ঢাকা: রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির বয়সসীমা পাঁচ বছরের বদলে তিন বছর করা হলে গাড়ি আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই বয়সসীমা কমানোর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)।
শনিবার দুপুরে বিজয়নগরের বারভিডার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি সরকারি সিদ্ধানের প্রতিবাদ জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। অন্যথায় তারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলবে। নতুন সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশে সর্বোচ্চ তিন বছর পুরনো জাপানি গাড়ি আমদানি করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল হামিদ শরীফ। এ সময় বারভিডার সভাপতি আবদুল মান্নান চৌধুরী (খসরু) ও সহ-সভাপতি এম. হুমায়ূন মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জানিয়েছে, ‘ভারতীয় গাড়ি কোম্পানির তিন-চার জন দেশীয় এজেন্ট সরকারকে ভুল বুঝিয়ে এটা করিয়েছে। তার মধ্যে নিটল, সুজুকি, মারুটি, অ্যামবাসেডর গাড়ির দেশীয় এজেন্টরা জড়িত। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি। এতে জাপানি গাড়ি আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। অপরদিকে, ভারতের নি¤œমানের নতুন গাড়ি বাংলাদেশের বাজার দখল করে নেবে। ’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০২ সালের মতো এবারও ভারতীয় গাড়ি ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই আমদানি নীতিতে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বয়সসীমা কমানো হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ওই স্বার্থান্বেষী মহল তৎপর হয়ে উঠে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার দখলে নিতে। সংশ্লিষ্ট মহলটি সরকারকে ভুল বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। ’
এতে বলা হয়, ‘সরকারের এ সিদ্ধান্তে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি যেমন বন্ধ হবে, এ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লক্ষাধিক লোক বেকার হবে, সরকারের রাজস্ব কমবে, বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাবে, সর্বোপরি জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। ’
আবদুল হামিদ শরীফ বলেন, তিন বছরের গাড়ি জাপানের বাজারে দুর্লভ। দামও পড়বে বেশি। যে গাড়ির দাম বর্তমানে ১৮ লাখ টাকা সেটি কিনতে লাগবে ২৫ লাখ টাকা। যা দেশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের ক্রয়ের বাইরে চলে যাবে। ফলে তারা নিন্মমানের ভারতীয় গাড়ি কিনতে বাধ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে গাড়ির চাহিদা বছরে প্রায় ৩০ হাজার। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের কারণে ৫ শ থেকে ৭ শ গাড়ি দেশে আসবে।
পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সভাপতি জানান, জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি যেখানে বিশ বছর সেবা দিতে পারবে, ভারতীয় গাড়ি সেখানে তিন বছরের বেশি সেবা দিতে পারবে না। ফলে বৈধ পথেই বেশি বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে যাবে।
তিনি বলেন, ৫ বছরের পুরনো গাড়ির পেছনে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয় বছরে ২৪ কোটি টাকা। সেখানে ভারত থেকে সম সংখ্যক গাড়ি আমদানি করতে ব্যয় হবে ৬০ কোটি টাকা।
আবদুল মান্নান চৌধুরী (খসরু) সরকারকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গোপনীয়ভাবে কার স্বার্থে এটা করা হচ্ছে। এটা কি হিরোইন, গাজা নাকি যে গোপনে করতে হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত আমদানি নীতি ২০০৯-২০১২ এর পরিপন্থি বলেও জানান তিনি।
সবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে জাপান এরইমধ্যে অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে বলেছে, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির বিষয়ে সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না যা দু’দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সংবাদ সম্মেলনে যানজট ও পরিবেশ দূষণের অভিযোগ ভিত্তিহীন উল্লেখ্য করে বলা হয়, ভারতীয় গাড়ি জাপানি গাড়ির চেয়ে বেশি পরিবেশ দূষণ করে। আর জাপানের গাড়ির চার চাকা। ভারতের গাড়িও চার চাকা। ভারতীয় গাড়ি আকাশ দিয়ে চলবে না।
সংবাদ সম্মেলনের পরে একই দাবিতে তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে মানববন্ধন করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১১