ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাড়ছে আটা-ময়দার দাম, নিয়ন্ত্রণে আসেনি চিনির দামও

করিমুল বাশার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১১
বাড়ছে আটা-ময়দার দাম, নিয়ন্ত্রণে আসেনি চিনির দামও

ঢাকা: রমজানে চাহিদার তুলনায় যোগান কমের অজুহাতে চিনির বাড়তি দাম আদায় করেছে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ঈদের পর চাহিদা কমলেও বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে না।

সেই সঙ্গে বাজারে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে আটা ও ময়দার দাম।

ব্যবসায়ীদের দাবি- গমের দাম বাড়ায় আটা, ময়দার দাম বেড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশীয় বাজারেও দাম বাড়ার আর একটি কারণ বলে উল্লেখ করছেন তারা। আরও দাম বাড়বে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, মোহাম্মদপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে- সরকার নির্ধারিত ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে না চিনি। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি চিনির দাম কমেছে।

বাজারে ঢুকে চিনির দাম কত জানতে চাইলে অধিকাংশ ব্যবসায়ীই জানতে চায়, কতটুকু লাগবে। এর কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের একতা ট্রেডার্সের জুয়েল (৩৩) বলেন, ‘যদি এক কেজি চিনি বিক্রি করি লাভ হবে এক-দুই টাকা। আর মোবাইল কোর্ট এসে জরিমানা করবে ১০-২০ হাজার টাকা। তাই এক বস্তা একসাথে বিক্রি করলে সরকার নির্ধারিত দাম ৬৫ টাকা দরে বিক্রি করা যায়, এতে আর কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না। ’

খুচরা ওই দামে বিক্রি করতে না পারার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘২০-৫০ টাকা লাভে একসাথে এক বস্তা বিক্রি করলে যে লাভ খুচরায় প্রতি কেজিতে দুই টাকা লাভ করলেও তার সমান হয় না। কারণ খুচরা বিক্রি করলে প্রতি কেজিতে একশ-দু’শ গ্রাম বেশি যায়। আর এতে ৫০ কেজির বস্তা হয়ে যায় ৪৭-৪৮ কেজি। ’

বাজারে এখনও চিনির সংকট রয়ে গেছে বলে উল্লেখ করছেন ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চিনির আড়তদার সর্পরাজ (৪৮) বলেন, ‘ঈদের পর মানুষ এখনও ঢাকায় না ফেরায় সংকট চোখে পড়ছে না। তবে কিছুদিনের মধ্যে এ সংকট বোঝা যাবে। ’

তবে সরকার নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি না হলেও বেশিরভাগ চিনি ব্যবসায়ীর দাবি- বাজারে চিনির দাম কমেছে। তাদের দাবি যেখানে রোজায় ৭০-৭৫ টাকা দরে চিনি বিক্রি হয়েছিল, সেখানে এখন পাইকারি ৬৫ টাকা দরে ও খুচরা ৬৬-৬৮ টাকা দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে- পাইকারি বাজারে প্রতি ৫০ কেজি আটার বস্তা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩৫০ টাকায়। যা গত কয়েকদিন আগেও বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ২৭০ থেকে এক হাজার ২৯০ টাকায়। আর গত এক সপ্তাহ আগে এ আটা বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ২৭০ টাকায়। অর্থ্যাৎ গত কয়েকদিনে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় আটার দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আর গত এক সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়েছে ৮০-১০০ টাকা।

এছাড়া পাইকারি বাজারে সিটি গ্রুপের তীর ময়দা প্রতি ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭৩০ টাকা। গত এক সপ্তাহ আগেও এর দাম ছিল এক হাজার ৫৫০ টাকা। অর্থ্যাৎ প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ১৮০ টাকা। আর ব্র্যান্ড ছাড়া ময়দা প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ৮০ থেকে ৯০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬৫০ টাকায়।

আটা ও ময়দার দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সোনালী ট্রেডার্সের মালিক আবুল কাশেম (৪০) বাংলানিউজকে বলেন, ‘গমের দাম বাড়ার কারণেই আটা, ময়দার দাম বাড়ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও গমের দাম বাড়ছে। যে কারণে দাম বাড়ছে। ’

সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আটা ও ময়দা দুইদিনের বেশি চারদিন থাকলেই নষ্ট হয়ে যায়। ’

তাই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মাল আটকে রেখে এর দাম বাড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দাম আর বাড়বে কিনা ওই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন আগের মাল বিক্রি করছি এক হাজার ৭৩০ টাকায়। কিন্তু গতকাল তীর ময়দা কিনেছি প্রতি বস্তা এক হাজার ৭০৪ টাকা। জায়গার অভাবে যা এখনো গুদামে আনতে পারিনি। ওই মালে প্রতি বস্তায় খরচ আছে ২২ টাকা। তাহলে আমি কিভাবে এক হাজার ৭৩০ টাকায় ওই মাল বিক্রি করবো। ’

কয়েকদিনের মধ্যে আর এক দফায় দাম বাড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আটা ও ময়দার দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক আহম্মদ হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী যে যোগান আছে, এতে বাজারে দাম বাড়ার কথা নয়। ’

খাদ্য অধিদপ্তর আজ থেকে ঢাকার ৬৪টি পয়েন্টে খোলা আটা ও ময়দা বিক্রি করতে নেমেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। দুই-একদিনের মধ্যে দাম কমে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।