ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

এলিফ্যান্ট রোডে ঈদের সব কেনাকাটা এক সাথে

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১১
এলিফ্যান্ট রোডে ঈদের সব কেনাকাটা এক সাথে

ঢাকা: ঈদ উপলক্ষে রমজানের প্রথম থেকেই জমে উঠেছে এলিফ্যান্ট রোডের ঈদবাজার।

ঈদবাঙালির এক অনাবিল আনন্দের নাম।

ঈদকে সামনে রেখে তাই সাধ্যমতো কেনাকাটা পরিবারে বাড়তি আনন্দ যোগ করে।

চাকুরিজীবীদেও বেতন পাওয়া হয়েছে। তাই রমজানের শুরুতেই সবাই কেনাকাটার জন্য মার্কেটে ভীড় জমাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যাপলয়ের পাশে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভীড় চোখে পড়ার মতো। কয়েকদিনের মধ্যে ভাসির্িিট বন্ধ হবে তাই কেনাকাটা করছে অনেকেই গ্রামে যাবার আগে।

বছরের সর্ববৃহৎ উৎসব ঈদে সবাই কেনাকাটা করেন। দরিদ্র থেকে বিত্তবান পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে নানা আঙ্গিকে। ফুটপাত থেকে ঝলমলে বিশাল শপিং মলে সর্বত্র ভিড় করেন সঙ্গতি অনুযায়ী সমাজের নানা শ্রেণীপেশার মানুষ।

এলিফ্যান্ট রোডে সব ধরনের দোকান আছে তাই এখানে ক্রেতার ভীড় বেশি ।

এখানে কাপড়, জুতো, বেল্ট, কসমেটিকস, ব্রান্ডের দোকান, শোরুম, গৃহস্থালি, সিরামিকস , বিয়েবাজার এবং কাপড় বানানোর অনেক টেইলার্স আছে।

ইস্টার্ণ প্লাজা, মাল্টিপ্ল্যান সেন্টচার, সুবাস্তু আকের্ড, ইস্টার্ন মল্লিকা, হাতিরপুল মার্কেট, মেহের প্লাজা ছাড়াও নানা ধরনের দোকান।

যে কোন রকম আপত্তিকর ঘটনা এড়াতে ক্রেতাদের জন্য মার্কেটগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এলিফ্যান্ট রোডে দোকানের পরিমাণ প্রায় দুই হাজারের বেশি।

জুতার দোকানের জন্য সুপরিচিত এলিফ্যান্ট রোড। জুতোর দোকানগুলোতে ছিলো উপচে পড়া ভিড়।

এ এলাকার জুতার দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা গেল, বিক্রেতাদের দম ফেলার ফুসরত নেই।

বিক্রেতারা জানালেন, এবার তরুণেরা বেশি কিনছে নানা রঙের কেডস ও উঁচু হিলের জুতা। চীনের তৈরি কেডসের দাম ৫০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। জুতার দাম ৮০০ থেকে দুই হাজার।

নামী ব্র্যান্ডের দাম আরও বেশি।

‘টপসুজ’-এর মালিক কবির চৌধুরী জানালেন, বিক্রি বেশ ভালো। বিদেশি মাল আনার জন্য বিমানে প্রয়োজনীয় বুকিং পাচ্ছেন না। এ নিয়ে তাঁরা খানিকটা দুশ্চিন্তায় আছেন।

টপসুজে মেয়েদের নানা ধরনের জুতা-স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের পাদুকা মিলবে ১০০ থেকে ৮০০ টাকায়।

এলিফ্যান্ট রোডে নামি-দামি ব্র্যান্ডের জুতার দোকানও রয়েছে। বাটা এবার ঈদ উপলক্ষে আনছে ৪০০ কালেকশন। পাঞ্জাবির সঙ্গে পরার জন্য ইতিমধ্যে তাদের কাছে পৌঁছে গেছে কিছু আইটেম। দাম ১৭৯০-১৯৯০ টাকা।

এসেছে নতুন স্নিকারসও। দাম ১৩৯০-১৯৯০ টাকা। তবে বাটার যাত্রা ঈদে এখানেই সীমিত নয়। ১৫ রোজার মধ্যে সব কালেকশন চলে আসবে বলে জানান সেলসম্যান মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন।

গ্যালারি অ্যাপেক্সে গেলে আপনি পাবেন নতুন কালেকশন ও দেশি পণ্য কেনার মজা। পাঞ্জাবির সঙ্গে পরার জন্য ৬৯০-২৮০০, বাচ্চাদের ৪৯০-১৩৫০ এবং মেয়েদের স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে ৩৯০-১৯৯০ টাকার মধ্যে।

