ঢাকা: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে চাল, ডাল, ছোলার দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বেড়েছে খোলা তেলের দাম। সেই সঙ্গে অস্থিরতা রয়েই গেছে চিনির বাজারে।
তবে চলতি সপ্তাহে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে- বাজারে খোলা তেলের দাম কিছুটা বাড়লেও তা এখনও সরকার নির্ধারিত দাম অতিক্রম করেনি। তেলের দাম বাড়ার জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা দুষছেন পাইকারি ব্যবসায়ীদের। আর পাইকাররা বলছেন মিলে দাম বাড়ার কারণেই দাম বেড়েছে। তবে অচিরেই সরকার নির্ধারিত দাম অতিক্রম করতে পারে বলে তাদের ধারণা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মোহাম্মদপুর বাজার, কাঁঠালবাগান বাজার ঘুরে দেখা গেছে-পাইকারি বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায়, সুপার পাম তেল ৯৫ টাকায় ও পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৩ টাকা ৫০ পয়সায়। এসব তেল গত এক সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজারে লিটারপ্রতি এক থেকে দুই টাকা কম ছিল।
খুচরা বাজারে এসব তেল সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে দাম বেড়ে এগুলো সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে।
তেলের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ানবাজারের তেলের পাইকারি ব্যবসায়ী বেঙ্গল স্টোরের মালিক মহিউদ্দিন (৩২) বাংলানিউজকে বলেন, ‘রোজা চলছে, সামনে ঈদ, মানুষের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। আর স্বাভাবিকের তুলনায় যখন চাহিদা বেশি হয়, তখন দাম বাড়বেই। ’
আর এ সুযোগে মিল মালিকরা প্রতি ব্যারেলে দুই-একশ টাকা বাড়িয়ে দেয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তেলের দাম বাড়া প্রসঙ্গে কারওয়ানবাজারের অন্য একজন পাইকারি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন (৪২) বলেন, ‘পাইকারি ব্যবসায়ীরা কখনও দাম বাড়াতে পারে না, মিল মালিকরা দাম বাড়ালেই দাম বাড়ে। ’
মিলে দাম বেড়েছে বলেই তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া ঈদের পর দাম আরও বাড়ার আশঙ্কার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছে অন্য কথা। তাদের অভিযোগ, ‘মিল গেটে দাম বাড়–ক বা না বাড়–ক, বিভিন্ন উপলক্ষের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়ায় পাইকারি ব্যবসায়ী ও ডিলাররা। ’
গত তিন-চার দিনে প্রতি গ্যালন তেলে দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এভাবে চললে ঈদের পর সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করতে হবে বলে জানায় তারা।
অন্যদিকে বাজারে চিনির সংকট যেন কিছুতেই কাটছে না। অথচ সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠান- ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খোলা বাজারে চিনি বিক্রি করছে।
সরকার চিনির দাম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করলেও এ প্রতিষ্ঠান দুটি প্রতি কেজি চিনি বিক্রি করছে ৬০ টাকায়। অর্থাৎ নির্ধারিত দামের চেয়ে ৫ টাকা কমে।
ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবি রাজধানীর ৩০টি পয়েন্টে এবং বিএসএফআইসি রাজধানীর তিনটি পয়েন্টে এ চিনি বিক্রি করা হচ্ছে।
টিসিবি ও বিএসএফআইসি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, খোলা বাজারে প্রতিদিন গড়ে ৬৮ থেকে ৭০ টন চিনি বিক্রি করছে এ দুটি প্রতিষ্ঠান।
তারপরও চিনির সংকটের কথা বলছে ব্যবসায়ীরা। বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি। বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকায়। কোথাও কোথাও ৭২ টাকায়ও চিনি বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান এতো কম দামে এতো চিনি বিক্রির পরও চিনির সংকট না কমার কারণ জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাজারে চিনির কোনো সংকট নেই। ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি মুনাফা করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ’
পদক্ষেপের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের চারটি টিম সার্বক্ষণিক বাজার পরিদর্শন করছে। লাখ লাখ টাকা জরিমানা করছে। ’
সবার সচেতনতা ছাড়া কখনই বাজার স্থিতিশীল করা সম্ভব নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১১