ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

গভীর সংকটে প্রাথমিক বস্ত্রখাত: বিটিএমএ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১১
গভীর সংকটে প্রাথমিক বস্ত্রখাত: বিটিএমএ

ঢাকা: চলতি বছরের মে-জুন থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার ক্রমাগত মূল্য হ্রাস, গ্যাস ও বিদ্যুৎ ঘাটতি, ইউরোপিয় ইউনিয়নের জিপিএস শর্ত এক স্তর করার কারণে সুতা, ওভেন ও নীট ফেব্রিক্সের আমদানি বৃদ্ধির কারণে প্রাথমিক বস্ত্রখাত (পিটিএস) গভীর সংকটের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।

মঙ্গলবার বিটিএমএর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠেনর পক্ষে এসব কথা জানানো হয়।



সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিটিএমএ সহ-সভাপতি এমএ জহির, প্রকৌশলী আহমেদ আলী, সাবেক সভাপতি এম এ মতিন চৌধুরিসহ বিটিএমএ পরিচালক ও সদস্যবৃন্দ।  

সংগঠনটি বলছে, ইতোমধ্যে তাদের উৎপাদন সক্ষমতা ৫০ শতাংশ কমেছে। আর এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ঈদের পর তাদের পক্ষে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব হবে না। মালিকরা বাধ্য হবে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে।

সংকট মোকাবিলায় আগামী ছয় মাসের জন্য তুলা ও বস্ত্র আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা পত্যাহারের দাবি করেছে প্রাথমিক পোশাক শিল্পের এই ব্যবসায়ীরা। তারা সরকারের নীতিগত ও আর্থিক প্রণোদনারও দাবি জানিয়েছেন।  

সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলামিন বলেন, বিদ্যমান এই সংকট দ্রুত মোকাবেলা করা জরুরি। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আমাদের সংকটের কথা বার বার অবহিত করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ফলে আজ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে এসেছে শ্রমিক কর্মচারিদের বেতন বা বোনাস প্রদানের বিষয়টি প্রশ্ন সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, রমজান মাস চলছে। ঈদুল ফিতর আসন্ন। যেকোনো সময় খাতটিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। কিন্তু আমরা কখনো বেতন বোনাস দিতে বিলম্ব করি নি। তবে এবারের প্রেক্ষিত ভিন্ন। আমার শঙ্কিত। সরকারের সহায়তা না পেলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে ভর্তুকি দিয়ে ব্যবসা চালানো সম্ভব হবে না।

জাহাঙ্গীর আলামিন বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি ও জুন মাসে সুতা আমদানি হয়েছে ২৭৮ মিলিয়ন কেজি। যা বিগত ২০১০ সালের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। একই সময়ে ওভেন ও নীট ফেব্রিক্সের আমদানি বেড়েছে যথাক্রমে ৫১ শতাংশ ও ২৯৩ শতাংশ। অথচ সমিতির স্পিনিং মিলগুলোতে ২ লাখ ৫০ হাজার টনের মতো সুতা মজুদ আছে। যার আর্থিক মূল্য ৯ হাজার কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নীট ও ওভেন পোশাক শিল্পের প্রয়োজনীয় সুতা ও বস্ত্রের অভ্যন্তরীণ চাহিদার যথাক্রমে ৮০ ও ৪০ শতাংশ চাহিদা দেশিয় শিল্পগুলো পূরণ করতে পারে। এবং যে মজুদ আছে তাতে আরও ছয়মাস চলবে। কিন্তু আমদানি বেড়ে যাওয়ায় তারা সংকটের মধ্যে পড়েছে।

সভাপতি বলেন, বিটিএমএ বিগত কয়েক মাস যাবত উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বস্ত্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তহীনতা ও সময় ক্ষেপণের কারণে পিটিএস আজও সংকটে পড়ে আছে। আমাদের ৫০ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। অতি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল পোশাক শিল্প। তাই কোনো কারণে এই শিল্প বন্ধ হলে তার প্রভাব গিয়ে পড়বে পুরো রপ্তানি আয় ও দেশের অর্থনীতির ওপর।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিএসএর পক্ষে নগদ সহায়তা ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা, ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে মালিকদের নেওয়া ঋণকে টার্ম লোন হিসেবে ঘোষণা করা সহ ৪ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছ।

পরে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে সভাপতি বলেন, ‘পাখিকে দুটি পাখা দিয়ে ওঠতে হয়। একটি পাখা কেটে ফেলতে তা আর উড়তে পারবে না। তাই পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পিটিএসকে টিকিয়ে রাখতে হবে। ’

আরেক প্রশ্নের জবাবে এম এ মতিন চৌধুরি বলেন, ‘বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে ভারত যেখানে ব্যবসায়ীদের সহায়তা করতে দ্রুত নীতির পরিবর্তন করে সেখানে আমাদের দেশে বছরের পর বছর চললেও তার কোনো পরিবর্তন করা হয়না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।