ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

সোনারগাঁওয়ে মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১১
সোনারগাঁওয়ে মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় মেঘনা গ্রুপের অবৈধভাবে নদী দখল ও নিরীহ কৃষকদের জমি ভরাটের প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উপজেলার আনন্দবাজার এলাকায় মেঘনা নদীর তীরে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বক্তারা অভিযোগ করেন, নদী দখলের বিরুদ্ধে সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুশিয়ারি থাকার পরও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে বিশ্বের সবচেয়ে সুপেয় পানির নদী মেঘনা দখল করে নিচ্ছে মেঘনা গ্রুপ।

এদিকে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা শেষে ফেরার পথে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া লোকজনদের উপর চড়াও এবং হামলা চালায় মেঘনা গ্রুপের স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এসময় তারা সাংবাদিকদেরও দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করেন।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশবাদী সংগঠন নির্ভিক, সোনারগাঁও নাগরিক কমিটি, সাংবাদিক, স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন, ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও মেঘনা গ্রুপের শিকার জমি হারানো কয়েকজন কৃষক অংশ নেন।

সোনারগাঁও নাগরিক কমিটি ও পরিবেশবাদী সংগঠন নির্ভিকের আহবায়ক এটিএম কামালের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জেকে বরাল, যুগ্ম সম্পাদক মো. শাহজাহান মৃধা ও জাকির হোসেন, সোনারগাঁওয়ের পাঠক সংগঠন রীভা গ্রন্থাগারের সভাপতি সাংবাদিক ফজলে রাব্বী সোহেল, সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. বাবুল মোশারফ, স্থানীয় সাংবাদিক মোক্তার হোসেন মোল্লা, আবু বকর সিদ্দিক, রবিউল হুসাইন, শাহাদত হোসেন রতন, খন্দকার মাজেদুল ইসলাম সম্রাট, জহিরুল ইসলাম মৃধা, ভুক্তভোগী কৃষক গাজী গোলেনুর, মোফাজ্জল প্রমুখ।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মো. শাহজাহান মৃধা বলেন, ‘নদী ভরাট ও সরকারি জমি ভরাট করার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশের পরও স্থানীয়  প্রশাসনের চোখের সামনে দেশের অন্যতম প্রধান নদী মেঘনাকে মেঘনা গ্রুপ অবৈধভাবে দখল করে নিচ্ছে। অথচ প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ’

সোনারগাঁও প্রেস ক্লাবের সভাপতি বাবুল মোশারফ বলেন, ‘একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের তথ্য মতে মেঘনা নদী বিশ্বের একমাত্র সুপেয় পানির নদী। মেঘনা গ্রুপ অবৈধভাবে মেঘনা নদী দখল করছে। এটা বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারবে না। ’

তিনি মেঘনা গ্রুপ কর্তৃক মেঘনা নদী দখলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান।

সোনারগাঁও নাগরিক কমিটির আহবায়ক এটিএম কামাল তার বক্তব্যে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অচিরেই দখলের ব্যাপারে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের কমিশনের উচিত হবে দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের কঠোর আইনের আওতায় নিয়ে আসা। ’

মানববন্ধন চলাকালীন সমাবেশে অন্য বক্তারা মেঘনা গ্রুপের অবৈধভাবে নদী ও নিরীহ কৃষকদের জমি ভরাটের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায়। এসময় বক্তারা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে যোগসাজসে নদী দখলদাররা অবৈধভাবে বালু দিয়ে নদী ভরাট করছে বলে অভিযোগ করেন।

মেঘনা গ্রুপ কর্তৃক জোর করে ৮ বিঘা জমি দখল করে নেয় এলাকার গাজী গোলেনুর ও মোফাজ্জল মিয়ার মালিকানাধীন জমি। শনিবার তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায়। এসময় তারা দুইজনই বলেন, ‘মেঘনা গ্রুপ আমাদের কিছু না জানিয়েই বাপ দাদার পাওয়া জমি দখল করে বালু ভরাট করে ফেলেছে। এখন আমরা প্রতিবাদ করলে হুমকি দেয়।

তারা আরো বলেন, ‘আমাদের মত অনেক কৃষক রয়েছে যারা সন্ত্রাসের শিকার হলেও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। কারণ মেঘনা গ্রুপের দালালেরা হুমকি দেয় কৃষকদের। ’

মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সভা শেষে ফেরার পথে আনন্দবাজার এলাকায় মেঘনা গ্রুপের দালাল স্থানীয় এলাকার সাবেক মেম্বার আব্দুল আলী ও তার লোকজন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। তবে এতে কেউ আহত হয়নি। পরে আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে এটিএম কামাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বৃষ্টি উপেক্ষা করেই শত শত মানুষ অংশ নেন। আবার অনেক নিরীহ কৃষক তাদের জমি হারিয়েও ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও প্রভাবশালীদের ভয়ের কারণে কর্মসূচিতে আসেনি। তবে তারা দূর থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সফল কর্মসূচি শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার মধ্যে কিছু ব্যক্তি আমাদের উপর চড়াও হয় এবং হামলা চালায়। তারা আমাদের মেরে ফেলবে ও দেখে নিবে বলেও হুমকি দেয়। ’

বাংলাদেশ সময় : ১৮০৮ ঘণ্টা,আগস্ট ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।