ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

মোকামে চালের পাহাড়, ক্রেতা উধাও!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
মোকামে চালের পাহাড়, ক্রেতা উধাও! বগুড়ার চালের মোকাম/ ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: নুরুল ইসলাম। একটি অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক। সান্তাহার এলাকায় তার মিল। মিলে উৎপাদিত চাল কিনতে ৩-৪ জন মহাজন সম্প্রতি অর্ডার দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় আসামাত্র মোবাইল ফোনে বাতিল করে দেন চাল নেওয়ার অর্ডার।

কারণ জানতে চাইলে মহাজনরা নুরুল ইসলামকে জানিয়ে দেন, বাজার ভালো যাচ্ছে না। সরকারের কড়া নজরদারি।

লোকসান দিয়ে ব্যবসা হয় না। ঘরে অনেক চাল আছে। আগে সেগুলো বিক্রি করি। এছাড়া ঘরে জায়গাও নেই। তাই আপতত চাল নেওয়া যাচ্ছে না ভাই।  

এসব মহাজনদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঢাকায়। সেখানেই তারা চালের কারবারি করেন।
 
শস্যভাণ্ডারখ্যাত উত্তরাঞ্চলের অন্যতম চালের মোকাম বগুড়া। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে বৃহৎ এ চালের মোকাম থেকে চাল কেনার ব্যাপারি বা মহাজনরা যেন উধাও! এ মোকামের সিংহভাগ চালের ক্রেতা রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বড় বড় ব্যবসায়ীরা।
 
গেলো সপ্তাহ দুয়েক আগেও এ মোকাম থেকে গড়ে প্রতিদিনি প্রায় শতাধিক ট্রাক চাল কিনেছেন এসব ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সম্প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠকের পর ওইসব ব্যাপারি বা মহাজনরা অনেকটা গা ঢাকা দিয়েছেন। তারা চাল কিনতে বগুড়ার মোকামে আসছেন না। যোগাযোগ করাও ছেড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এতে অসংখ্য ব্যবসায়ীর গুদামে হাজার হাজার বস্তা উৎপাদিত চাল পড়ে আছে। চাল বিক্রি করতে না পারায় ক্রয়কৃত ধানের অবস্থাও একই। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী চাল বিক্রি করলে লোকসান গুণতে হবে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু ব্যাপারি বা মহাজন না থাকায় লোকসানেও চাল ছাড়তে পারছেন না তারা।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) চাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের চালের বড় বড় ব্যাপারি বা মহাজনরা ওইসব বাজারে চালের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করতে আরেকটি সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের কাছে চালের যে মজুত রয়েছে তাই স্থানীয় বাজারে সীমিতভাবে বিক্রি করছেন। বর্তমানে চালের দাম কিছুটা কমে আসায় ওইসব ব্যবসায়ীরা লোকসানের ভয়ে আছেন। অনেক ব্যবসায়ীকে অল্পকিছু লোকসানও গুণতে হচ্ছে।
 
তাই আগের ক্রয়কৃত চালের মজুদ ফুরিয়ে গেলে স্থানীয় বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি হবে। দর ঊর্ধ্বমুখী হবে। সেই সুযোগে মোকামে ঝুঁকবেন তারা। এসব চাল স্থানীয় বাজারে নিয়ে বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা করবেন বলে অভিমত এ জেলার ব্যবসায়ীদের। অবশ্য এ জন্য আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে বাংলানিউজকে জানান আমিনুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, মোখলেছুর রহমান, আইয়ুব আলীসহ একাধিক ব্যবসায়ী।

বগুড়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি এটিএম আমিনুল হক বাংলানিউজকে জানান, এ জেলার শতকরা ৯০ শতাংশ হাস্কিং মিল বন্ধ রয়েছে। মাত্র ১০ শতাংশ চালু থাকলেও তা দিন এনে দিন খাওয়ার মতো করে চলছে।  
 
তিনি আরও জানান, এ জেলা থেকে সব সময় বাইরের শতাধিক ব্যাপারি বা মহাজন চাল কেনেন। এছাড়া স্থানীয় ব্যাপারী বা মহাজনের তো কোনো হিসাব নেই। গত দুই সপ্তাহ আগেও এ জেলা থেকে গড়ে ৫০-৬০ ট্রাক চাল শুধু ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে গেছে। কিন্তু এখন যাচ্ছে না। ব্যাপারি বা মহাজনরা আসছেন না। কোনো অর্ডারও দিচ্ছেন না। খুব সীমিত আকারে চাল বেচাকেনা হচ্ছে।
 
এটিএম আমিনুল হক আরও জানান, এ জেলার ব্যবসায়ীরা ধান কেনা বন্ধ রেখেছেন। যার কাছে যা আছে তা চাল করছেন। ক্রেতা না থাকায় লোকসান দিয়েও এসব চাল বিক্রি করতে পাচ্ছেন না। ব্যাপারি বা মহাজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলছেন, ভাই লোকসান দিয়ে ব্যবসা হবে না। আড়তে চাল রাখার জায়গা নেই। অভিযানের ভয় রয়েছে। এসব বলে চাল নিচ্ছেন না তারা। বিষয়গুলো বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
 
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাইন উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, সবকিছু কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। চালের দাম কমে আসছে। বাইরে থেকে দেশে চাল আসছে। অল্প সময়ের মধ্যে দাম আরো কমবে। তবে ব্যবসায়ীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই।
 
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অন্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে হয়তো চালের মজুদ আছে। এ কারণে তারা বগুড়ার মোকামে চাল কিনতে আগের মতো আসছেন না। মজুদ ফুরে গেলেই বেচাবিক্রি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে যোগ করেন এই কর্মকর্তা।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এমবিএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।