ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

নাটোরে প্রাণের আমের আঁটির বিষে মরে যাচ্ছে গাছ ও মাছ

স্বপন দাস, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১১
নাটোরে প্রাণের আমের আঁটির বিষে মরে যাচ্ছে গাছ ও মাছ

নাটোর: নাটোর সদর উপজেলার একডালায় অবস্থিত প্রাণ কোম্পানির আমের আঁটির বিষক্রিয়ায় এলাকার গাছ এবং পুকুরের মাছ মরে যাচ্ছে। সচরাচর মাটিতে ফেলে রাখা আমের আঁটিতে গাছ বের হয়।

তবে প্রাণের আমের আঁটিতে কোনো গাছ হয় না। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।

গত ১ জুন থেকে ২ আগস্ট প্রাণের নাটোর কারখানা জুস তৈরির জন্য ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম ক্রয় করে। আম ক্রয়ের মৌসুম শেষে বিপুল পরিমাণ আমের আঁটি বিক্রি করা হয়। স্থানীয়রা এসব আঁটি শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে।

শুকনো আমের আঁটি উত্তম জ্বালানি ও দাম কম হওয়ায় এলাকার লোকজন তা সংরক্ষণ করেন। আমের এসব আঁটি কিনে রাস্তার পাশে, বাড়ির পাশে যত্রতত্র শুকাতে দেয়। আমের আটিতে রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় বৃষ্টির পানিতে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে পুকুর, ডোবার পানিতে মিশে যায়। এই বিষক্রিয়ায় পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে। একই ভাবে বিষের পানি সংস্পর্শে এসে গাছও মারা যাচ্ছে ।

এব্যাপারে একডালায় অবস্থিত সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আফাজ উদ্দিন সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি শিশু পরিবারের আমবাগানে ও মাঠে প্রাণ কোম্পানি কেমিক্যালযুক্ত আমের আঁটি শুকানোর জন্য রেখেছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে কেমিক্যাল মিশে গাছের ক্ষতি হচ্ছে, ফলন্ত গাছ মরে যাচ্ছে, মাটি বিষাক্ত হচ্ছে, পুকুরের মাছ মরে যাচ্ছে।

এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রাণ কোম্পানিকে নোটিশও দিয়েছে সরকারি ওই প্রতিষ্ঠান।

নাটোরের একডালা, নেঙ্গুরিয়া ও নারায়ণপুর গ্রামবাসীর পক্ষ থেকেও প্রাণের বিষাক্ত বর্জ্যে এলাকার  পরিবেশ দূষণের প্রতিকার চেয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুজদার রহমান বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয়ভাবে এধরনের পরীক্ষার কোনো ল্যাবরেটরি নেই। আর পরীক্ষা না করে নিশ্চিত করে বলা যাবে না প্রাণের কেমিক্যাল মিশ্রিত আমের আঁটির কারণে মাছ  (প্রাণি ) ও গাছ (উদ্ভিদ) মরে যাচ্ছে।

তবে তিনি জানান, আমের আঁটিতে কার্বহাইড্রেড বা অন্য কোনো কেমিক্যাল যদি থাকে এবং তা পচে বিষাক্ত রস মিশলে মাটিতে আমোনিয়া বা অ্যামেনিয়াম গ্যাসের আধিক্য হয়। এতে মাটির উপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে, অল্প বয়সী গাছের কচি শিকড় পচে গাছের ক্ষতি এমনকি মরেও যেতে পারে।

এছাড়া পানিতে কার্বাহাইড্রেডের আধিক্য হলে গ্যাসের কারণে মাছ মরে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

প্রাণ কোম্পানির নাটোর কারখানার প্রশাসনিত কর্মকর্তা রেজাইল করিম বাংলানিউজকে জানান, আমের আঁটি শুকিয়ে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

তিনি আরও জানান, প্রাণের জুস আন্তর্জাতিক মানের। এতে ক্ষতিকর কোনো কেমিক্যাল মেশানো হয় না।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঢাকা অফিসের মাধ্যমে ল্যাবরেটরিতে আমের আঁটি পরীক্ষা করেও ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায় নি বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে নাটোরের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।