ঢাকা: রোজার শেষ দিকে এসে বাজারে আর এক দফায় বাড়লো সবজির দাম। গত দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজিতে দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা।
বন্যায় ফসল নষ্টের কারণেই সবজির দাম বেড়েছে বলে উল্লেখ করছেন সবজি বিক্রেতারা। রমজানের পরও সবজির দাম কমবে না বলে জানান তারা।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কাঁঠালবাগান বাজার ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে- বৃষ্টি, বন্যাসহ নানা অজুহাতে বাজারে হঠাৎ করেই দাম বেড়েছে প্রায় সব সবজির। তবে যে কারণেই সবজির বাড়–ক, দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভোক্তারা।
এছাড়া বৃষ্টির অজুহাতে কাঁচা মরিচের দাম প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ১০০ টাকা থেকে একদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে ২০০ টাকা হয়েছিল। কিন্তু পরের দিন দাম কমে ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও, ধীরে ধীরে এখন আবার তার দাম প্রতি কেজি ২০০ টাকা ছুঁয়েছে।
বাজারে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। যা গত দুই দিন আগেও বিক্রি হচ্ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
বাজারে প্রতি কেজি ঢেঁড়শ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। যা গত দুই দিন আগে ছিল ৪৫-৫০ টাকা। প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, যা ছিল ৪০-৪৫ টাকা।
প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। যা গত দুইদিন আগে ছিল ৫০-৬০ টাকা।
বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৬-১৮ টাকায়, শসা ৪০-৫০ টাকায় ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। যা গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় একই দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে গরুর মাংস বিক্রি হলেও রোজার শেষে এসেও দাম কমেনি মুরগি, খাসির মাংস ও মাছের।
বাজারে প্রতি কেজি মুরগি (ফার্ম) বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। যা গত সপ্তাহেও প্রায় একই দরে বিক্রি হয়েছিল।
বাজারে গরুর মাংস সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি ২৭০ টাকা দরে বিক্রি হলেও, এ মাংসে ভেজাল দেওয়া, মাপে কম দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ভোক্তাদের। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০০-৪৩০ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় তেমন পরিবর্তন হয়নি মাছের বাজারের দাম।
দুই দিনের ব্যবধানে সবজির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কাঁঠালবাগান বাজারের সবজি বিক্রেতা রাসেল (২৫) বাংলানিউজকে বলেন, ‘সারা মাস ধরে বৃষ্টির ফলে বন্যা হয়েছে। আর বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া বৃষ্টির সময় রাস্তাঘাটের কারণে সময়মতো মালও বাজারে আসতে পারে না। যার কারণে দাম বেড়েছে। ’
বৃষ্টি বন্ধ হলে রাস্তাঘাট ঠিক হলে দাম কমবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেখানে ফসলই নাই সেখানে রাস্তাঘাট ঠিক হলেও দাম কমবে কিভাবে। ’
রমজানেরও পরও দাম না কমার আশঙ্কার কথা জানালেন তিনি।
বাজারে অন্যান্য সবজি বিক্রেতাদের সবার প্রায় একই কথা। বন্যার কারণে ফসল পচে গেছে যার কারণে দাম বাড়ছে।
যেসব সবজির দাম বাড়েনি সেগুলো না বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা হাবিব (৩৮) বাংলানিউজকে বলেন, ‘যেসব ফসল ঢালু অঞ্চলে চাষ হয়, তা বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয় না। তাই বৃষ্টি হলেও এসব ফসলের দাম বাড়ে না। ’ ব্যবসায়ীরা পারলে কখনও দাম বাড়ায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে সবজির দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শ্রমজীবীসহ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভোক্তারা।
কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা আবু ইউসুফ (৩৫) বলেন, ‘দুই-তিন মাস আগেও মাস কাটানো নিয়ে ভাবতাম না। কিন্তু কিছুদিন আগে বাড়লো পরিবহন ভাড়া, বাড়িভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব জিনিসের দাম, এখন আবার বাজারে বাড়ছে সবজি থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সবকিছুর দাম। দুশ্চিন্তায় না পড়ে কি উপায় আছে?’
হাতিরপুল বাজারে বাজার করতে আসা আজিজ (৫৩) নামের শ্রমিক বলেন, ‘আমি কাজ করে দিনে এনে দিনে খাই। দৈনিক যে মজুরি পাই, তা দিয়ে মাছ, মাংসের কথা চিন্তাও করতে পারি না। তাই সবজি দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাতাম। এখন সবজির দাম যে হারে বাড়ছে না খেয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। ’
এদেশে গরিব মানুষের জায়গা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১১