ঢাকা: বিশ্ব পুঁজিবাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে দেশের পুঁজিবাজার। গত দুই সপ্তাহ ধরে বিশ্ব পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্ব পুঁজিবাজারে দরপতনের মূল কারণ হচ্ছে তারল্য সংকট, বিশ্ব বাজারে ডলার সংকট।
এদিকে ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির আলামত পাওয়ার পর এশিয়ার শেয়ার বাজারে দরপতন শুরু হয়। পরে দরপতনের ধাক্কা লাগে ইউরোপ ও আমেরিকার শেয়ারবাজারগুলোতে।
বিবিসির এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ায় শেয়ার বাজারে বিনোয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ নেমে আসে। তাদের আশঙ্কা বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়তে শুরু করেছে।
তবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তারল্য সংকটও নেই বলে জানান তিনি। তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটের কারণে এ বাজারে দর পতন অব্যাহত রয়েছে। এ বাজারে বিশেষ করে গুজব, গুঞ্জনের উপর বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন।
তারা বলছেন, বাজার স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও বাজার স্বাভাবিক না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। তারা এ বাজার থেকে অনেকটা আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আর এ সুযোগ ব্যবহার করে কিছু সংখ্যাক জুয়ারি ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে।
তারা বলেন, বাজারকে স্বাভাবিক করতে হরে অর্থমন্ত্রীকে বিরূপ মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে। অর্থমন্ত্রী তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী যে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল তা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সঙ্গে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার গুলো কালক্ষেপণ না করে দ্রুত করতে হবে।
বাজার দুই সপ্তাহ ধরে দরপতন অব্যাহত থাকার কারণে বিনিয়োগকারীরা টানা বিক্ষোভ শুরু করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর সামনে। এ সময়ে তারা অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং ডিএসইর প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন সেøাগান দেয়। এছাড়া অর্থমন্ত্রীকে বাজার সর্ম্পকে মন্তব্য না করার জন্য আহ্বান জানান তারা। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারের বিষয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
রোববার বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন।
এদিকে সাপ্তাহিক গড় লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। লেনদেনকৃত বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। ফলে সপ্তাহ শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার কোটি টাকা। আর মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ১শ’ পয়েন্ট। আর এ নিয়ে পরপর চার সপ্তাহ ডিএসইর মূল্যসূচক কমল।
অন্যদিকে গত বুধবার শেয়ারবাজারে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালার চূড়ান্তের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।
এগুলো হলÑবুক বিল্ডিং পদ্ধতি এবং মিউচুয়াল ফান্ড নীতিমালা।
এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক ওসমান ইমাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারের যে অবস্থায় রয়েছে তা মার্কেট সাইজের চেয়ে অনেক কম।
তিনি বলেন, বিশ্ব পুঁজিবাজারের সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজারে কোনো মিল না থাকলেও তার সঙ্গে তাল মিরিয়েই চলছে দেশের পুঁজিবাজার।
ওসমান ইমাম বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মার্কেট সাইজ অনুযায়ী ন্যূনতম এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হওয়া উচিত। লেনদেনের পরিমাণের চেয়ে কমে গেলে বুঝতে হবে বাজারে আস্থার অভাব রয়েছে।
তিনি জানান, ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ৭০ ভাগ পূরণ করত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। তাই তাদের যদি সক্রিয় না করা যায়, তাহলে বাজার আবার দীর্ঘমেয়াদি মন্দার কবলে পড়তে পারে। এ জন্য এসইসি এবং সরকারকে এখনই ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১১