ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ব্যাংকিং

খেলাপি ঋণেই ঝুঁকিতে বিডিবিএল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৭
খেলাপি ঋণেই ঝুঁকিতে বিডিবিএল

ঢাকা: পাঁচ বছর ধরে ক্রমাগতভাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল)। খেলাপি ঋণ এখন ব্যাংকটির প্রধান সমস্যা। আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে ব্যাংকটি।

চলতি বছরের প্রথম ছয়মাসে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ৩৫ কোটি টাকা বেড়ে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৬৫ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৫২ শতাংশ।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৩০ কোটি টাকা।
 
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) সরকারি মালিকানাধীন একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। সরকারি সিদ্ধান্তের আওতায় বাংলাদেশে শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে (বিএসআরএস) একীভূত করে বিডিবিএল গঠন করা হয়। ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি নতুন কর্মযাত্রা শুরু করে বিডিবিএল।
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুত্রে জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২০১৫ সালেই বেড়েছে ১৭০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৫২০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

২০১৪ সালের একই সময়ে এসে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকায়। ২০১৫ সালে হয়েছে ৬৯৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে ছিল ৭৩০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৬৫ কোটি টাকায়।
 
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, এখনই খেলাপি ঋণ কমাতে না পারলে ভবিষ্যতে পথচলা নিয়ে ঝুঁকিতে পড়বে বিডিবিএল।
 
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, খেলাপি ঋণ দিন দিন যেভাবে বাড়ছে, এটা উদ্বেগজনক বিষয়। খেলাপি ঋণ এতো পরিমাণে বেড়ে গেলে ব্যাংকের অনেক টাকা আটকে যায়। ব্যাংকগুলো খরচ সামাল দিতে ঋণের সুদ কমাতে পারে না। এতে নতুন উদ্যোক্তাদের উপর চাপ পড়ে।  

‘কারণ নতুন উদ্যোক্তারা উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে গেলে সমস্যায় পড়ে। এছাড়াও খেলাপি ঋণের বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকিং খাতে। ’
 
ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়লেও সন্তোষজনকভাবে আদায় হয়নি। ২০১৩ সালে ব্যাংকটি ৫০ কোটি ২৭ লাখ টাকা আদায় করেছে। ২০১৪ সালে প্রায় ৩০ কোটি টাকা বেশি আদায় করলেও ২০১৫ সালে আবার কমেছে ৪৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। একইভাবে ২০১৬ সালে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আদায় করলেও ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আদায় করেছে মাত্র ৩৪ কোটি ২ লাখ টাকা।
 
২০১৩ সালে লোকসানি শাখার সংখ্যা ৯টি হলেও ২০১৭ সালের ৩০ জুন এসে দাঁড়িয়েছে ২৮ টিতে। ৫ বছরে লোকসানি শাখা বেড়েছে ১৯ টি। ২০১৪ সালে বেড়েছে দুইটি, ২০১৫ সালে বেড়েছে ৩টি ও ২০১৬ সালে বেড়েছে ৫টি লোকসানি শাখা।
 
যোগাযোগ করা হলে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. ইয়াছিন আলীও। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যাংকটির অন্যান্য কার্যক্রম খুব ভালো হলেও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিই এখন প্রধান সমস্যা।
 
ইয়াছিন আলী আরও বলেন, আমাদের দেশে মূলত ট্রাম লোনের (মেয়াদি লোন) ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ে। আর বিডিবিএল মূলত ট্রাম লোন দিয়ে থাকে। তাই এ ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি।  

‘তবে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও মেধা দিয়ে খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধান হবে বলেই আশা করছি,’ যোগ করেন তিনি।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৭
এসই/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।