প্যারাগন সুজে ৫০০-১৫০০ টাকার মধ্যে রয়েছে অনেক রকমের চটি ও স্যান্ডেল।

স্যান্ডেলের বাজার শেষ দিকে জমে ওঠে বলে কালেকশন এখনও আসেনি বলে জানান রেখা সুজ থেকে মোহাম্মদ সৌরভ।

কেনাকাটায় ইফতারের সময় হয়ে গেলে চিন্তিত হবেন না। কারণ এলিফ্যান্ট রোডে আছে ছোট-বড় ফাস্টফুডের দোকান।

নামাজের জন্য রয়েছে মসজিদ। কাঁটাবন ও গুলবাগ জামে মসজিদে সেরে ফেলতে পারেন ইবাদত।

তবে পকেটমার থেকে সাবধান থাকবেন। ছিনতাই আর পকেটমারের জন্য বেশ দুর্নাম রয়েছে এলিফ্যান্ট রোডের।

এাল্টিপ্ল্যান সেন্টার মূলত কম্পিউটার সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত হলেও নিচতলা এবং দ্বিতীয়তলায় আছে ছেলেদের পোশাকের অনেক দোকান, শাড়ি ও থ্রি পিসের দোকান। ঈদ উপলক্ষে অনেকেই ল্যাপটপ কিনছে।

এলিফ্যান্ট রোড থেকে নিউমার্কেটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে সামনে পড়বে ক্যাটস আই, ব্যাঙ, মুনসুন রেইন, ইজি, রেয়মন্ডের শোরুম।

সায়েন্স ল্যাবের পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে চলছে পাঞ্জাবি কেনার ধুম।

ঈদ সামনে রেখে জমে উঠেছে পাঞ্জাবির ব্যবসা। এ কথা জানান পাঞ্জাবির জন্য বিখ্যাত শিউলী স্টোরের ইনচার্জ মোহাম্মদ ইসমাইল। একদামের এ দোকানে লং পাঞ্জাবির দাম ১৪৫০-৩৫০০ টাকা। শর্ট পাঞ্জাবির দাম ১২০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত। ঈদ উপলক্ষে গর্জিয়াস কাজ করা পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে ৪৫০০-৫৫০০ টাকায়।

ইবনে জায়েদ পাঞ্জাবির দোকানে ভিড় দেখা গেল ।

মাল্টিপ্লান সেন্টারের পাশের ফ্যাশন কালেকশরেন পাঞ্জাবি কেনার সময় ক্রেতা শরীফ বলেন, ‘রোজার শেষ দিকে কাজের চাপ ও মার্কেটে ভীড় থাকে। শেষ সময়ে শোরুমগুলোতেও পছন্দের কাপড় হয়তো পাওয়া যায় না। তার ওপর আছে যানজট। আগেভাগে পোশাক কেনার কারণ এটাই। ’

ঈদ উপলক্ষে তৈরী জামাকাপড়ের প্রতি মানুষের আকর্ষণ থাকে। সেজন্য বিভিন্ন টেইলার্সে এখন রাত-দিন অবিরাম ব্যস্ততা। বুটিক ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে কোনো অবসর নেই। এলিফ্যান্ট রোড এবং গাউসিয়া মার্কেটের টেইলার্সগুলো তাদের অর্ডার রমজান শুরুর আগেই নিয়ে ফেলেছে।

ছেলে ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে সুলতানা মিরপুর থেকে ঈদ শপিং করতে আসেন ইস্টার্ন প্লাজায়। দুপুর গড়িয়ে পড়ার পর ওই অঞ্চলে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়।

নিউমার্কেট, হকার্স মার্কেট এলিফ্যান্ট রোডে দোকানের ক্রেতার ¯্রােত শেষ পর্যন্ত রাস্তায় নেমে আসে।

ফুটপাথেও জমে ওঠে ঈদের বাজার। ফুটপাথে বিক্রেতাদের দাম হাঁকিয়ে হাঁকিয়ে শার্ট প্যান্ট বিক্রি করতে দেখা গেছে।
 
সকালে ইস্টার্ন প্লাজায় গিয়ে দেখা গেছে অনেক ক্রেতা দরজার সামনে অক্ষো করছে।

দশটার সময় প্রধান ফটক খুলে দেয়ার পর হুড় হুড় করে সকল ক্রেতা মার্কেটের ভেতর প্রবেশ করেন।

