ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

লক্ষ্যহীন মুদ্রানীতি ঘোষণা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১১
লক্ষ্যহীন মুদ্রানীতি ঘোষণা

ঢাকা: ভবিষ্যতের সুস্পষ্ট কোনো লক্ষ্য ছাড়াই বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করলো অর্থবছর ১২- এর প্রথমার্ধের জন্য (জুলাই-ডিসেম্বর) নতুন মুদ্রানীতি।

তবে আগামী ৬ মাসের জন্য এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘প্রস্তাবিত মুদ্রানীতিটি বাস্তবানুগ,সংযত ও সংহত।

যখন যে ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তখন সেই পদক্ষেপই নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় বাস্তবমুখী থাকবে। ’

তিনি বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি রোধে ঋণ প্রবৃদ্ধি সংকোচনের মাধ্যমে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে আনতে বিশেষ পদক্ষেপ রয়েছে মুদ্রানীতিতে। আছে টাকার মান ধরে রাখার প্রচেষ্টা। ’

বুধবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভা কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী মেয়াদের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন ড. আতিউর রহমান।

এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আল্লাহ মালিক কাজেমী ও তিন ডেপুটি গভর্নরসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গভর্নর বলেন, ‘অতীতের মতো এবারও কিছু অনুৎপাদনশীল ও অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায় সংযত ঋণের ব্যবহার কমে যাবে এবং উৎপাদনশীল খাত যেমন, ম্যানুফ্যাকচারিং, কৃষি, ব্যবসা ও অন্যান্য সেবা খাতে ঋণের পর্যাপ্ত প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। ’

তিনি বলেন, ‘নতুন এ মুদ্রানীতিতে ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকার খাতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ’

ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনেকেই বাংলাদেশে বেশি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমরা ব্যাংকগুলোকে এ ধারা সমর্থন করার জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছি। বিওআইকেও এ ব্যাপারে সজাগ করা হয়েছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ-উপখাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও গ্যাস উপ-খাতের উন্নয়নে আরও গুরুত্বারোপের প্রয়োজনীয়তা এখনও রয়েছে। অর্থবছর ১২ এর জাতীয় বাজেটে প্রাক্কলিত ৭ শতাংশ প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে বলে মনে হয় না। তবে অবশ্যই বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিসহ অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্ব পরিস্থিতি অনুকুল ও স্থিতিশীল থাকতে হবে। ’

তিনি উল্লেখ করেন, গত অর্থবছরে উৎপাদন এবং বিনিয়োগ কার্যক্রম বৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে চাহিদার চেয়ে কয়েকগুন বেশি চাপ ছিল। অন্যদিকে প্রবাসী আয় নিম্নমুখী ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যায়। এর ফলে টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে তারল্যের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে রেপো ও বিশেষ রেপো সহায়তা দেয়। অবশ্য গত বছরের মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে একবার সিআরআর এবং চারবার রেপো ও রিভার্স রেপো সুদ বৃদ্ধি করা হয়। এতে টাকার অবমূল্যায়ন জনিত মূল্যস্ফীতির প্রভাব কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে।

তিনি বলেন, ‘মূলধন হিসাবে বৈদেশিক আন্তঃপ্রবাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি না পেলে অর্থবছর ১২ এর জন্য নিধারিত ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ কর্মকা-ের জন্য গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও স্থানীয় টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের ওপর চাহিদার চাপ অব্যাহত রাখবে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণ ও ইক্যুইটি আকারে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মূলধনের প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই বেড়ে যাওয়া সুদের হার কমতে সহায়তা করবে। এজন্য গ্রাহকের স্বার্থে ব্যাংকগুলোর সুদের হার, চার্জ ও কমিশন আরও কমাতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তার নজরদারী ব্যবস্থা আরও জোরদার করবে। ’

গভর্নর বলেন, ‘এছাড়া ইসলামী ব্যাংকগুলোর তহবিল আন্তঃব্যাংক বাজার সক্রিয় করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতির মাধ্যমে প্রত্যাশিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রকৃত উৎপাদন এবং পণ্যের যোগান বাড়ানোর চেষ্টা করবে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে এমন অতিরিক্ত চাহিদা সৃষ্টিকারী উপাদানের লাগাম টেনে ধরা হবে। বিশেষ করে অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণের প্রসার নিরুৎসাহিত করা হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং সাড়ে ৭ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতির যে প্রাক্কলন সরকার করেছে, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ করা হয়েছে। বেসরকারি ও উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ জোগানের নীতি পাশাপাশি মুদ্রানীতিতে সরকারের বাজেটীয় প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad