বেনাপোল: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পেট্রাপোল বন্দর পরিদর্শনকে ঘিরে নিরাপত্তাজনিত কারণে বৃহস্পতিবার থেকে একটানা ৪দিন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল বন্ধ থাকবে। ফলে পেট্রাপোল বন্দর থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি এ ৪দিন বন্ধ থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৭ আগস্ট শনিবার বেনাপোলের বিপরীতে অবস্থিত পেট্রাপোল চেকপোস্টে পরিদর্শন করবেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বর ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাদের সফরকে কেন্দ্র করে ভারতীয় চেকপোস্ট এলাকায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। এ কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আগামী রোববার (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত এ পথে দু‘দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক যোগাযোগ মাধ্যম বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর। এ দু’টি বন্দর দিয়ে রেলপথেও বাণিজ্য হয় দু’দেশের মধ্যে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ পণ্য পরীক্ষা ও অন্যান্য প্রশাসনিক কড়াকড়ির কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় ব্যবসায়ীদের। এ কড়াকড়ি কমিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি কীভাবে কমানো যায় সেটাই খতিয়ে দেখতে মমতা ও প্রণবের এ পেট্রাপোল চেকপোস্ট সফর বলে জানা গেছে।
এদিকে, ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চেকপোস্টের নোম্যান্সল্যান্ডে সংবর্ধনা জানাতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঢাকা থেকে আসবেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, টানা ৪দিন বন্ধ শুরু হওয়ার লগ্নে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। তবে পাসপোর্ট যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে এবং বন্ধের ৪দিনও যথারীতি চলবে।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো সুপারিনটেনডেন্ট মঞ্জুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ভারতীয় চেকপোস্টে মন্ত্রী আসার কারণে বৃহস্পতিবার থেকে আগামী রোববার পর্যন্ত এ পথে কোনও আমদানি-রপ্তানি হবে না বলে ভারতীয় কাস্টমস থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে, বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বন্দরের কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ও রোববার জুম্মাতুল বিদার সরকারি ছুটি থাকায় এ ৩ দিন বন্দরের অভ্যন্তরে কোনও লোড-আনলোড হবে না। সোমবার সকাল থেকে আবারও বন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে।
বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আজম জানান, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও এ চেকপোস্ট দিয়ে দু’দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে।
ভারতীয় পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, তাদের চেকপোস্টকে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত বাণিজ্যে আরো গতিশীল করতে আগামী শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পেট্রাপোল বন্দর পরিদর্শনে আসবেন বিধায় তাদের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য কারণে বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত দু’দেশের মধ্যে কোনও আমদানি-রপ্তানি হবে না।
এদিকে বন্দরের একটি সূত্র জানায়, এমনিতেই বেনাপোল বন্দরে পণ্যজট লেগে আছে। এরপর একটানা ৪দিন বন্ধের ফলে ২৯ আগস্ট আমদানি-রপ্তানি ফের চালু হওয়ার পর পণ্যজট প্রকট আকার ধারণ করবে।
উল্লেখ্য, দেশের অর্থনীতিতে বেনাপোল বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। ভারত থেকে আমদানি পণ্যের ৯০ ভাগই আসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এলসি (্ঋণপত্র ) খুলে মাত্র ৭ দিনেই পণ্য আনা যায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে কোলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮১ কিলোমিটার। ফলে সেখান থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় পণ্য চলে আসে চেকপোস্টে। সে কারণে আমদানিকারকরা ভারত থেকে পণ্য আমদানির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেনাপোল বন্দরকে পছন্দ করেন।
বেনাপোল বন্দর ৪দিন বন্ধের প্রভাব বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনে সীমিত আকারে হলেও পড়বে বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ২৫ আগস্ট, ২০১১