ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভালোবাসা দিবসে সুবাস ছড়াবে গদখালীর ফুল!

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮
ভালোবাসা দিবসে সুবাস ছড়াবে গদখালীর ফুল! বিক্রির জন গদখালীর হাটে ফুল তুলেছেন চাষিরা

গদখালী (যশোর) ঘুরে: বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বন! তাই বছরজুড়েই থাকে ফুলের চাহিদা। তবে একদিন পরই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আসন্ন বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীর ফুল সারাদেশে সুবাস ছড়াবে।

১৪ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহে গদখালীর ফুল হাটে প্রতিদিন ছয় থেকে সাত কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হচ্ছে। ফুল ব্যবসায়ীদের দাবি, ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে (১০ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি) কমপক্ষে ১৩ থেকে ১৫ কোটি টাকার বেচাকেনা হচ্ছে।

এছাড়াও বসন্ত বরণ ও মাতৃভাষা দিবসে (২১ ফেব্রুয়ারি) আরও ৩০ কোটি টাকার ফুলের বেচাকেনা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মৌসুমে গদখালী এলাকায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কৃষক দুই হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করেছেন। গদখালী এলাকার মাঠের যে প্রান্তে চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। রঙ-বেরঙের ফুলের সমারোহে গদখালি এলাকায় এখন অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি দিচ্ছে।  

চাষিরা জানালেন, আসন্ন তিন দিবস (বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) ঘিরে ফুল কেটে বাজারে নিয়ে আসা এবং পরিচর্যায় মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। গদখালী এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠ জুড়ে জারবেরা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ফুল হাতছানি দিচ্ছে।

স্থানীয় ফুলচাষিরা বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে ফুলের চাহিদা অনুযায়ী কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ফুল যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা দিবসে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন।  

ফুলচাষিরা বাংলানিউজকে আরো বলেন, প্রতিবছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসসহ ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি বিশেষ দিনকে টার্গেট করে ফুলের বাজার ধরতে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকেই চাষিরা ফুল কেটে বাজারে নিয়ে আসছেন। এসব ফুল রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বগুড়া, খুলনাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কিনে গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন।  

বাজার ঘুরে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিপিস গোলাপ ৭ থেকে ১০ টাকা, রজনীগন্ধার প্রতিস্টিক ৮ থেকে ১০ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রতিপিস (রঙভেদে) ৫ থেকে ১২ টাকা, জারবেরা ৬ থেকে ১০ টাকা ও গাঁদা ফুল প্রতি হাজার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গদখালী ফুলচাষি সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও মহান ভাষা দিবসকে সামনে রেখে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ দিবসগুলোতে অন্তত ৪৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট করেছেন চাষিরা। সে অনুযায়ী এরইমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ফুল ক্রেতারা গদখালী ফুল হাটে এসে ফুল কিনেছেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি চলবে পুরোদমে বেচাকেনা। এছাড়াও একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে চাষিরা বায়নার টাকা নিয়েছেন।

বাজারে আনা ফুল সাজানো হচ্ছেস্থানীয় কৃষকদের একমাত্র পেশা ফুল চাষ: ১৯৯৫ সালের আগে এ অঞ্চলের যে কৃষকরা ধান কিংবা সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন, এখন তারা পুরোপুরিই ফুল চাষের ওপর নির্ভরশীল। অন্য ফসলের তুলনায় ফুল চাষ লাভজনক হওয়ায় গদখালীসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অন্য কোনো ফসল চাষ হচ্ছে না।  

ফুলের হাট গদখালী: স্থানীয় চাষিদের উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী নামক স্থানে গড়ে উঠেছে বিশাল একটি ফুলের হাট। প্রতিদিন সকালে সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এ হাটে ফুলের বেচাকেনা জমে ওঠে, যা সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে। দেশের একমাত্র পাইকারি ফুলের এ হাটে সারাদেশের ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে আসেন।

ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক ফুল চাষ: স্থানীয় ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্য যে কোনো ফসলের তুলনায় ফুল চাষ অধিক লাভজনক। স্থানীয় পুটপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে গোলাপ কিংবা গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করতে খরচ হয় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এরপর চারা গাছে একবার ফুল ধরলে তা কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ফুল দেয়। এতে বছরে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা আয় আসে।  

ফুল চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন কৃষক: ১৯৮৩ সালের দিকে স্থানীয় হাতেগোনা কয়েকজন কৃষক ফুল চাষ শুরু করলে তাদের সাফল্য দেখে অনেকেই ফুল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। একপর্যায়ে ১৯৯৫ সাল থেকে অধিকাংশ কৃষক ফুল চাষ শুরু করেন। বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার কৃষক আয়ের উৎস হিসেবে ফুল চাষকে বেছে নিয়েছেন। সরেজমিন এলাকা ঘুরে জানা যায়, যেসব কৃষক গত ১০ বছর আগে পরিবার-পরিজন নিয়ে দু’মুঠো ভাত পর্যন্ত জোগাড় করতে হিমশিম খেয়েছেন। ফুল চাষের মাধ্যমে তারা এখন সাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। প্রত্যেকেই পাকা বাড়ি করেছেন। ঘুচেছে সংসারের অভাব-অনটন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।