ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

চালের বাজারের লাগাম টানতে পারছে না নতুন ধানও!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
চালের বাজারের লাগাম টানতে পারছে না নতুন ধানও! গুদামে চালের মজুত। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: মাঠে মাঠে চলছে নতুন ধান কাটার উৎসব। পাল্লা দিয়ে হাটবাজারে ধানের আমদানিও ক্রমে বেড়েই চলছে। কিন্তু ধানের দাম কমছে না। ঊর্ধ্বমুখি চালের বাজারে এখনও নতুন ধান প্রভাব ফেলতে পারছে না। পাইকারি বাজারে কিছুটা চালের দাম কমলেও খুচরা বাজারে আপাতত দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।  

তবে শ্রমিক হারানোর ভয়ে চাতাল মালিকদের একটা অংশ মিল বন্ধ রাখতে পারছেন না। আর মিলের চাকা ঘুরাতে গিয়ে চাতাল ব্যবসায়ীদের কমবেশি লোকসান গুণতে হচ্ছে।

চাহিদা মতো ব্যাপারী না থাকায় লোকসানেও চাল বিক্রি করতে পারছেন না তারা। উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডারখ্যাত বগুড়ার মোকামে চাল পাহাড় পড়ে রয়েছে অবিক্রিত অবস্থায়।

এ মোকাম থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ চাল কিনে থাকেন বড় বড় ব্যাপারী বা মহাজনরা। কিন্তু স্থানীয় বাজারে চালের সঙ্কট রেখে চাল কিনছেন ওইসব এলাকার ব্যাপারী বা মহাজনরা। এতে খুচরা বাজারে চালের দাম কমছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।  

অথচ পাইকারি বাজার থেকে ঠিকই কম দামে চাল কিনছেন তারা। এতে মহাবিপাকে রয়েছেন নিন্ম আয়ের মানুষ। কিন্তু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। সব মিলে নতুন ধানও পারছে না চালের বাজারের লাগাম টানতে।

মিলে প্রস্তুত হচ্ছে চাল।  ছবি: বাংলানিউজবগুড়া জেলার ধান-চাল ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হলে চালের ঊর্ধ্বমুখি বাজারদর সম্পর্কে ওঠে আসে এমন তথ্য।

বর্তমান বাজারে প্রতিমণ বিআর-৪৯ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১০৫০ টাকা দরে। সেই ধান কিনে চাতালে ফেলার পর সেদ্ধ-শুকানো শেষে মিলে ভাঙানো হয়। প্রতিমণ ধান থেকে বড়জোর ২৭ সের হারে চাল উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, প্রতিমণ চাল ১৫২০-১৫৬০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিমণ চাল উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৬০ টাকা।

এরমধ্যে সেদ্ধ, শুকানো, ভাঙানো, লোড-আনলোড খরচ রয়েছে। এ হিসেব মতে, প্রতিমণ চালের বিপরীতে ব্যবসায়ীদের বর্তমানে ৬০-৮০ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণতে হচ্ছে। অন্যান্য জাতের ধানের ক্ষেত্রে লোকসানের পরিমাণটাও প্রায় একই। এরমধ্যে আবার চাহিদামত চাল কেনার ব্যাপারী বা মহাজন নেই এই মোকামে।

জাহাঙ্গীর আলম ও আইয়ুব আলী বাংলানিউজকে জানান, বর্তমান বাজারে বিআর-৪৯ জাতের প্রতিবস্তা (সাড়ে ৯৩ কেজি) চাল পাইকারি হিসেবে ৩৮০০-৩৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের ঊর্ধ্বমুখি বাজারের কারণে তাদের ওই হিসেব অনুযায়ী লোকসান গুণতে হচ্ছে।
তাও আবার চাহিদামত চাল কেনার পাইকারি ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে তাদের পুঁজি আটকে যাচ্ছে। চালে গুদাম ভরে যাচ্ছে। দেখা দিচ্ছে পুঁজি ও পর্যাপ্ত জায়গার সঙ্কট।    

ট্রাকে চাল লোড হচ্ছে।  ছবি: বাংলানিউজকিন্তু মিল-চাতাল চালু রাখার স্বার্থে আপাতত এর কোন বিকল্প নেই। কিন্তু খুচরা বাজারগুলোয় স্থানভেদে একই পরিমাণ চাল (প্রতি বস্তা) ২৫০-৩০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান এই দুই ব্যবসায়ী।    

ব্যবসায়ী আল আমিন বাংলানিউজকে জানান, প্রত্যেক ব্যবসার একটা সিজন অফসিজন টাইম আছে। ধান-চাল ব্যবসার সেই সিজন টাইম শুরু হয়েছে। নতুন ধান বাজারে এলে অন্তত বিগত সময়ের ঝক্কি ঝামেলা সামলে নিয়ে অনেকটা নিশ্চিতে ব্যবসা করতে পারবেন। কিন্তু সেই আশায় ব্যবসায়ীদের এবার গুড়ে বালি। কারণ নতুন ধানের বাড়তি দাম তার মত অন্য ব্যবসায়ীদের ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।

মোখলেছুর রহমান, আব্দুল মজিদ, গোলাম রব্বানীসহ একাধিক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, ব্যবসার নতুন মৌসুম শুরু হওয়ায় চাতাল চালু রাখতে লোকসান মেনেই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে। এছাড়া চাতালে শ্রমিক থাকবে না। ভরা মৌসুমে শ্রমিক পাওয়া যাবে না। তাই শ্রমিক ধরে রাখতে ব্যবসা চালু রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।