা চালায়।

এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয় এসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর।

তবে শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতায় এসবের কোনো কিছুই কাজে আসেনি।

অবশেষে মন্দাবস্থা কাটাতে এগিয়ে আসে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি।

গত বৃহস্পতিবার সকালে বিএবির নতুন ফান্ড গঠনের খবরে দুপুরেই বেপরোয়াভাবে বাড়তে থাকে ডিএসই ও সিএসইর সূচক।

ওইদিন লেনদেন শেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক বাড়ে ২৮৬ পয়েন্ট।

এরপর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ডিএসইর সাধারণ সূচক ১০৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৫ হাজার ৬৫৪ পয়েন্টে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।