খোলামাত্রই দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড় জমে যায়।

এলিফ্যান্ট রোডে শতাধিক জুতোর দোকান আছে। ক্রেতাদের চাহিদা, পছন্দ আর সামর্থ্যরে কথা মাথায় রেখে নিজেদের পণ্যের পসরা সাজিয়েছে জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হাল ফ্যাশনের নান্দনিক ডিজাইনের জুতা উৎপাদন করতো সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো।

শিশুর জন্য আগাম ঈদের জুতা কিনতে চাইলে এলিফ্যান্ট রোডে যেতে পারেন। এখানকার সাধারণ ছোট দোকানগুলোতেও ঈদের নতুন জুতা আছে।

এখানে ১০০ থেকে  ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, দুবাইয়ের ক্লাসিক ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, অ্যাটোমো ১ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা, চায়নার স্টার প্লো ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মেয়েদেও জুতোর ক্ষেত্রে ফিতার মাঝে লম্বালম্বি, গোল, ত্রিকোণ, চার আকৃতিরসহ নানা ধরনের ছোট-বড় নকশা করে গুঁড়ো পাথর বসিয়ে দেয়া হয়েছে। সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পরার জন্য বাদামি, ধূসর, মেরুন, নীল, লাল ইত্যাদি নানারঙের জুতাও আছে। মেয়েদের দেশি জুতার মধ্যে ফ্ল্যাট দুই ফিতার স্যান্ডেলই বেশি।

পাথরের কম বেশি ব্যবহার আছে এই স্যান্ডেলগুলোতে। ব্যবহার করা হয়েছে জরি, পুঁতি আর কুন্দনের নকশা।

দেশীয় জুতা স্যান্ডেলের দাম ৩৫০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মেয়েদের বাহারি জুতার সম্ভার গ্যালারি এপেক্স এবং বাটাও করতে পেরেছে এ বছরও।

বাটার শো-রুমগুলোতে মেয়েদের এমন স্যান্ডেলের দাম ২৮০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। গ্যালারি এপেক্স-এ দাম পড়বে ৩৯০ থেকে ২৮৫০ টাকা।

এলিফ্যান্ট রোড এবং গাউসিয়া মার্কেটের টেইলার্সগুলো তাদের অর্ডার রমজান শুরুর আগেই নিয়ে ফেলেছে। ঈদ যতোই এগিয়ে আসবে কেনাকাটায় ততেই বাড়বে ভিড়।

ইস্টার্ন প্লাজার ব্যবসায়ী মো. আল আমিন জানান, রোজার প্রথম থেকে এখনো পর্যন্ত তেমন বেচা-বিক্রি হয়নি। কারণ হিসেবে তিনি কয়েকদিনের একাধারে বৃষ্টির কথা জানান। তবে শুক্রবার থেকে অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু হয়েছে।

উৎসবে কি শুধু নিজেকে সাজালে চলে?
তাই ঘরকে মনের মতো রাঙিয়ে তুলতে ব্যস্ত এখন অনেকেই।

ঘর সাজানোর দোকানগুলোও এলিফ্যান্ট রোডে বেশি। উৎসবের দিনগুলোতে ঘর সাজানোর জন্য নববিবাহিত কিংবা ফ্যাশনেবল অনেকে কিনছেন জমকালো বিছানার চাদর, কুশন, পিলো কভার, পর্দা, ওয়ালম্যাট, শোপিস

এলিফ্যান্ট রোডের সিরামিক ও টেক্সটাইলের দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের সমাগম বেশ অনেক।

ঈদ উপলক্ষে নব-দম্পতি ইকরাম ও মাহমুদা মুন্নু সিরামিক থেকে কিনেছেন ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি ডিনার সেটতারা জানালেন, বিয়ের পর এটাই আমাদের প্রথম ঈদ। ঈদের ছুটিতে দু` পরিবারের আত্মীয়-স্বজন আমাদের নতুন সংসার দেখতে আসবে। তাদের আপ্যায়নের জন্য নতুন ডিনার সেট ও ঘর সাজানোর কিছু জিনিসপত্রও কিনছে।

এলিফ্যান্ট রোডে সিরাজ সিরামিকসের মালিক সিরাজুদ্দিন বলেন, সিরামিকের রঙিন ডিনার সেটের চাহিদা এখন বেশি।

রমজানের শুরুতে জমজমাচ কেনাকাটার ব্যপাওে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আমির হোসেন খান বাংলানিউজকে জানান, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সহনীয় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে মানুষ নির্ভাবনায় মার্কেটে যেতে পারছে। এছাড়াও তুলনামূলকভাবে পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকায় কেনাকাটায় গতিও বেড়েছে এবং ধনী-দরিদ্র সবারই বেড়েছে ক্রয়ক্ষমতা।

বাংলাদেশ সময় : ১৭১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।