ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘আঞ্চলিক যোগাযোগে আশার আলো বিশ্বব্যাংকের ঋণ!’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
‘আঞ্চলিক যোগাযোগে আশার আলো বিশ্বব্যাংকের ঋণ!’

ঢাকা:  ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে ১৫ কোটি ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রতি ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। 

এ ঋণ না পাওয়ায়ই এতোদিন ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রকল্প -০১’ এর বাস্তবায়ন থেমে ছিলো বলে জানিয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম।   
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ঋণ নিয়ে অনেক সময় মনগড়া খবর এসেছে।

তবে আমি বলতে পারি, আগামী ০৪ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রকল্পের আওতায় ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এরপরেই ঠিকাদার নিয়োগ করে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে’।

প্রকল্পটির মূল লক্ষ্যগুলো হচ্ছে-  দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে  স্বল্প ব্যয়ে পণ্য ও মালামাল পরিবহন, নিরাপদে ভ্রমণ নিশ্চিত করা, পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং উন্নত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা।  
 
ইআরডি সূত্র জানায়, মূল প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি উপ-প্রকল্প বা কম্পোনেন্ট রয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৬ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ব্যয় কবে সরকার। বাকি প্রায় ১৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
 
প্রথম কম্পোনেন্টে ব্যয় হবে ৭ কোটি ৫ লাখ ডলার বা প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে স্থলবন্দর স্থাপন করা করা হবে এ পর্যায়ে।
 
প্রাথমিকভাবে এজন্য পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধাকে নির্বাচিত করা হয়েছে।  এখান থেকে ৫৭ কিলোমিটার নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মিত হবে। এ রুটের সঙ্গে সংযোগ দিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হয়ে ভারতীয় সীমান্তবর্তী সোনা মসজিদ  পর্যন্ত আরও ৩৭ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মিত হবে।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে (বিবিআইএন) রেল সংযোগের অন্যতম রুট হবে এটি। স্থলবন্দরটিতে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে যাত্রী ও আমদানি-রফতানির মালামাল পরিবহনও সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।  

ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর।
 
সূত্র আরও জানায়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে নেপাল মাত্র ৬১ কিমি, ভুটান মাত্র ৬৮ কিমি এবং চীন সীমান্ত মাত্র ২০০ কিমি দূরে অবস্থিত। এটিই একমাত্র বন্দর- যা ৫টি বন্ধুপ্রতিম দেশকে একই সূত্রে আবদ্ধ করতে পারে।  

সেজন্যই বাংলাবান্ধা হয়ে চারটি দেশের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপিত হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দ্বারও।  

দ্বিতীয় কম্পোনেন্টের মোট ব্যয় পাঁচ মিলিয়ন বা ০ দশমিক ৫ কোটি মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪০ কোটি টাকা।  চার দেশের নারীদের ব্যবসায়িক সেতুবন্ধনে এ ঋণ ব্যয় করা হবে।
 
তৃতীয় কম্পোনেন্টের মোট ব্যয় ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৬ কোটি টাকা। দেশের জাতীয় বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এ ঋণ ব্যয় করা হবে।  

চতুর্থ কম্পোনেন্টের আওতায় বাণিজ্যিক পয়েন্ট চিহ্নিত করতে ব্যয় করা হবে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৮ কোটি টাকা।  
 
পঞ্চম কম্পোনেন্ট হলো ‘কাস্টমস মডার্নাইজেশন অ্যান্ড ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো ডেভেলপমেন্ট’। এ উপ-প্রকল্পটির আওতায় দেশের চারটি স্থলবন্দর সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা, যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরার ভোমরা ও  ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়ায় অনলাইনে সেবা দেওয়া হবে, বন্ধ হবে ম্যানুয়াল কার্যক্রম। ফলে স্থলবন্দরগুলোতে মানুষের ভোগান্তি কমবে। একইভাবে পণ্য খালাসেও সময় কমে আসবে।  

এতে বিশ্বব্যাংকের ৬ কোটি ৭ লাখ ডলার বা ৫৩৬ কোটি টাকার ঋণ ব্যয় করা হবে।  
 
ইআরডি সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) কাছ থেকে সহজ শর্তে এ ঋণ পাবে। বাংলাদেশ আইডিএ তহবিলের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা। ৩৮ বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ছয় বছর গ্রেস পিরিয়ড। ঋণের সার্ভিস চার্জ  দশমিক ৭৫ শতাংশ।  

আগামী ০৪ ডিসেম্বর রাজধানীর শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি’র সচিব কাজী শফিকুল আযম ও বিশ্বব্যাংকের পক্ষে সংস্থাটির ঢাকা অফিসের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান এতে স্বাক্ষর করবেন।  

ঋণচুক্তিটি দ্রুত সম্পূর্ণ করতে সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন ইআরডি’র উপ-সচিব সৈয়দা মাসুমা খানম।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রকল্পের ঋণচুক্তির বিষয়ে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। আশা করছি, আগামী ০৪ ডিসেম্বর ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ভারত, নেপাল ও ভূটানের সঙ্গে বাণিজ্যের প্রসারে বিশ্বব্যাংকের এ ঋণ অবদান রাখবে। আমাদের বড় প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে চারটি স্থলবন্দরে অনলাইন সেবাও চালু হবে এ ঋণের টাকায়’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।