ঢাকা: গুজব, গুঞ্জন ও অস্থিরতা পিছুই ছাড়ছে না দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। গত সপ্তাহে এ বাজার গুজব আর অস্থিরতা ছিলো সবচেয়ে বেশি।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের টানা বিক্ষোভের পর সোমবার বাজার ঘুরে দাঁড়ালেও তা স্থায়ী হয়নি। মঙ্গলবার দর পতনের ধারাবাহিকতায় ফিরে এসেছে পুঁজিবাজার। তবে সপ্তাহ শেষ দিনে বৃহস্পতিবার বাজার আবারও কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।
সেই দিন বুক বিল্ডিং পদ্ধতির সংশোধনী নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। খুব শিগগিরই এ আইন চূড়ান্ত হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে বর্তমানে আচরণ ভালোর দিকে যাচ্ছে না। এছাড়া বিশ্ব পুঁজিবাজারে মন্দা প্রভাবও এ বাজারে এসে লেগেছে। তাছাড়া এসইসি’র বিভিন্ন মন্তব্যকে বাজার পতনের জন্য দায়ী করেন তারা।
বর্তমান বাজারের গভীরতা অনুযায়ী দৈনিক ১২ শ থেকে ১৫শ কোটি টাকা লেনদেন হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ডিসেম্বরের বিপর্যয়ের আগে বাজারের দৈনিক লেনদেন ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিপর্যয় শুরু হলে ডিএসইর লেনদেন ৩০০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছিল। কিন্তু শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় লেনদেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করে। আর এতে বাজার লেনদেন ১৯শ কোটি টাকা পর্যন্ত উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে ফের সূচক এবং লেনদেনে বড় ধরনের পতনের ধারা তৈরি হয়েছে। অনেকটা ধারবাহিকভাবে সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ কমছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সঙ্কট তৈরি হওয়ায় বাজারে নতুন করে আবারো দরপতন হচ্ছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কারসাজির সাথে জড়িত কয়েকজন বিনিয়োগকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতির বিষয়ে এসইসির পক্ষ থেকে জানানোর পর বাজারে দরপতন শুরু হয়েছে। আর এটিকে দরপতনের কারণ হিসাবে তিনি মনে করছেন। মামলা দায়েরের আগেই এ ধরনের বক্তব্য দেয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি ছড়িয়ে পড়েছে বলে তার ধারণা। তবে মামলার বিষয়ে প্রস্ততি শেষ করার পরও মামলা দায়ের না করায় এ নিয়ে নানা ধরনের গুজব তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে অনেকে মনে করছেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে এসইসি মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে কিছুটা পিছু হটে এসেছে। তবে অনেকে মনে করেন, এ নিয়ে যত বেশি কালক্ষেপণ হবে ততই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে এসইসির উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।
জানা গেছে, শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এসইসির পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারের সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে এসইসি। এছাড়া অস্থিরতা কাটাতে গত সোমবার এসইসি মার্চেন্ট ব্যংকারদের সঙ্গে বৈঠক করে এবং পুঁজিবাজারের সমস্যা সমাধানে একটি বিশেষ কমিটি গঠনসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ভূমিকা আরো জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয় এসইসি।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ২৫৪০ কোটি ৪৪ লাখ ৬৯ হাজার ১৩৩ টাকা শেয়ার লেনদেন হয়েছে ডিএসইতে। প্রতিদিন গড়ে ৫০৮ কোটি আট লাখ টাকার লেনদেন হয়। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪৪১৯ কোটি ৫১ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহ থেকে ১৮৭৯ কোটি ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৬১৯ টাকা কম লেনদেন হয়েছে। যা ৪২ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শেয়ারের দাম বাড়ে ৭৩টির, কমে ১৯০টির এবং অপরিবর্তিত থাকে দুটির।
এছাড়া আগস্ট মাসে ৯ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে সাধারন সূচক কমেছে ১৫৪ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট। আর গত সপ্তাহে সাধারন সূচক ৯২ দশমিক ৭০ পয়েন্ট কমে ৬২১২ দশমিক ৮৬ পয়েন্টে এসে দাড়িয়েছে । তবে ৯ কার্যদিবসের মধ্যে বাজারে সূচক পতন অব্যাহত ছিল ৬ কার্যদিবস এবং সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ কার্যদিবস।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে যেসব কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় সেগুলো হলÑ বেক্সিমকো লিমিটেড ১২১ কোটি ১৯ লাখ, গ্রামীণফোন ৯০ কোটি ৮২ লাখ, কেয়া কসমেটিক্স ৮৯ কোটি ৭০ লাখ, মালেক স্পিনিং ৭৪ কোটি ১৬ লাখ, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট ৭২ কোটি তিন লাখ, আরএন স্পিনিং মিল ৬৪ কোটি ৮৭ লাখ, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ৬৪ কোটি ৫৬ লাখ, সিটি ব্যাংক ৬০ কোটি ৯৩ লাখ, এমআই সিমেন্ট ৫৭ কোটি ৭৪ লাখ এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছেড় সেগুলো হলÑ সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ফুয়াং ফুড, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বরকত উল্লাহ ইলেকট্রডাইনামিক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড এবং রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স।
বাংলাদেশ সময়: ১৫.৫১ ঘণ্টা আগস্ট ১৩, ২০১১